Advertisement
E-Paper

কলেজে ফিরলেন অধ্যক্ষ, খুশি পড়ুয়ারা

‘কথা দিন আর কোনও দিন এভাবে আমাদের ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববেন না।’-- বলেই পরিচালন সমিতির বৈঠক শেষে অধ্যক্ষের দুহাত ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছিলেন কলেজেরই দুই শিক্ষিকা। ঘটনায় আবেগাপ্লুত অধ্যক্ষও। ছলছল চোখে কথা দিলেন তিনি তাঁদের ছেড়ে যাবেন না। সেই কথা তিনি রেখেছেন। দিন তিনেকের টালবাহানার পর বৃহস্পতিবার তিনি ফিরে গেলেন নিজের চেয়ারে।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩৯

‘কথা দিন আর কোনও দিন এভাবে আমাদের ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাববেন না।’-- বলেই পরিচালন সমিতির বৈঠক শেষে অধ্যক্ষের দুহাত ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছিলেন কলেজেরই দুই শিক্ষিকা। ঘটনায় আবেগাপ্লুত অধ্যক্ষও। ছলছল চোখে কথা দিলেন তিনি তাঁদের ছেড়ে যাবেন না। সেই কথা তিনি রেখেছেন। দিন তিনেকের টালবাহানার পর বৃহস্পতিবার তিনি ফিরে গেলেন নিজের চেয়ারে। শক্ত হাতে হাল ধরলেন কলেজের। সেই চেনা ভঙ্গিতেই তৃতীয় বর্ষে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তিসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করেলেন। হাসিঠাট্টায় মাতলেন সহ-কর্মীদের সঙ্গেও। চেনা মেজাজে দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন সহ-কর্মীরাও।

বহিরাগত ও কলেজের ছাত্র সংসদের হাতে অপমানিত হওয়ার পর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন চাপড়া বাঙ্গালঝি কলেজের অধ্যক্ষ কৃষ্ণগোপাল রায়। সেই মতো তিনি একটি পদত্যাগপত্র লিখে কলেজের এক কর্মীর হাত দিয়ে পরিচালন সমিতির সভাপতির কাছে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হতেই স্থানীয় তৃণমূল নেতারা তাঁর উপরে চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন পদত্যাদ পত্র তুলে নেওয়ার জন্য। শুধু তাই নয় চাপড়ার শিক্ষা জগতের লোকজন তাঁকে পদত্যাগ পত্র তুলে নিতে অনুরোধ করতে থাকেন। অনুরোধ আসে বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকেও। শেষ পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও পরিচালন সমিতির অনুরোধে পদত্যাদপত্র তুলে নেন কৃষ্ণগোপালবাবু। কিন্তু কী এমন হয়েছিল যে সহকর্মী থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রী সবার প্রিয় ওই অধ্যক্ষ পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

ঘটনার সূত্রপাত গত শুক্রবার। এ দিন প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের অনার্সের কম্পালসারি পরিবেশবিদ্যা বিষয়ে পরীক্ষা ছিল। অধ্যক্ষ কৃষ্ণগোপালবাবু পরীক্ষার শুরুতেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষার্থী ছাড়া কলেজ চত্বরে কেউ থাকতে পারবে না। কিন্তু তার সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ছাত্র সংসদের বেশ কিছু সদস্য ও বহিরাগত কলেজের ভেতরে থেকে যায়। বিষয়টি জানার ‌পরে তিনি মাইকে তাঁদের কলেজের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ এলে পুলিশকে বসিয়ে রেখে নিজে বহিরাগতদের কাছে গিয়ে বাইরে বেরিয়ে যেতে বলেন। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্র সংসদের কর্মী ও বহিরাগতরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের বেরিয়ে যেতে হয়। তখনকার মতো মুখে কিছু না বললেও কিছুক্ষণ পরে তাঁরা দলবল নিয়ে ফিরে আসেন। অধ্যক্ষ তখন নিজের ঘরেই ছিলেন। তাঁকে ঘরের মধ্যে রেখে তালাবন্দি করতে যায় ছাত্র সংসদের নেতারা। কলেজের শিক্ষক ও কর্মীরা তাঁদের বাধা দেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরা কলেজের মেন গেটে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। নকল করতে না দেওয়ার প্রতিবাদে ওই অধ্যক্ষকে ‘অকথ্য’ ভাষায় গালাগাল দিতে থাকেন বলে অভিযোগ। সে দিনের মতো পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেলেও সোমবার পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। এ দিনও পরীক্ষা ছিল। প্রথম পর্বের পরীক্ষা শান্তিপূর্ণ ভাবে হলেও শেষ পর্বে কিছু বহিরাগত যুবক মোটরবাইকে এসে কলেজ চত্বরে জোরে জোরে হর্ন বাজাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন পরীক্ষা হলে ঢুকে পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র নিয়ে বাইরে চলে আসে। গোটা ঘটনায় তীব্র অপমান বোধ করেন ও পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন।

কলেজের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা জানালেন, গত দুদিনের টানাপোড়েনে কলেজের ছন্দটাই যেন হারিয়ে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার তিনি কলেজে ফিরে আসায় খুশি পড়ুয়া-শিক্ষকরা। এদিন ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে। কলেজের ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছে, ‘কড়া’ ধাতের মানুষ হলেও ওই অধ্যক্ষ তাদের কাছে খুবই প্রিয়। তাদের সমস্যা নিয়ে সোজা চলে যেতে পারে অধ্যক্ষের কাছে। কিন্তু শর্ত একটাই, একা যেতে হবে। কোনও নেতাকে সঙ্গে নিয়ে নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র বলেন, “উনি আমাদের বার বার বলেন নিজের সমস্যা নিজেকেই সমাধান করতে। প্রথম প্রথম রাগ হত কিন্তু পরে বুঝেছি উনি আমাদের ভালোর জন্য বলেন।” ছাত্রছাত্রীদের কথায়, ওই অধ্যক্ষ ছাত্রছাত্রীদের মন যতটা বোঝেন অন্য কেউ সেভাবে বুঝবেন কিনা সে বিষয়ে তাদের সন্দেহ রয়েছে। কলেজে যে সব ছেলেমেয় নিয়মিত আসত না তাদের চিহ্নিত করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করেছিলেন। স্বাভাবিকভাবে তিনি যখন পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন অনেক ছাত্রই তা মেনে নিতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত তিনি ফিরে আসায় অনেকের চোখে তাই খুশির জল।

কলেজের বাংলার শিক্ষক বাসুদেব ঘোষ বলেন, “কৃষ্ণগোপালবাবু পদত্যাগপত্র ফিরিয়ে নেওয়ায় আমরা সকলেই খুব খুশি। দু’দিন গোটা কলেজটাই যেন অভিভাবক শূন্য হয়ে গিয়েছিল। কারোওই ভালো লাগছিল না। আমরা সকলেই চাইছিলাম উনি যেন পদত্যাগপত্র তুলে নেন।” প্রত্যেকেরই এই অকুণ্ঠ ভালোবাসায় কী বলবেন বুঝে উঠতে পারছেন না কৃষ্ণগোপালবাবু। তিনি বলেন, “আমাকে সবাই যে এত ভালোবাসেন তা আমি জানতাম না। বহু প্রাক্তন ছাত্রও আমাকে ফোন করে পদত্যাগপত্র তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। কলেজে ফের ফিরতে পেরে ভালো লাগছে।”

bangaljhi college principal gherao susmit halder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy