Advertisement
E-Paper

গুলি করে দুষ্কৃতীদের হুমকি, জনতার রোষে অবরুদ্ধ সড়ক

চোখের সামনে এক জনের মাথায় গুলি করেছিল আততায়ীরা। “মুখ খুললে প্রাণ খোয়াতে হবে”, প্রত্যক্ষদর্শীদের পথ আটকে, আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে এমন হুমকিও দিয়েছিল। শুক্রবার গুলিবিদ্ধ উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগরের ইউনুস মণ্ডল (৪৫) শনিবার হাসপাতালে মারা যেতেই প্রকাশ্যে এল জনরোষ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের ধরার দাবিতে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ঘণ্টা ছ’য়েক অবরোধ করলেন এলাকাবাসী। স্থানীয় উপপ্রধান বা ওসি-র আশ্বাসেও অবরোধ ওঠেনি। শেষ পর্যন্ত এলাকার বিধায়কের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৬
বাজিতপুর সড়কে চলছে অবরোধ। নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

বাজিতপুর সড়কে চলছে অবরোধ। নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

চোখের সামনে এক জনের মাথায় গুলি করেছিল আততায়ীরা। “মুখ খুললে প্রাণ খোয়াতে হবে”, প্রত্যক্ষদর্শীদের পথ আটকে, আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে এমন হুমকিও দিয়েছিল। শুক্রবার গুলিবিদ্ধ উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগরের ইউনুস মণ্ডল (৪৫) শনিবার হাসপাতালে মারা যেতেই প্রকাশ্যে এল জনরোষ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের ধরার দাবিতে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ঘণ্টা ছ’য়েক অবরোধ করলেন এলাকাবাসী। স্থানীয় উপপ্রধান বা ওসি-র আশ্বাসেও অবরোধ ওঠেনি। শেষ পর্যন্ত এলাকার বিধায়কের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

নিহতের ভাই আতিয়ার মণ্ডল ১৬ জনের বিরুদ্ধে গোপালনগর থানায় অভিযোগ করেন। তবে কেন ইউনুসকে মারা হল, তা নিয়ে তাঁর পরিবার অন্ধকারে। পুলিশের কাছেও খুনের কারণ শনিবার রাত পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “অভিযুক্তদের এক জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকিদের খোঁজ চলছে।” ব্যক্তিগত কাজে বেরিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় সুন্দরপুর মোড় থেকে বেরিয়ে হেঁটে খাবরাপোতার বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন দিনমজুর ইউনুস।

প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, সেই সময় স্বপন সর্দার ও সুখরঞ্জন বিশ্বাস নামে এলাকার দুই পুরনো দুষ্কৃতীর নেতৃত্বে জনা পনেরোর একটি দল ইউনুসকে ঘিরে ফেলে। কাছ থেকেই তাঁর মাথায় গুলি করা হয় বলে অভিযোগ। ইউনুস সেখানেই লুটিয়ে পড়েন। রাস্তা দিয়ে যাঁরা যাচ্ছিলেন তাঁদের ঘিরে ফেলে পাশের মাঠে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। আটকে রেখে মুখ খুললেই খুনের হুমকি দেওয়া হয়।

পুলিশ সূত্রের খবর, সেই সময় কয়েকজন দুষ্কৃতী এলোপাথাড়ি বোমা-গুলি ছুড়ছিল। আচমকা তাদেরই কারও গুলি লাগে সুখরঞ্জনের ডান পায়ে। রাস্তা দিয়ে যাওয়া একটি ভ্যানো থামিয়ে সুখরঞ্জনকে বনগাঁ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। অন্য দিকে তারা ঘটনাস্থল ছাড়ার পরে স্থানীয় বাসিন্দারা ইউনুসকে একই হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতাল থেকে দু’জনকেই কলকাতার আরজিকরে ‘রেফার’ করা হয়। তবে সুখরঞ্জনের ব্যাপারে খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। আরজিকর থেকে এসএসকেএমে পাঠানো হয় ইউনুসকে। রাতে তিনি সেখানে মারা যান। সুখরঞ্জন পুলিশের পাহারায় আরজিকরে চিকিৎসাধীন।

ইউনুসের মৃত্যুর খবর ছড়াতে এ দিন সকালে তেতে ওঠে খাবরাপোতা। ভোর ৫টা থেকে একই সঙ্গে অবরোধ শুরু হয় বনগাঁ-বাজিতপুর রাস্তা এবং সুন্দরপুর মোড় থেকে খাবরাপোতা যাওয়ার রাস্তায়। অবরোধে সামিল জনতার দাবি, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউনুস-হত্যায় জড়িতদের ধরার ব্যাপারে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে পুলিশকে। দাবি ওঠে, এলাকা দুষ্কৃতীমুক্ত করার। এ দিন ওই এলাকায় কোনও দোকানপাট খোলেনি।

গোপালনগর থানার ওসি দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, গঙ্গানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান জাফর আলি মণ্ডল অবরোধ তুলতে অনুরোধ করলে কাজ হয়নি। এসডিপিও (বনগাঁ) মীর শাহিদুল আলির অনুরোধও রাখেনি জনতা। বেলা ১১টা নাগাদ বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত বিশ্বজিৎবাবুর আশ্বাসেই অবরোধ ওঠে।

তবে এর পরেই বিষয়টিতে রাজনীতির রং লাগে। বিশ্বজিৎবাবুর অভিযোগ, ইউনুস তৃণমূল-কর্মী। বিজেপি-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এলাকায় সন্ত্রাস ছড়াতে তাঁকে মেরেছে। অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপির জেলা সভাপতি কামদেব দত্ত বলেন, “ঘটনাটা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের। আমরা দুষ্কৃতীদের প্রশ্রয় দিই না।”

আতিয়ার জানান, পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ইউনুস। স্ত্রী এবং দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার। তিনি বলেন, “দাদা ছাপোষা মানুষ। সাতেপাঁচে থাকতেন না। ওঁকে ওরা কেন মারল, বুঝতে পারছি না!”

স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, গোপালনগর থানা এলাকার খাবরাপোতা, মোল্লাহাতি, বামনডাঙা, বেলেডাঙা, নতিডাঙার মতো গ্রামগুলোয় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বা এলাকা দখলের লড়াই নতুন নয়। কিন্তু বিনা কারণে সাধারণ পরিবারের কাউকে খুন করে দুষ্কৃতীরা এলাকায় যে ভাবে দাপাচ্ছে, হুমকি দিচ্ছেএ জিনিস তাদের বরদাস্ত হচ্ছে না।

gopalnagar tmc murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy