Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কদরের মাকেও জেরা করল এনআইএ

প্রথমে পৌঁছেছিল এসআইবি, এবার গেল এনআইএ। বিস্ফোরণ-কাণ্ডে অন্যতম জড়িত কওসরের শ্যালক কদর গাজির নিমড়ার বাড়িতে গেল এনআইএ-র চার সদস্যের এক প্রতিনিধি দল। বৃহস্পতিবার কদরের মা শরিফা বিবিকে জেরা করেন তাঁরা। তল্লাশি চালান বাড়ির ছাদে উঠেও। শরিফা বিবি জেরায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের জানান, তাঁর তিন মেয়ের মতো একমাত্র ছেলে কদরেরও বিয়ে হয়েছিল শিমুলিয়া মাদ্রাসায় এক ছাত্রীর সঙ্গে। তার নাম খালিদা।

নিমড়া গ্রামে কদরের বাড়ির ছাদে তদন্তে এনআইএ।

নিমড়া গ্রামে কদরের বাড়ির ছাদে তদন্তে এনআইএ।

অর্ঘ্য ঘোষ
কীর্ণাহার শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৫৫
Share: Save:

প্রথমে পৌঁছেছিল এসআইবি, এবার গেল এনআইএ।

বিস্ফোরণ-কাণ্ডে অন্যতম জড়িত কওসরের শ্যালক কদর গাজির নিমড়ার বাড়িতে গেল এনআইএ-র চার সদস্যের এক প্রতিনিধি দল। বৃহস্পতিবার কদরের মা শরিফা বিবিকে জেরা করেন তাঁরা। তল্লাশি চালান বাড়ির ছাদে উঠেও। শরিফা বিবি জেরায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের জানান, তাঁর তিন মেয়ের মতো একমাত্র ছেলে কদরেরও বিয়ে হয়েছিল শিমুলিয়া মাদ্রাসায় এক ছাত্রীর সঙ্গে। তার নাম খালিদা।

খাগড়াগড়-বিস্ফোরণের পরে ধৃত রাজিয়া বিবি ও আলিমা বিবিকে জেরা করে সিআইডি কওসরের শ্বশুরবাড়ির কথা জানতে পেরেছিল। শিমুলিয়া মাদ্রাসায় নিমড়ার কদর গাজির ছোট বোন লক্ষী ওরফে রুম্পা ওরফে জিন্নাতুরের বিয়ে হয়েছিল কওসরের সঙ্গে। এরপরই নিমড়ায় কদরের বাড়ি যায় এসআইবি (সাবসিডিয়ারি ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো)-র একটি দল। তদন্তে মিলেছিল কিছু পোড়া কাগজ, আরবি নথি ও একটি অপটিকক্যাল ফাইবারের কেবলের টুকরো। কদরের মা শরিফা বিবি অবশ্য এসআইবিকে জানিয়েছিলেন, জামাই কওসরকে তিনি চেনেন না। এ দিন এনআইএর প্রতিনিধি দলকেও জেরার মুখে তিনি একই রকম ভাবে জানিয়ে দেন, “মাদ্রাসা থেকে যে তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছিল, তাদের কেউই এ বাড়িতে আসেনি। জামাইদেরও দেখিনি কখনও।”

শিমুলিয়া মাদ্রাসার সামনে থেকে পাওয়া কমলা ন্যানোর মালিকের সন্ধানে নেমে বুধবার ভোরে এই নিমড়া গ্রাম থেকেই হিপজুল্লা কাজি নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছিল এনআইএ। বৃহস্পতিবার তাঁকে ছেড়ে দিলেও এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ নানুর থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ফের গ্রামে যায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। কদরের মাঠ পাড়ার বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালান তাঁরা।

গোয়েন্দারা কদরের বাড়িতে গিয়ে দেখেন, তাঁর বাড়িতে হুকিং করে টানা বিদ্যুতে পাখা চলছে। তদন্ত শুরু করার আগেই তাঁরা নানুর থানার পুলিশকে বলেন, ওই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য। এরপর তাঁরা কদরের বাড়ির সদর দরজা বন্ধ করে দিয়ে শরিফা বিবিকে জেরা শুরু করেন। ছাদে উঠে তন্ন তন্ন করে খোঁজেন, কোথাও কোনও অস্থায়ী অ্যান্টেনা বসানোর চিহ্ন রয়েছে কিনা। শরিফা বিবিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে চান, ছাদে অ্যান্টেনা ছিল কিনা সে নিয়ে। সূত্রের খবর, ওই অপটিক্যাল ফাইবারের কেবলের ব্যবহার করে কোথাও যোগাযোগ করা হয়েছিল কিনা সে সবই খতিয়ে দেখছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।

এ দিন প্রায় ১৫ মিনিট ধরে পুলিশ ও গোয়েন্দারা কদরের বাড়িতে অভিযান চালান। তদন্তের পর, কদরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে রয়েছে কাপড়-জামা-বাক্স। চৌকির উপর বসে রয়েছেন শরিফা বিবি। তিনি বলেন, “মাস চারেক আগে, কয়েকদিনের জন্য কদরের বউ খালিদা এসেছিল। তার কোথায় বাড়ি জানি না। শিমুলিয়ার মাদ্রাসাতেই কদরের বিয়ে হয়েছিল।”

কদরের এক পড়শি ঠিক অন্য কথা বলছেন। এনএইএ-র সদস্যরা এ দিন কদরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে জালালকেও বেশ কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিনি গোয়েন্দাদের জানান, শরিফা বিবির ছয় মেয়েরই যাতায়াত ছিল ওই বাড়িতে। জামাইরাও আসত নিয়মিত। তিনি বলেন, “বাইরের লোকও আসত তবে কারা, সেটা বলতে পারব না।”


সপরিবার পালিয়েছে ছেলে। একা বাড়িতে মা শরিফা বিবি। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা এ দিন হানা দেন কীর্ণাহারের কাজি মার্কেটে সুকুর শেখের বাড়িতেও। তাঁর ছেলে আমজাদ কলকাতায় একটি বেসরকারি চাকরি করত বলে সুকুর জানতেন। ঈদের পর থেকে তারও মোবাইল বন্ধ। দুপুর ১ টা পর্যন্ত সুকুরের বাড়িতে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ চালান গোয়েন্দারা। পরে সুকুর বলেন, “ছেলে আমজাদের (ওরফে কাজল) বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছিলেন ওরা। যা জানি বলেছি, নতুন করে আর কিছু বলার নেই।” গোয়েন্দাদলটি কীর্ণাহার থেকে যায় লাভপুর। আমজাদের শ্বশুর-শাশুড়ি ইমামমুদ্দিন ও নাজেরা বিবিকে প্রথমে থানায় ডেকে ও পরে তাঁদের বাড়ি রামঘাটিতে গিয়েও জেরা করেন।

নিমড়ার কদরের বাড়ির মতোই এ দিন রামঘাটিতে আমজাদের শ্বশুরবাড়ি ঘিরেও ছিল এলাকার কৌতূহলী মানুষের ভিড়। পলেস্তারাহীন বিশাল দোতলা বাড়িটির সামনে থেকে ওই জনতাকে হঠাতে ব্যস্ত দেখা যায় ইমামমুদ্দিনের বাড়ির লোককে। এমনকী সংবাদমাধ্যমকে এড়াতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা ভিতরে ঢোকার পরই বাইরে থেকে দরজায় শিকল তুলে দেন তাঁরা। আবার জিজ্ঞাসাবাদের পর গোয়েন্দারা চলে যেতেই ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন তাঁরা।

গোয়েন্দাদের একটি সূত্র বলছে, এর আগে এসআইবি কদর গাজির বাড়ি থেকে যে সমস্ত আরবি নথি ও পোড়া কাগজ পেয়েছে, সে সব তুলে দিয়েছে এনআইয়ের হাতে। দুই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দলের মধ্যে কথাও হয়েছে সে নিয়ে। কীর্ণাহারের কাজি মার্কেটে সুকুর শেখের পড়শি ব্যবসায়ী হিপজুল্লার দোকান থেকে সিজ করা ল্যাপটপের ডিস্কে মেলা তথ্যও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE