Advertisement
E-Paper

গ্রামীণ পরিবহণে গতি আনতে শ্রম দফতরের গতিধারা প্রকল্প

বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের দৌলতে রাজ্যের বহু প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছনোর রাস্তাও এখন গাড়ি চলাচলের যোগ্য। অথচ, বদলায়নি গ্রামীণ পরিবহণের ছবি। যদিও গ্রামে পরিবহণকে পেশা করতে আগ্রহী বা পরিবহণ-শিল্পে যুক্ত এবং গ্রামে কাজ করতে উৎসাহীর অভাব নেই। এক সমীক্ষায় এমন তথ্য পেয়ে সে দিক নজর দিয়েছে সরকার। রাজ্য শ্রম দফতর শুরু করেছে ‘গতিধারা প্রকল্প’। শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের দাবি, “প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ পরিবহণে গতি আসবে এবং স্থানীয় বেকারদের কর্মসংস্থান হবে।”

সুজাউদ্দিন ও দিবাকর রায়

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৫২
যন্ত্রচালিত ভ্যানরিকশায় ঝুঁকির যাত্রা। বিপজ্জনকও।—নিজস্ব চিত্র

যন্ত্রচালিত ভ্যানরিকশায় ঝুঁকির যাত্রা। বিপজ্জনকও।—নিজস্ব চিত্র

বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের দৌলতে রাজ্যের বহু প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছনোর রাস্তাও এখন গাড়ি চলাচলের যোগ্য। অথচ, বদলায়নি গ্রামীণ পরিবহণের ছবি। যদিও গ্রামে পরিবহণকে পেশা করতে আগ্রহী বা পরিবহণ-শিল্পে যুক্ত এবং গ্রামে কাজ করতে উৎসাহীর অভাব নেই। এক সমীক্ষায় এমন তথ্য পেয়ে সে দিক নজর দিয়েছে সরকার। রাজ্য শ্রম দফতর শুরু করেছে ‘গতিধারা প্রকল্প’। শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের দাবি, “প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ পরিবহণে গতি আসবে এবং স্থানীয় বেকারদের কর্মসংস্থান হবে।”

প্রশাসন সূত্রের খবর, মাস কয়েক আগে শ্রম দফতরের করা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা-সহ নানা প্রকল্পে কাজ হওয়ায় হাল বদলেছে গ্রামের রাস্তার। তবে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবহণে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। এখনও সেখানে যাতায়াতে যানবাহন নিয়মিত ব্যবধানে মেলা দুষ্কর। অথচ, গ্রামে অনেকেই রয়েছেন যাঁরা ছোট গাড়ি চালাতে জানেন। কাজের খোঁজে অনেকে কলকাতায় আসছেন বা ভিন্-রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন। পরিস্থিতি দেখে শ্রম দফতর গতিধারা প্রকল্প শুরু করেছে।

শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নাম লেখানো থাকলে ২০-৪৫ বছর পর্যন্ত বেকার যুবক-যুবতীরা (তফসিলি জাতি এবং উপজাতিদের জন্য বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ৫০, ওবিসি-র জন্য ৪৮) গতিধারা প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিয়ে মাঝারি ও ছোট গাড়ি কিনে গ্রামের রাস্তায় চালাতে পারবেন। শ্রম দফতরের তরফে ১ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হবে। প্রতিটি জেলায় নির্দিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকেই ঋণ পাওয়া যাবে। পারিবারিক আয় মাসে ২৫০০০ টাকার বেশি হলে ঋণ মিলবে না। ৫-৭ বছরে ঋণ শোধ করতে হবে।

গ্রামের রাস্তায় চলার জন্য পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে প্রয়োজনীয় অনুমতি। ঋণ যিনি নেবেন তাঁর নিজের বা তাঁর কেনা গাড়ি যিনি চালাবেন তাঁর বৈধ কমার্শিয়াল ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে। এই প্রকল্পের গাড়িগুলি কোনও মতে জাতীয় সড়কে চলাচল করতে পারবে না। গ্রামের রাস্তা থেকে রাজ্য সড়কে উঠলেও তাদের ওই রাস্তায় পাঁচ কিলোমিটারের বেশি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না। প্রতিটি জেলার সব মহকুমাশাসকের দফতর থেকে এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় আবেদনপত্র পাওয়া যাবে। সমস্ত কাগজপত্র জমাও নেওয়া হবে সেখানেই। জেলা প্রশাসনের অফিসার পরিবহণ দফতর ও ব্যাঙ্কের কর্তাদের নিয়ে গড়া একটি কমিটি আবেদনপত্র বিচার করে ঋণ মঞ্জুর করবে।

রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা প্রকল্প নিয়ে আশাবাদী। ডোমকলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৌমিত্র হোড়ের কথায়, “গ্রামে রাস্তা ভাল হলেও সেখানে নিয়মিত ভাবে যানবাহন চলে না। সেই সুযোগ নিয়ে অপরিকল্পিত ভাবে কিছু অবৈধ গাড়ি চলাচল করে। তাদের উপরে পরিবহণ দফতরের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় নানা রকমের বিপদে পড়তে হয় মানুষকে। গতিধারা প্রকল্প সেই সমস্যা থেকে মানুষকে মুক্তি দিয়ে ও গ্রামীণ যুবকদের আয়ের ব্যবস্থা করে দেবে।” শ্রম দফতরের কর্তাদের দাবি, এই প্রকল্পের ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ‘বিপ্লব’ হবে। মন্ত্রী মলয়বাবু বলেন, “এক দিকে যেমন একটি গাড়িতে কম করেও দু’জনের কর্মসংস্থান হবে, তেমনই গ্রামের মানুষ পাবেন উন্নত যানবাহনের সুবিধা।” গতিধারা প্রকল্প বেকার সমস্যা মেটানোর পাশাপাশি গ্রামীণ পরিবহণে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বাসিন্দারা। মুর্শিদাবাদের ডোমকলের কুপিলা গ্রামের সাদ্দাম হোসেনের কথায়, “গ্রাম থেকে সকাল-সন্ধ্যায় মাত্র দু’টি বাস জেলা সদর বহরমপুরে যাতায়াত করে। বাকি সময়ে ডজনখানেক লছিমন (যন্ত্রচালিত ভ্যান) ভরসা। লছিমনগুলি স্থানীয় ভাবে অনুন্নত প্রযুক্তিতে তৈরি। প্রায়ই গাড়ি উল্টে দুর্ঘটনা ঘটে। রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পে গ্রামের রাস্তায় উন্নত গাড়ি চলাচলের সম্ভাবনা বাড়বে। মানুষ উপকৃত হবেন।” উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি দুর্গামণ্ডপ গ্রামের বাসিন্দা খগেন মাহাতো বা মিনাখাঁর জয়গ্রামের লিয়াকত আলি গাজির বক্তব্য, “নতুন প্রকল্পে সরকারি সাহায্য পেলে ভালই হয়। গাড়ি কিনে এলাকায় চালাব।” প্রকল্পের উদ্দেশ্য স্বাগত জানালেও বাস্তবে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাছবিছার হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ অনেকের। তাঁদের বক্তব্য, “দেখতে হবে, ঋণ যেন শুধু শাসক দলের কর্মীরা না পান।’

sujauddin dibakar roy rural transport
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy