Advertisement
E-Paper

কেন্দ্র-বিভ্রাট, ভাঙচুরেই শুরু পরীক্ষা

শুরুতেই বিপত্তি! ভুল পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে হয়রানি, নকলে বাধা পেয়ে ভাঙচুর, দেরিতে উত্তরপত্র পাওয়ার মতো কিছু ঘটনা দিয়ে এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সূচনা হল বুধবার। এ দিন ছিল প্রথম ভাষার পরীক্ষা। রাজ্যের বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীরই প্রথম ভাষা বাংলা। প্রশ্ন নিয়ে কোথাও কোনও অভিযোগ ওঠেনি বলে জানিয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৪ ০৪:১৩
কোলে হেলমেট। চোখ বইয়ে। হাজরায় ঝুঁকির পরীক্ষা সফর। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

কোলে হেলমেট। চোখ বইয়ে। হাজরায় ঝুঁকির পরীক্ষা সফর। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

শুরুতেই বিপত্তি! ভুল পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে হয়রানি, নকলে বাধা পেয়ে ভাঙচুর, দেরিতে উত্তরপত্র পাওয়ার মতো কিছু ঘটনা দিয়ে এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সূচনা হল বুধবার। এ দিন ছিল প্রথম ভাষার পরীক্ষা। রাজ্যের বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীরই প্রথম ভাষা বাংলা। প্রশ্ন নিয়ে কোথাও কোনও অভিযোগ ওঠেনি বলে জানিয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ।

কিন্তু নানান বিভ্রাটে হয়রান হতে হয় পরীক্ষার্থীদের। যেমন জলপাইগুড়ি ও বর্ধমানের দু’টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা নির্দিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে জানতে পারেন, সেখানে তাঁদের আসন পড়েইনি। পরে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে পৌঁছে পরীক্ষা দেন ওই পড়ুয়ারা। এ ব্যাপারে তাঁদের কিছু করার নেই বলে জানান সংসদের কর্তারা। সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাস বলেন, “পরীক্ষার্থীরা যে-স্কুলের পড়ুয়া, তারা ভুল তথ্য দিয়েছে বলেই হয়তো এটা ঘটেছে। এমন ঘটনায় সংসদের দায় নেই।”

এ দিন জলপাইগুড়ির রবীন্দ্রনাথ হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন আনন্দ মডেল স্কুলে। কিন্তু সেখানে পৌঁছে তাঁরা জানতে পারেন, ওই স্কুলে তাঁদের আসন পড়েনি। তাঁদের আসন অরবিন্দনগর হাইস্কুলে। সেটি জলপাইগুড়ি শহরের অন্য প্রান্তে। তড়িঘড়ি অরবিন্দনগর হাইস্কুলের উদ্দেশে রওনা হন তাঁরা। অনেকেই ১০-১৫ মিনিট দেরিতে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছন। রবীন্দ্রনাথ হাইস্কুল ভুল তথ্য দেওয়ায় পরীক্ষা কেন্দ্র নিয়ে এই বিভ্রাট বলে পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের অভিযোগ।

ছেলেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন অমূল্যচন্দ্র মণ্ডল। জোরে মোটরবাইক চালিয়ে সময়মতো ছেলেকে অরবিন্দনগর হাইস্কুলে পৌঁছে দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাড়িতে ধাক্কা মেরে নিজেও জখম হন। সংসদের উত্তরবঙ্গ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপসচিব উৎপল বিশ্বাস বলেন, “প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, স্কুল-কর্তৃপক্ষের ভুলেই এই ঘটনা ঘটেছে। কেন এমন ভুল হল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান শিক্ষিকাকে তা জানাতে বলা হয়েছে।” আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রের খবর, পরীক্ষা কেন্দ্র কোথায় হবে, সেই সংক্রান্ত বৈঠকগুলিতে ওই স্কুল-কর্তৃপক্ষ গরহাজির ছিলেন।

রানিনগর রবীন্দ্রনাথ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মৌসুমী দত্ত জানান, তিনি অসুস্থ। তাই পরীক্ষা কেন্দ্র ঠিক করার বৈঠকে যেতে পারেননি। তাঁর কথায়, “পরীক্ষা কেন্দ্র বিভ্রাট নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রয়োজনে সংসদের সঙ্গেও বলব।”

আবার বর্ধমানের জগদাবাদ শশিভূষণ কো-এড হাইস্কুলের কয়েক জন পড়ুয়া পরীক্ষা দিতে হাজির হন বর্ধমানের মহারানি অধিরানি বালিকা বিদ্যালয়ে। সংসদের বর্ধমান আঞ্চলিক অফিসের কর্তারা জানান, প্রথমে অধিরানি বালিকা বিদ্যালয়ে আসন পড়লেও গত ১০ মার্চ জগদাবাদ স্কুলে নির্দেশিকা পাঠিয়ে কেন্দ্র বদলের কথা জানানো হয়। বলা হয়, স্কুলের ১০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রদের আসন পড়েছে সিএমএস বিসি রোড স্কুলে। আর বর্ধমান পুর বালিকা বিদ্যালয়ে পড়েছে মেয়েদের আসন। তবু কিছু পরীক্ষার্থী কী ভাবে অধিরানি স্কুলে গেলেন, তা যাচাই করা হবে বলে জানান জেলা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা উপদেষ্টা কমিটির সদস্য স্বপন ঘোষাল। তিনি বলেন, “স্কুলের তরফে পরীক্ষার্থীদের কোনও ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। তবে প্রথমে ভুল করলেও পরে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে পৌঁছে সকলেই নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পেরেছেন।” গোলমাল কেন, জগদাবাদ স্কুল তার কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌমেন মুখোপাধ্যায় শুধু বলেন, “কিছু পরীক্ষার্থী ভুল করে মহারানি অধিরানি স্কুলে চলে গিয়েছিল। ভুল বুঝে তারা সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে।”

এ দিন টোকাটুকিতে বাধা পেয়ে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর ফার্ম কলোনি হাইস্কুল সূত্রের খবর, পরীক্ষা শেষ হতেই রামগঞ্জ হাইস্কুলের এক দল পরীক্ষার্থী তাণ্ডব শুরু করেন। দরজা-জানলা ভাঙচুর, শিক্ষকদের দিকে ঢিল ছোড়া হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ফার্ম কলোনি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সোমনাথ বসু বলেন, “নকল করতে না-পেরে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে কিছু পরীক্ষার্থী।”

শিক্ষকেরা জানান, তাণ্ডব দেখে অন্য পরীক্ষার্থীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন। রামগঞ্জ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অপর্ণা শূর বলেন, “আমি যখন গেলাম, তখন ছাত্রেরা বলেছিল, খুব ভাল প্রশ্ন এসেছে। তারা ভাল করে পরীক্ষা দিচ্ছে। পরে কী ঘটেছে, জানি না।” মাধ্যমিকেও ইসলামপুরের শ্রীকৃষ্ণপুর স্কুলে রামগঞ্জ হাইস্কুলের ছাত্রেরা গণ্ডগোল করে বলে অভিযোগ। সংসদ-প্রধান জানান, অভিযুক্ত ছাত্রদের অভিভাবকদের ডাকা হবে। তারা যে-স্কুলের ছাত্র, সেখানকার কর্তৃপক্ষের কাছে কৈফিয়ত তলব করা হবে। ফের এমন হলে ওই ছাত্রদের আর পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে না।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর আর্য বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলে এ দিন খাতা দিতে ১৫ মিনিট দেরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। পরীক্ষার্থীরা জানান, দেরিতে খাতা পাওয়ায় অনেকেই সব প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারেননি। ওই স্কুল এবং মথুরাপুর-১ নম্বর ব্লকের বিডিও অবশ্য জানান, তাঁরা দেরিতে পরীক্ষা শুরুর কথা জানেন না।

higher secondary centre language
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy