Advertisement
E-Paper

কড়া নাড়লেন অধীর, বুথে নিয়ে চললেন রিঙ্কু

এক জন একেবারে আনকোরা। আর এক জন নিজের হাতের চেটোর দিকে চেয়ে বলে দিতে পারেন, কোথায় তাঁর নামে কত ভোট পড়ছে। কিন্তু নিজের ভোটারদের বুথে নিয়ে সোমবার যেতে পথে নামতে হল দু’জনকেই। মুর্শিদাবাদের বড়ঞায় গ্রামের দাওয়ায় বসে পড়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী হাঁক পাড়লেন, “কই দেখি, কে ভোট দিতে দেবে না!” আর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজারে পুলিশের সামনে সিপিএম প্রার্থী রিঙ্কু নস্কর ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, “এতক্ষণ কোথায় ছিলেন? পার্টি অফিসে (পড়ুন, তৃণমূল অফিসে) বসে ফন্দি আঁটছিলেন, কী ভাবে কর্তব্য এড়ানো যায়?”

রাহুল রায় ও নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৪ ০৩:৪১
বড়ঞার বিন্দারপুরের ডাঙাপাড়ায় কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী এবং আরএসপি প্রার্থী প্রমথেশ মুখোপাধ্যায়। সোমবার।  ছবি: গৌতম প্রামাণিক

বড়ঞার বিন্দারপুরের ডাঙাপাড়ায় কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী এবং আরএসপি প্রার্থী প্রমথেশ মুখোপাধ্যায়। সোমবার। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

এক জন একেবারে আনকোরা। আর এক জন নিজের হাতের চেটোর দিকে চেয়ে বলে দিতে পারেন, কোথায় তাঁর নামে কত ভোট পড়ছে।

কিন্তু নিজের ভোটারদের বুথে নিয়ে সোমবার যেতে পথে নামতে হল দু’জনকেই।

মুর্শিদাবাদের বড়ঞায় গ্রামের দাওয়ায় বসে পড়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী হাঁক পাড়লেন, “কই দেখি, কে ভোট দিতে দেবে না!” আর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজারে পুলিশের সামনে সিপিএম প্রার্থী রিঙ্কু নস্কর ঝাঁঝিয়ে উঠলেন, “এতক্ষণ কোথায় ছিলেন? পার্টি অফিসে (পড়ুন, তৃণমূল অফিসে) বসে ফন্দি আঁটছিলেন, কী ভাবে কর্তব্য এড়ানো যায়?”

কান্দির পুরন্দরপুর দিয়ে বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডল মুর্শিদাবাদে ঢুকবেন, এমন একটা আশঙ্কা কংগ্রেস শিবিরে ছিল। শেষ পর্যন্ত তেমনটা না ঘটলেও সকাল থেকেই গ্রামে-গ্রামে ছাপ্পা-রিগিং-বুথ দখলের ভুরি-ভুরি অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ভোটের দিন সাধারণত বহরমপুরে জেলা কংগ্রেস অফিসের ‘কন্ট্রোল রুমে’ ছেড়ে বেরোন না অধীর চৌধুরী। বড়ঞার বিন্দারপুর ডাঙাপাড়ার ২০০ ও ২০১ নম্বর বুথে ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না বলে বারবার খবর আসায় সেই তিনিই ধৈর্য হারালেন। ‘চল তো দেখি’ গাড়ি ছুটল ধুলো উড়িয়ে।

গ্রামে গিয়ে দেখা প্রতিদ্বন্দ্বী, বহরমপুর কেন্দ্রের আরএসপি প্রার্থী প্রমথেশ মুখোপাধ্যায়ের। শীর্ণকায় বাম নেতা অধীরকে জড়িয়ে প্রায় আর্তি জানালেন, “দেখুন না, ভোট দিতেই দিচ্ছে না কাউকে!” তাঁর হাত ধরে অধীর বললেন, “একটু দাঁড়িয়ে যান না, আমরা দু’জনে ভোটটা করিয়ে যাই।’ এর পরে প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে ঘরে খিল দিয়ে থাকা ভোটারদের ডাকাডাকি চলল। কখনও দাঁড়িয়ে থেকে, কখনও দরজায় কড়া নেড়ে মহিলাদের ডেকে আনলেন অধীর-প্রমথেশ “আরে আসুন না, মনে সাহস রাখুন।” পড়ন্ত বিকেলে সাহস সঞ্চয় করে দল বেঁধে মহিলা-পুরুষ চললেন বুথের দিকে। আগে-আগে দুই প্রার্থী।

কাটিবেরিয়া গ্রামে ভোটারদের ভোট দিতে নিয়ে যাচ্ছেন মথুরাপুর লোকসভা
কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী রিঙ্কু নস্কর। সোমবার দিলীপ নস্করের তোলা ছবি।

দমচাপা বাতাবরণে কিঞ্চিৎ অক্সিজেন জোগাতে বুথের পথে বাঁশের কঞ্চি নিয়ে ক্রিকেটও খেলে নিলেন অধীর। কিন্তু ভয় কাটল কি? সন্ত্রস্ত মুখে মালতী, প্রতিমা, শ্যামলীরা যখন ভোট দিচ্ছেন, দুই প্রার্থী ব্যস্ত ঘনঘন ফোনে পুলিশ-প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কাছে অবস্থা জানাতে। ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসার সময়ে ডাঙাপাড়ার দুই মহিলার মাথা তাক করে উড়ে এল ঢিল। পুরুষদের তখনও শাসানো হচ্ছে, ‘রাতে তোদের দাদা কী করে বাঁচায় দেখব!’

রাজ্যের দক্ষিণে মথুরাপুরের সিপিএম প্রার্থী রিঙ্কু অবশ্য সকাল থেকেই চক্কর কাটছিলেন। পরনে সাধারণ ছাপা শাড়ি। মন্দিরবাজারের ক্যাচারকুড় পঞ্চায়েতের বেলুনি গ্রামে তেড়ে ছাপ্পা হচ্ছে বলে খবর ছিল। রিঙ্কু সেখানে পৌঁছলেন, তখন বেলা ১১টা। কাঠিবেড়িয়া প্রাথমিক স্কুলের বুথ থেকে তখন দলে দলে ফিরে এসে মাঠের ধারে একটি অশ্বত্থগাছের নীচে জমায়েত হচ্ছেন গ্রামবাসী। রিঙ্কুকে দেখে বছর ষাটের সরলা সর্দার এগিয়ে এলেন “ভোট দিতে গেলাম, তৃণমূলের ছেলেরা ফিরিয়ে দিল।” রিঙ্কু বললেন, “তোমরা আমার সঙ্গে চলো, দেখি কে আটকায়।”

কিন্তু কেউই নড়তে চান না। তাঁদের বক্তব্য, বুথে এক জন সশস্ত্র পুলিশ ছাড়া কেউ নেই। মার খেলে সামলাবে কে? রিঙ্কু এক বার গ্রামবাসীকে বোঝাচ্ছেন, এক বার নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের ফোন করছেন। আধ ঘণ্টা পরে সেক্টর পুলিশ অফিসার। পিছনে কেন্দ্রীয় বাহিনী। অফিসারকে দেখেই মেজাজ হারালেন রিঙ্কু “এতক্ষণ কোথায় ছিলেন?” অফিসার বললেন, “কী করব? আমাদের বহু জায়গায় যেতে হচ্ছে।” তার পরেই জনতার উদ্দেশে “চলুন, সকলে ভোট দেবেন।” ভিড় থেকে দু’এক জন গলা তুললেন, “পুলিশ থাকলেও আমাদের মারধর করে তাড়িয়ে দেবে।” রিঙ্কু বলেন, “চলো, আমিও তোমাদের সঙ্গে যাব।”

আগে-পিছে পুলিশ আর কেন্দ্রীয় বাহিনী। মাঝে ভোটার, সামনে প্রার্থী। তাঁর মোবাইলে একের পর এক ফোন আসছে কুলপি, লক্ষ্মীকান্তপুর, টেকপাঁজা থেকে ছাপ্পা পড়ছে দিদি, এক বার আসুন! রিঙ্কু বলছেন, “একটু সামলে নিন। এখানে প্রায় তিনশো ভোটার ভোট দিতে যাচ্ছেন।”

প্রায় আড়াইটা পর্যন্ত চলল ভোট। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলেন রিঙ্কু। বললেন, “ভোট দেওয়ানোটাকেই আজ চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম।”

rahul roy nurul absar adhir choudhury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy