মিলের গেটে কাজ বন্ধের নোটিস দেখছেন কর্মীরা। ছবি: সুব্রত জানা।
পুজোর মুখে কাজ বন্ধ হল হাওড়ার সাঁকরাইলের ডেল্টা জুটমিলে।
শ্রমিক অসন্তোষের জেরে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় লোকসানকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে মঙ্গলবার ওই মিলের গেটে বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। এর ফলে, বিপাকে পড়লেন স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে সেখানকার প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক। কোনও রকম অসন্তোষের কথা উড়িয়ে তাঁদের অভিযোগ, চক্রান্ত করেই চটকল বন্ধ করেছেন কর্তৃপক্ষ। এই নিয়ে চলতি বছরে দু’বার কাজ বন্ধ হল ওই জুটমিলে।
এ দিন সকালে মিলের গেটে ওই বিজ্ঞপ্তি দেখে হতাশ হয়ে পড়েন শ্রমিকেরা। আজ, বুধবার শ্রমিকদের বেতন হওয়ার কথা। কাজ বন্ধ হওয়ায় তা মিলবে কি না, তা নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে জল্পনা শুরু হয়ে যায়। গোলমালের আশঙ্কায় প্রচুর পুলিশ ও র্যাফ মোতায়েন করা হয়। মিল কর্তৃপক্ষের দাবি, গত ৫ মে এক ত্রিপাক্ষিক চুক্তিতে বলা হয়েছিল এক টন চটের বস্তা উৎপাদনে ৩৮ জন শ্রমিক কাজ করবেন। কিন্তু কাজ শুরুর কিছু দিন পর থেকেই অন্তত ৪৬ জন শ্রমিক ওই কাজে হাত লাগাচ্ছিলেন। ফলে, লোকসান হচ্ছিল। কর্তৃপক্ষের তরফে জেনারেল ম্যানেজার (পার্সোনেল-অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) শৈলেশকুমার সিংহ বলেন, “শ্রমিকেরা যে ভাবে কাজ করছিলেন, তাতে লোকসান বাড়ছিল। উৎপাদনেও ঘাটতি হচ্ছিল। শ্রমিক সংগঠনগুলিকে বারবার জানানো সত্ত্বেও তারা কোনও সহযোগিতা করেনি। সে কারণেই আপাতত কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মিল খুললে শ্রমিকদের বেতন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
এ নিয়ে হাওড়ার সহকারী শ্রম কমিশনার সুমিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, “মিলটি বন্ধ হয়েছে বলে শুনেছি। তবে, কোনও পক্ষই এখনও লিখিত ভাবে আমাকে কিছু জানাননি। তবুু আমরা বিষয়টি দেখছি।” আজ, বুধবার দুুপুরে শ্রম দফতরে মিল কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুমিতাদেবী।
দীর্ঘদিন ধরেই ওই জুটমিলে টালমাটাল চলছে। গত দশ বছরে বেশ কয়েক বার বন্ধ হয়েছে মিলটি। শ্রমিক অসন্তোষকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারিও মিলটিতে কাজ বন্ধের বিজ্ঞপ্তি জারি করেন কর্তৃপক্ষ। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে কাজ চালু হয় গত ৬ মে। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর মিলের ‘প্রভিডেন্ড ফান্ড ট্রাস্টি বোর্ড’ এবং ‘ওয়ার্কার্স কমিটি’-র নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ওই দুই কমিটিতে কোনও নির্বাচন হয় না। সেই নির্বাচন এড়ানোর জন্যই মিল কর্তৃপক্ষ চক্রান্ত করে কাজ বন্ধ করলেন বলে অভিযোগ তুলেছেন শ্রমিকদের একাংশ।
মিলের সিটু প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক স্বপন কাঁড়ার বলেন, “চলতি বছরের গোড়ায় ৬ ফেব্রুয়ারি দুই কমিটিতে ভোট হওয়ার কথা ছিল। ঠিক তার আগে মিলে কাজ বন্ধ করেন কর্তৃপক্ষ। এ বারও তাই হল। আসলে ওই দুই কমিটিতে মালিকপক্ষই খবরদারি করে। নির্বাচন হলে তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে বুঝতে পেরেই মিলে কাজ বন্ধ করা হল।” একই সুরে আইএনটিইউসি-র জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মণ্ডলও দাবি করেন, “কোনও শ্রমিক অসন্তোষ ছিল না। চুক্তি মেনেই কাজ হচ্চিল। উৎপাদনও যথাযথ হচ্ছিল। চক্রান্ত করেই মিলে কাজ বন্ধ করা হল।” দুই সংগঠনই এর পিছনে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি জড়িত বলে অভিযোগ তুলেছে। তাদের দাবি, নির্বাচন হলে আইএনটিটিইউসি সুবিধা করতে পারবে না। তাই ওরা মালিকদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।
অভিযোগ উড়িয়ে কারখানায় আইএনটিটিইউসি প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক আহমেদ শেখ দাবি করেন, “কাজ বন্ধের ওই সিদ্ধান্তের সঙ্গে কোনও ভাবেই আমরা জড়িত নই। সিটুই জড়িত। শ্রমিকদের তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করতেই কারখানা কর্তৃপক্ষ এ কাজ করেছেন।” পক্ষান্তরে, জিএম (পার্সোনেল-অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) শৈলেশকুমার সিংহ দাবি করেছেন, “কারখানা বন্ধ হওয়া এবং নির্বাচন পুরোপুরি আলাদা ব্যাপার। মিল খুললেই নির্বাচন হবে।”
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে পুজোর মুখে বিপাকে পড়লেন শ্রমিকেরা। সেলাই বিভাগের শ্রমিক শ্রীকান্ত কর বলেন, “এখানে ২৫ বছর ধরে কাজ করছি। কয়েক হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। তা সত্ত্বেও কাজ করছিলাম। কিন্তু অকারণে মিল বন্ধ করা হল।” ওই বিভাগেরই শুভেন্দু নস্কর নামে আর এক শ্রমিক বলেন, “প্রতি মাসের ১০ তারিখে আমরা বেতন পাই। এ বার পুজোর মুখে সমস্যায় পড়লাম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy