ভক্তবালা বিএড কলেজে ভর্তিতে অনিয়মের অভিযোগের তদন্তে বৃহস্পতিবার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে যান রাজ্য সরকার নিযুক্ত তদন্তকারী আধিকারিক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। ওই কলেজে ভর্তি হওয়া ১৮ জন পড়ুয়ার সঙ্গে এ দিন কথা বলেন তিনি। তার আগে জমা নেওয়া হয় ছাত্রছাত্রীদের মোবাইল ফোন এবং ব্যাগ। দুপুর ১টা ৫৫ থেকে বিকেল সওয়া ৩টে পর্যন্ত উপাচার্যের ঘরে অভিজিৎবাবুর সঙ্গে কথা বলেন ছাত্রছাত্রীরা। তাঁদের চারটি দলে ভাগ করা হয়েছিল। তেমনই একটি দলের সঙ্গে তদন্তকারী আধিকারিকের কথোপকথন শুনল আনন্দবাজার।
ঘরে ঢুকতেই অভিজিৎবাবু সবাইকে বসতে বলে একটা সাদা কাগজ দেন। সেখানে সবাইকে নাম, ফোন নম্বর, ঠিকানা লিখতে হয়। সই-ও করতে হয়।
অভিজিৎ (প্রথম ছাত্রীকে): তুমি কী করে এবং কবে ভর্তি হলে?
প্রথম ছাত্রী: অক্টোবরে ভর্তি হয়েছি। পাড়ার এক জনের মাধ্যমে তন্ময় আচার্যের (কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক এই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা) সঙ্গে আলাপ হয়। ও-ই আমাকে ভক্তবালা বি এড কলেজে দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে ভর্তি করিয়ে দেয়।
অভিজিৎ (দ্বিতীয় ছাত্রীকে): কী করে ভর্তি হলে?
দ্বিতীয় ছাত্রী: তন্ময়ের মাধ্যমে কলেজে যাই। ওর উপস্থিতিতে অমর বিশ্বাসকে (ভক্তবালা কলেজের পরিচালন সমিতির সম্পাদক তথা মালিক) টাকা দিই।
অভিজিৎ (তৃতীয় ছাত্রীকে): তুমি কী করে ভর্তি হলে?
তৃতীয় ছাত্রী: তন্ময়ের উপস্থিতিতেই অমর বিশ্বাসকে টাকা দিয়ে ওই কলেজে ভর্তি হয়েছি।
অভিজিৎ: তা হলে ব্যাপারটা বুঝতে পারছি। এখানে ‘ভায়া’টা (মাধ্যম) গুরুত্বপূর্ণ নয়। তোমরা সকলেই টাকা দিয়েছিলে অমর বিশ্বাসকে। টাকা তো তোমরা তন্ময়ের হাতে দাওনি। অতএব তন্ময়ের নাম মিডিয়া যে ভাবে প্রথমে দেখাচ্ছিল, সেটা ঠিক হচ্ছিল না।
ছাত্রছাত্রীরা: আমরা তন্ময় ও অমর বিশ্বাস দু’জনের নামই মিডিয়াকে বলেছিলাম।
অভিজিৎ: আমি একটা পরামর্শ দেব?
ছাত্রছাত্রীরা: বলুন।
অভিজিৎ: তোমরা বাইরে বেরিয়ে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলবে না।
(কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রতনলাল হাংলু প্রসঙ্গে)
অভিজিৎ: তোমরা এত দিন ধরে সমস্যার কথা উপাচার্যকে জানাওনি?
ছাত্রছাত্রীরা: কন্ট্রোলার বিমলেন্দু বিশ্বাস তো উপাচার্যের সঙ্গে আমাদের দেখা করতেই দেননি। উপাচার্যের অফিসের কর্মীরাও বাধা দিতেন। তবে এ সবের মধ্যেও ১৬ জুন উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাই।
অভিজিৎ: কী ভাবে দেখা করার সুযোগ পেলে?
ছাত্রছাত্রীরা: উপাচার্য কর্মীদের মাধ্যমে আমাদের খবর পাঠান। আমরা কী ভাবে, কার হাতে টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছিসবটাই লিখিত আকারে তাঁকে জানাতে হবে।
অভিজিৎবাবু: ও এই ভাবে? আমি নিজেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ছাত্ররা তো হামেশাই আমার সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
ছাত্রছাত্রীরা: আরও দুর্নীতি আছে।
অভিজিৎ: কী?
ছাত্রছাত্রীরা: বিএডে সেকেন্ড মেথড সাবজেক্ট হিসেবে ‘ওয়ার্ক এডুকেশন’ এবং ‘আর্ট’ (‘আর্ট এডুকেশন’) দেওয়ার জন্য অমরবাবু অন্তত ৫০ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।
অভিজিৎ: আগের পড়ুয়াদের কাছ থেকে শুনলাম, ১০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। তাই না?
ছাত্রছাত্রীরা: না স্যার, কারও কাছ থেকে কুড়ি, কারও কাছ থেকে তিরিশ হাজার টাকা নিয়েছেন।
অভিজিৎ: তাই? এখন কী সমস্যা?
ছাত্রছাত্রীরা: আচমকা উনি বলেছেন, ‘সেকেন্ড মেথড সাবজেক্ট’ হিসেবে অন্য বিষয় নিতে হবে। আমরা তো কোনও দিন সেই বিষয় পড়িইনি। কী ভাবে পরীক্ষা দেব?
অভিজিৎ: বিষয়টি দেখছি। তবে পরীক্ষার বিষয়টি আমার হাতে নেই।
এর পরেই তদন্তকারী আধিকারিক উঠে দাঁড়ান
অভিজিৎ: বাইরে গিয়ে তোমরা সাদা কাগজে লেখো কী ভাবে ওই কলেজে ভর্তি হয়েছিলে। কত টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছিলে এবং কবে ভর্তি হয়েছিলে।
ছাত্রছাত্রীরা: স্যার, কার মাধ্যমে ভর্তি হয়েছিলাম লিখব?
অভিজিৎ: সেটা মনে হয়, খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। ওটা লিখতেও পারো, না-ও পারো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy