Advertisement
E-Paper

কোন যোগ্যতায় সংসদ সভাপতি রুদ্রনীল, উঠছে প্রশ্ন

শিক্ষা-প্রশাসনের দায়িত্ব সামলাতে কোন যোগ্যতাটা সবচেয়ে জরুরি? রাজ্যে বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সংসদের নতুন সভাপতি নিয়োগের সূত্র ধরেই প্রশ্নটা ফের মাথা চাড়া দিচ্ছে। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সমান্তরাল বৃত্তিমূলক শিক্ষাক্রমের বিষয়টি পরিচালনা করে এই সংসদ। সংসদের সভাপতি হিসেবে অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষকে নিয়োগ করা হয়েছে বলে রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৪ ০৩:৫০

শিক্ষা-প্রশাসনের দায়িত্ব সামলাতে কোন যোগ্যতাটা সবচেয়ে জরুরি? রাজ্যে বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সংসদের নতুন সভাপতি নিয়োগের সূত্র ধরেই প্রশ্নটা ফের মাথা চাড়া দিচ্ছে।

মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সমান্তরাল বৃত্তিমূলক শিক্ষাক্রমের বিষয়টি পরিচালনা করে এই সংসদ। সংসদের সভাপতি হিসেবে অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষকে নিয়োগ করা হয়েছে বলে রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের কথায়, “বৃত্তিমূলক শিক্ষায় কিছু নতুন ধরনের শিক্ষাক্রম চালু করার তাগিদ থেকেই রুদ্রনীলবাবুকে নিয়ে আসা হয়েছে। কিছু মৌলিক ভাবনা-চিন্তারও দরকার রয়েছে।”

সাধারণ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনায় ইচ্ছুক নন যে সব পড়ুয়া, তাঁদের জন্য চাকরির দরজা খুলে দিতে এই বৃত্তিমূলক শিক্ষার পরীক্ষাই প্রধান চৌকাঠ। অষ্টম শ্রেণি পাশ কিংবা মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য দু’টি ভিন্ন পাঠ্যক্রম ও পরীক্ষার দায়িত্বভার বহন করে সংসদ। এই পরীক্ষায় উতরে পড়ুয়ারা কেউ কেউ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিপ্লোমা করতে ঢোকেন।

রুদ্রনীল অধুনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। বাম জমানায় সিপিএমের পার্টি সদস্য রুদ্রকে কখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে সওয়াল করতে দেখা না-গেলেও পরিবর্তনের বেশ কিছু দিন পরে তাঁর পরিবর্তন ঘটেছে। বাংলা ছবি এবং টিভির পরিচিত মুখ রুদ্রকে সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটের আগে থেকেই নিয়মিত শাসক দল বা মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে। ইডেনে শাহরুখ খানদের সংবর্ধনার অনুষ্ঠানেও তিনি ছিলেন সঞ্চালকের ভূমিকায়।

রুদ্রনীল জানিয়েছেন, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই তাঁকে সপ্তাহ দুয়েক আগে এমন দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেছেন। যদিও আনুষ্ঠানিক কাগজপত্র এখনও হাতে পাননি। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী সব সময়েই তরুণদের বেশি করে বিভিন্ন কাজে যুক্ত চান। আমায় বললেন, তুমি তো কাজ করতে চাও, এই জায়গাটায় অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে।”

কিন্তু বৃত্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য রুদ্রনীলের কী যোগ্যতা রয়েছে?

হাওড়ার একটি কলেজ থেকে বিএসসি-পাশ রুদ্র এর জবাবে ফ্রন্টফুটে খেলছেন। তাঁর কথায়, “আরে বাবা, নরেন্দ্র মোদীও তো আগে দেশ সামলাননি!” রুদ্রর দাবি, টিভি চ্যানেলে কাজের সূত্রে অ্যানিমেশন, স্পেশাল এফেক্টস-সংক্রান্ত কিছু তালিম তাঁর রয়েছে। টালিগঞ্জে নিজস্ব প্রোডাকশন হাউসের কাজও সামলাচ্ছেন। তিনি বলছেন, “আমি রাজ্যে শিল্পের জন্য দক্ষ শ্রম তৈরির কাজ করব। টালিগঞ্জের কলাকুশলীদের চাহিদাও ক্রমশ বাড়ছে। বাইরে থেকে অনেক এখানে কাজ করতে আসছেন। অনেক কিছু উন্নত করার সুযোগ রয়েছে।” তিনি আত্মবিশ্বাসী, অভিজ্ঞ লোকেদের দিয়ে কাজ করাতে পারাটাই বড় কথা।

কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও কিছু দিন আগেই দেশ জুড়ে বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু রাজ্য প্রশাসনের একাংশের মত, গণতন্ত্রে মন্ত্রীদের ভূমিকা অনেকটা প্রশাসন ও বৃহত্তর সমাজের মধ্যে যোগসূত্রের মতো। কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদের সভাপতি হওয়াটা প্রশাসনের অঙ্গ। এ ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ দক্ষতা থাকলে ভাল হতো। রুদ্রনীলের পূর্বসূরি সুস্মিত হালদার ছিলেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। এ মাসের শুরুতেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি অবশ্য বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে শিক্ষাবিদদের কেউ কেউ রুদ্রনীলের নিয়োগে বিস্মিত। পবিত্র সরকার যেমন বলছিলেন, “মধ্য শিক্ষা পর্যদ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের মতোই বৃত্তিমূলক শিক্ষা, প্রশিক্ষণের সংসদটিতেও শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত কেউ থাকাটাই দস্তুর। যা ঘটছে, তাতে সত্যিই অবাক হয়ে যাচ্ছি!”

রাজ্য প্রশাসনের একাংশ আবার মনে করছেন, রুদ্রনীল আসলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’র পুরস্কার পেয়েছেন। সংসদ-সভাপতির পদে মাসে ৭০ হাজার টাকা সাম্মানিক, সরকারি গাড়ি, ফোন ইত্যাদির সুবিধা তিনি পাবেন। এর আগে রাজ্যের আইন-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতিতে সরকার-মনোনীত সদস্য হিসেবে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ঠাঁই পেয়েছিলেন। একটি সরকারি আর্ট কলেজে একই ভূমিকায় রাখা হয়েছিল নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষকে। তবে বৃত্তিশিক্ষা-সংক্রান্ত সংসদের বিধি অনুযায়ী, সভাপতি পদটির জন্য নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা আবশ্যক নয়। এক প্রাক্তন কর্তা বলছিলেন, “সংসদের দায়িত্ব প্রধানত সচিবই কার্যকর করেন। তাই সভাপতির পক্ষে সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্তাদের সাহায্য নিয়েও কাজ করা সম্ভব।”

রুদ্র যাঁদের জন্য দক্ষ শ্রম তৈরিতে জোর দিচ্ছেন, সেই শিল্পমহলের অনেকেও আপাতত তাঁকে ‘বেনিফিট অফ ডাউট’ দিচ্ছেন। বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স-এর কর্তা কল্লোল দত্তের বক্তব্য, “রুদ্রনীলবাবুর বিষয়ে খুব বেশি জানি না। শিল্পজগত বিষয়ে তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থাকলে হয়তো ভাল হতো, কিন্তু ওঁর প্রশাসনিক দক্ষতা থাকলেও তা নিশ্চয়ই কাজে আসবে।”

রুদ্রকে এই পদে নিয়ে আসাটা এক ধরনের ছক-ভাঙা ভাবনা হিসেবে দেখছেন মানবসম্পদবিদ বীর্যেন্দু গুপ্ত। কিছুটা একমত আইআইএম কলকাতা-র অর্থনীতির শিক্ষক অনুপ সিংহও। অনুপবাবুর কথায়, “বিস্তর ডিগ্রি লাভ করেও সবাই বুদ্ধিমান হন না। রুদ্রনীলবাবুর উদ্যম ও কাণ্ডজ্ঞান থাকলে তিনি সফল হতেই পারেন!”

rudranil ghosh council president
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy