Advertisement
E-Paper

গেট ভাঙা, ছাদ ঝুলছে, খণ্ডহর সিলিকন অফিস

যেন একটা ধ্বংসস্তূপ! সর্বাঙ্গে প্রলয়ের ক্ষতচিহ্ন নিয়ে নিঃসাড়ে পড়ে রয়েছে! কে বলবে, বছর দেড়েক আগেও এখানে ছিল রমরমিয়ে চলা সংস্থার ঝাঁ চকচকে অফিস, যেখানে রোজ চলত লাখো টাকার কারবার! চারু মার্কেট অঞ্চলে একটি আবাসনের তিনতলা-চারতলায় সিলিকন গোষ্ঠীর অফিসে ঢুকলে এমনটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক। তিনতলার সিঁড়ির সামনে দুমড়ে ভেঙে পড়ে রয়েছে কোলাপসিব্ল গেট। খুঁটিয়ে দেখলে বুঝতে অসুবিধে হয় না যে, সেটাকে পিটিয়ে ভাঙা হয়েছে। গায়ের তালাটি অবশ্য এখনও ঝুলছে। তার উপরে পুরু ধুলোর আস্তরণ।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৩
সিলিকনের দফতরের হাল। নিজস্ব চিত্র

সিলিকনের দফতরের হাল। নিজস্ব চিত্র

যেন একটা ধ্বংসস্তূপ! সর্বাঙ্গে প্রলয়ের ক্ষতচিহ্ন নিয়ে নিঃসাড়ে পড়ে রয়েছে! কে বলবে, বছর দেড়েক আগেও এখানে ছিল রমরমিয়ে চলা সংস্থার ঝাঁ চকচকে অফিস, যেখানে রোজ চলত লাখো টাকার কারবার!

চারু মার্কেট অঞ্চলে একটি আবাসনের তিনতলা-চারতলায় সিলিকন গোষ্ঠীর অফিসে ঢুকলে এমনটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক। তিনতলার সিঁড়ির সামনে দুমড়ে ভেঙে পড়ে রয়েছে কোলাপসিব্ল গেট। খুঁটিয়ে দেখলে বুঝতে অসুবিধে হয় না যে, সেটাকে পিটিয়ে ভাঙা হয়েছে। গায়ের তালাটি অবশ্য এখনও ঝুলছে। তার উপরে পুরু ধুলোর আস্তরণ।

অফিসঘরের ভিতরে পা দিয়ে দেখা গেল, চার দিক ছত্রখান। দরজার সামনে মেঝেয় গড়াগড়ি খাচ্ছে গোছা গোছা লগ্নি-সার্টিফিকেট, ‘সিলিকন’ লেখা খাম, কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর শিবনারায়ণ দাসের ভিজিটিং কার্ড। সারদা-কাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে শনিবার এই শিবনারায়ণকেই গ্রেফতার করেছে সিবিআই। তদন্তকারীদের অভিযোগ, তিনি কেলেঙ্কারির অন্যতম নাটের গুরু। পাশের ঘরগুলোও তথৈবচ। একটা ঘরের দরজায় হাত দিতেই হাট হয়ে খুলে গেল। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে নজরে এল, ফাইল বোঝাই টেবিল মেঝেয় উল্টে পড়ে রয়েছে। ফাইলের ভিতরের কাগজপত্র অবশ্য সব লোপাট। গা ঘেঁষা অন্য দু’টো ঘরে অপ্রয়োজনীয় কাগজ ও আর্বজনা ডাঁই করা। একটায় চেয়ার উল্টানো, সামনের টেবিলের উপরে কিছু কাগজপত্র। ফল্স সিলিং খুলে লুটিয়ে পড়েছে মাটিতে। দেওয়ালে এখনও টাঙানো সিলিকন গোষ্ঠীর এজেন্টদের কমিশনের তালিকা।

চারতলায় ছাদের অংশ জুড়েও সিলিকনের অফিস। সেখানে বিধ্বস্ত ফল্স সিলিংয়ের খোপে খোপে পায়রা বাসা বেঁধেছে। নোংরা মেঝেতে পা দেওয়া দায়। ঘরের এক পাশে টেবিলের উপরে সিলিকনের বিবিধ লগ্নি-প্রকল্পের কয়েকশো মেয়াদ-উত্তীর্ণ আবেদনপত্র।

চারু অ্যাভিনিউয়ের আবাসনটির দোতলার বাসিন্দা শুভেন্দুশঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হল নীচে নামার সময়। আবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার শুভেন্দুবাবু জানালেন, ২০১০-এ সিলিকনের এমডি শিবনারায়ণ তিনতলাটা কিনেছিলেন বিল্ডিংয়ের প্রোমোটারের কাছ থেকে। কারবার ফুলে-ফেঁঁপে ওঠার পরে চারতলার ছাদের কিছুটা জুড়েও তিনি অফিস ফেঁদে বসেন। সেই সঙ্গে কিনে নেন একতলার একটা অংশ, আর দোতলার একটা ফ্ল্যাট। এমনকী, তখন তাঁর ফ্ল্যাটটিও কিনতে চেয়ে শিবনারায়ণ জোরাজুরি শুরু করেছিলেন বলে শুভেন্দুবাবুর অভিযোগ। প্রাক্তন পুলিশ অফিসারের দাবি, ২০১১-য় সিলিকনের যখন তুঙ্গ রমরমা, তখন বসতবাড়িতে বেআইনি ভাবে অফিস খোলার জন্য পুলিশ, পুরসভা ও দমকলে তিনি শিবনারায়ণের বিরুদ্ধে নালিশ দাখিল করেছিলেন। “যদিও প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” আক্ষেপ শুভেন্দুবাবুর।

কিন্তু সিলিকন অফিসের এমন হাল হল কী ভাবে?

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের কেউ কেউ বলছেন, লগ্নিসংস্থাটির আমানতকারীদের একাংশই টাকা ফেরত না-পেয়ে অফিসে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায়। যদিও ওই অফিসের এক প্রাক্তন কর্মীর দাবি, শিবনারায়ণের সাঙ্গোপাঙ্গই অফিসে তাণ্ডব চালিয়ে কাগজপত্র গায়েব করেছে, যাতে সিবিআই কোনও তথ্য হাতে না-পায়। আর সেই কুকীর্তি আড়াল করতেই যে আমানতকারীদের নাম জড়ানো হচ্ছে, আশপাশের অন্য কিছু মানুষজনেরও মুখেও তেমন ইঙ্গিত।

স্থানীয় সূত্রের খবর: ২০১৩-য় সারদা-কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পরেও শিবনারায়ণ বেশ ক’মাস অফিস চালিয়েছেন। খাতায়-কলমে সিলিকন সংস্থার মূল কার্যালয় দক্ষিণ কলকাতার আজাদগড়ে হলেও চারু অ্যাভিনিউয়ের অফিসটি থেকেই শিবনারায়ণ তাঁর অধিকাংশ কারবার চালাতেন। বাসিন্দাদের দাবি, সে সময়ে এখানে রোজ কয়েকশো লোকের ভিড় জমতো। সারদা-কাণ্ডে নিজের নাম সামনে আসতেই শিবনারায়ণ আচমকা অফিসের ঝাঁপ গুটিয়ে ফেলেন। সেটা ২০১৩-র সেপ্টেম্বর। “তার পরে কোম্পানির কর্তা-ব্যক্তিরা অফিসের মালপত্র সরাতে শুরু করেন।” মন্তব্য এক এলাকাবাসীর।

saradha scam silicon shibnarayan das shibaji dey sarkar cbi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy