Advertisement
E-Paper

ক্রেডিট কার্ড জাল করে সোনা হাতিয়ে জালে ৫

ব্যাঙ্ক থেকে ক্রেডিট কার্ড সবে পাঠানো হয়েছে। তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রাহকের নাম জানিয়ে ব্যাঙ্কে ফোন করে বলা হচ্ছে, ‘কার্ডের জন্য আবেদনের সময় যে-ফোন নম্বর দিয়েছিলাম, সেটা বদলাতে চাই।’ ব্যাঙ্ক তা বদলে দিচ্ছে। কিন্তু তার পরেই দেখা যাচ্ছে, গ্রাহক সোনার মুদ্রা কিনছেন অনলাইনে। একটা-আধটা নয়, নাগাড়ে এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে। আর এ-সবই হচ্ছে নির্দিষ্ট একটি এলাকায়! কেন?

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৯:৫৪

ব্যাঙ্ক থেকে ক্রেডিট কার্ড সবে পাঠানো হয়েছে। তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রাহকের নাম জানিয়ে ব্যাঙ্কে ফোন করে বলা হচ্ছে, ‘কার্ডের জন্য আবেদনের সময় যে-ফোন নম্বর দিয়েছিলাম, সেটা বদলাতে চাই।’ ব্যাঙ্ক তা বদলে দিচ্ছে। কিন্তু তার পরেই দেখা যাচ্ছে, গ্রাহক সোনার মুদ্রা কিনছেন অনলাইনে। একটা-আধটা নয়, নাগাড়ে এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে। আর এ-সবই হচ্ছে নির্দিষ্ট একটি এলাকায়! কেন?

সেই রহস্য ভেদ করতেই লালবাজারের সাহায্য চেয়েছিলেন ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ। তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, প্রকৃত গ্রাহকেরা এটা করছেন না। তাঁদের ক্রেডিট কার্ড জাল করে প্রতারণায় মেতেছে একটি চক্র। গ্রেফতার করা হয়েছে সেই চক্রের চাঁই-সহ পাঁচ জনকে। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা-প্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ জানান, ধৃতদের নাম পিন্টু চাকী, নিলয় কুণ্ডু, সুশান্ত দাস, কিরণকুমার ঘোষ ও সোবেন দোরজি। সকলেই ইছাপুর-শ্যামনগর এলাকার বাসিন্দা। ধৃতদের বুধবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। তাদের ৩ মার্চ পর্যন্ত পুলিশি হাজতে পাঠানো হয়েছে।

কী ভাবে জালিয়াতি চলছিল?

পুলিশি সূত্রের খবর, পুরো জালিয়াতির ঘটনাটাই ঘটত ব্যাঙ্ক থেকে ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকের হাতে পৌঁছনোর মধ্যবর্তী সময়ে। সাধারণ ভাবে সব ব্যাঙ্কই কুরিয়ার সংস্থার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড পাঠায়। সোবেন এমনই একটি কুরিয়ার সংস্থার কর্মী। সে ব্যাঙ্কের পাঠানো খাম খুলে ক্রেডিট কার্ড বার করে তার প্রতিলিপি তৈরি করে ফেলত। তার পর কার্ডটি ফের খামে পুরে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হতো। তদন্তকারীদের দাবি, কার্ডের প্রতিলিপি তৈরি করায় ক্রেডিট কার্ডের নম্বর, মেয়াদ ফুরোনোর তারিখ, সিভিভি নম্বর (কার্ডের পিছনে থাকা তিন সংখ্যার নম্বর) জালিয়াতদের কাছে রয়ে যেত।

পুলিশ জানায়, গ্রাহককে ক্রেডিট কার্ড পৌঁছে দেওয়ার সময় তাঁর প্যান কার্ড বা ভোটার কার্ড এবং ফোন নম্বর চাওয়া হতো। এ ভাবেই গ্রাহক ক্রেডিট কার্ডে যে-নম্বর দিয়েছেন, সেটা এবং তাঁর জন্ম-তারিখ হাতিয়ে নিত সোবেন। সেটাও পৌঁছে যেত জালিয়াতদের কাছে। তার পরেই ফোনে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে গ্রাহকের গোপন তথ্য জেনে নেওয়া হতো।

• কার্ড পেয়েই ব্যাঙ্কে ফোন করে জানান।

কী সেই গোপন তথ্য? পুলিশি সূত্রের খবর, ক্রেডিট কার্ডে গ্রাহকের মায়ের নাম দেওয়া থাকে। ব্যাঙ্কে ফোন করে কোনও তথ্য বদলাতে হলে সেই নাম জানা প্রয়োজন। জালিয়াতেরা ব্যাঙ্ককর্মীর পরিচয় দিয়ে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে ফোন করে তাঁর মায়ের নাম জানতে চাইতেন। বলা হতো, কার্ডের ঠিকঠাক পৌঁছেছে কি না, তা জানতেই এই প্রশ্ন করা হচ্ছে। “মায়ের নাম জানার পরেই জালিয়াতির প্রথম চালটা দিত ধৃতেরা,” বললেন এক গোয়েন্দাকর্তা। তিনি জানান, গ্রাহক ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটা করলে তাঁর মোবাইল নম্বরে সতর্কবার্তা যায়। তাই জালিয়াতেরা গ্রাহকের ওই সব গোপন তথ্য ব্যবহার করে ব্যাঙ্কের কাছে জমা দেওয়া গ্রাহকের মোবাইল নম্বর বদলে দিত। অনলাইনে কেনাকাটার জন্য একটি সাময়িক পাসওয়ার্ডও ফোনে পাঠায় ব্যাঙ্ক। সেটিও গ্রাহকের বদলে পৌঁছে যেত জালিয়াতদের হাতে।

এ বার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ব্যবহার করে একটি ওয়েবসাইট থেকে সোনার মুদ্রা কেনা হচ্ছিল। ফোন নম্বর বদলে যাওয়ায় গ্রাহকেরা সেই কেনাকাটার কথা জানতেও পারছিলেন না। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট এলাকায় থেকে পরপর সোনার মুদ্রা কেনা হচ্ছে দেখে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের সন্দেহ হয়। তারা দেখে, সব কার্ডেরই ফোন নম্বর বদল করা হয়েছে। পল্লববাবু বলেন, “ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্তা দারিয়ুস তম্বোলি আমাদের খবর দেন। আমরা সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটকে বলে জালিয়াতদের কাছে মুদ্রা সরবরাহ বন্ধ করি। জালিয়াতেরা ছ’টি কার্ড ব্যবহার করে তিন লক্ষ ৮৮ হাজার টাকার সোনার মুদ্রা কিনেছিল।”

তারা ধরা পড়ল কী ভাবে? এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি গোয়েন্দা-প্রধান। তবে পুলিশেরই একটি সূত্রের খবর, শ্যামনগর এলাকায় সোর্স নেটওয়ার্ক কাজে লাগানো হয়েছিল। কোন কম্পিউটার থেকে সোনার মুদ্রা কেনাকাটা করা হচ্ছিল, তার ‘ইন্টারনেট প্রোটোকল অ্যাড্রেস’ (আইপি)-ও বার করেন তদন্তকারীরা। তার পরে মঙ্গলবার ইছাপুর-শ্যামনগরে হানা দিয়ে গ্রেফতার করা হয় পাঁচ জনকে। পুলিশ জানায়, অনেক সময় গ্রাহকের হাতে কার্ড পৌঁছে দেওয়ার আগে একটি সোনার দোকানে তা ব্যবহার করে নগদ টাকাও তুলে নেওয়া হতো। পল্লববাবু জানান, ধৃত নিলয় কুণ্ডুর সোনার দোকান রয়েছে। সেখানে কার্ডটি ব্যবহার করে জিনিস কেনার স্লিপ তৈরি করা হতো। জিনিসপত্র না-কিনলেও ওই স্লিপের বিনিময়ে জালিয়াতদের টাকা দিত নিলয়।

credit card
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy