লাল থেকে গৈরিক। লোকসভা ভোটের পরে এ আর নতুন কোনও ঘটনা নয়। রাজ্যের বহু জায়গাতেই বাম শিবির থেকে বিজেপি-তে যোগদান চলছে। কিন্তু রবিবার কলকাতা সাক্ষী রইল এক আবেগ-মাখানো যোগদান-পর্বের! বিজেপি-তে যোগ দিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের যুব সংগঠন থেকে পদত্যাগী সভাপতি-সম্পাদক, প্রাক্তন বিধায়ক, এক জেলা সম্পাদক-সহ হাজার দেড়েক নেতা-কর্মী।
ফ ব-র যুব লিগের সদ্য পদত্যাগী রাজ্য সম্পাদক অনির্বাণ চৌধুরী, সভাপতি অজয় অগ্নিহোত্রী ও তাঁর স্ত্রী শশী, বারাসতের প্রাক্তন বিধায়ক বীথিকা মণ্ডল, পশ্চিম মেদিনীপুরে ফ ব-র প্রাক্তন জেলা সভাপতি সুকুমার ভুঁইয়া, দলের মহিলা শাখার নেত্রী আসমা খাতুনরা বাম রাজনীতিতে তাঁদের ইনিংসের ইতি টানলেন। বাম থেকে একেবারে বিজেপি পরিবর্তনের লম্বা পরিধির জন্যই হোক, বা যে কোনও কারণে, আবেগ গ্রাস করল তাঁদের। বক্তৃতা করতে গিয়ে দৃশ্যত কেঁদে ফেললেন অজয়। অশোক ঘোষের মতো প্রবীণ নেতার প্রতি তাঁদের যে আজও শ্রদ্ধা আছে, সে কথা জানাতে ভোলেননি তিনি। অন্য ফ ব-ত্যাগী নেতাদেরও গলা ধরে আসছিল বক্তব্যের সময়। দীর্ঘ দিনের অভ্যাসে এ দিন অনেকেই বক্তৃতা শুরু করেছেন ‘প্রিয় কমরেড’ বলে! কেউ আবার বক্তৃতার শেষে বলেছেন, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ-বিজেপি জিন্দাবাদ’!
কেন দল ছাড়লেন? অনির্বাণের অভিযোগ, “মর্যাদা পাইনি। চাকরি নয়, লাইসেন্স নয়, পারমিট নয়--- শুধু কাজের মূল্যায়নের নিরিখে স্বীকৃতি। দল তা দেয়নি।” তাঁর আরও দাবি, সরকারে থেকে এবং সরকারের বাইরে যাওয়ার পরেও মানুষের পাশের থাকার কোনও কর্মসূচি নিতে পারেনি ফ ব। যদিও এই সে দিন পর্যন্ত অনির্বাণদের নেতৃত্বেই পথে দেখা গিয়েছে ফ ব-র যুবদের! বীথিকাদেবীর ক্ষোভ, “নেতাজিকে নিয়ে ওঁরা ব্যবসা করছেন! রাজ্যের এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে থাকার কোনও ইচ্ছেই নেই ফ ব নেতৃত্বের!”
অনির্বাণ-বীথিকাদের পাশে পেয়ে খুশি গোপন করেননি বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। নবীন সদস্যদের অন্তর থেকেই বরণ করে নিচ্ছেন বলে জানিয়ে বাম শিবির থেকে আগতদের উদ্দেশে রাহুলবাবু বলেন, “এত দিন আপনারা ছিলেন রুদ্ধ একটা ঘরে। বাম-ডান ভেদাভেদ নয়, আমরা একসঙ্গে মানুষের জন্য লড়ব।” অনির্বাণদের নিয়ে জেলায় সদস্য সংগ্রহে তাঁরা নামবেন বলে জানান বিজেপি নেতা অসীম সরকার।