Advertisement
E-Paper

ঘাস কাটতে গেলে জোটে গুলি, মারধর

“আমার ছেলের খুনের বিচার চাই। আপনারা বিচার দেবেন না?” ব্যস্ত কলকাতায় পুত্রহারা মায়ের এমন আর্তি শুনে থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছেন পথচলতি লোকজন। মুক্তমঞ্চকে ঘিরে থাকা ভিড়ের মধ্যে তখন পিন পড়ার নিস্তব্ধতা।

গৌরব বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৮
অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের প্রাঙ্গণে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছেন সীমান্তের বাসিন্দারা।—নিজস্ব চিত্র।

অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের প্রাঙ্গণে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছেন সীমান্তের বাসিন্দারা।—নিজস্ব চিত্র।

“আমার ছেলের খুনের বিচার চাই। আপনারা বিচার দেবেন না?”

ব্যস্ত কলকাতায় পুত্রহারা মায়ের এমন আর্তি শুনে থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছেন পথচলতি লোকজন। মুক্তমঞ্চকে ঘিরে থাকা ভিড়ের মধ্যে তখন পিন পড়ার নিস্তব্ধতা। বুধবারের পড়ন্ত বিকেলে স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে পুত্রহারা ওই মহিলা তখন বলে চলেছেন, “মুড়ি আর আমের আচার জলখাবার নিয়ে বাপ-ব্যাটা দু’জনেই কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে মাঠে গিয়েছিল তিল ঝাড়াই করতে। স্বামী বাড়ি ফিরল। ছেলে ফিরল না। ঝড়-জলের রাতে তন্নতন্ন করে কোথাও খুঁজে পাইনি। যখন পাওয়া গেল তখন ছেলের মুখটা পর্যন্ত দেখতে দিল না গো। চুরি, ছিনতাই, খুন, পাচার ও তো কিছুই করেনি। তাহলে কেন আমার ছেলেকে ওরা শেষ করে দিল? খুনের বিচার আমি চাই। আপনারা বিচার দেবেন না?”

দিনভর এমন নানা অভিজ্ঞতার কথা নিজের মুখে শোনালেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লোকজন। ১০ ডিসেম্বর, বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে কলকাতার অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সামনের মুক্তমঞ্চে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম)। মাসুমের সম্পাদক কিরীটী রায় বলেন, “এ বারে আমাদের অনুষ্ঠানের বিষয় ছিল ছিটমহল। ছিটমহলে প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। সেই যন্ত্রণার কথা সবাইকে জানাতে সেখান থেকে ৯ জন প্রতিনিধির আসার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তাঁরা আসতে পারেননি। তবে অন্য সীমান্ত থেকে বেশ কয়েক জন এসেছেন।” রাজ্য বিএসএফের এক জন শীর্ষ কর্তা বলেন, “কারা অভিযোগ করছেন, কীসের ভিত্তিতে অভিযোগ করছেন, আমরা জানি না। নির্দিষ্ট অভিযোগ কাছে জমা পড়লে সত্য-মিথ্যা খতিয়ে দেখতে পারব।”

নির্যাতিতরা এ দিন বললেন তাঁদের কষ্টের কথা, লড়াইয়ের কথা, বঞ্চনার কথা। সওয়াল করলেন নিজেদের অধিকার নিয়েও। মুর্শিদাবাদের সীমান্তঘেঁষা গ্রামেরই একজন পুত্রহারা ওই মহিলা। ২০১০ সালে তাঁর ছেলেকে বিএসএফ মেরে ফেলে বলে অভিযোগ। সেই খুনের বিচার চেয়ে আজ চার বছর ধরে তিনি লড়াই করে চলেছেন। তাঁকে সাহায্য করছে ওই মানবাধিকার সংস্থাও। এ দিনের অনুষ্ঠানের কথা শুনে আর দেরি করেননি সীমান্তের ওই মহিলা। দিনের দিন পৌঁছতে পারবেন না বলে মঙ্গলবার রাতেই বহরমপুর থেকে শিয়ালদহের ট্রেন ধরেন। রাতভরই পৌঁছে গিয়েছেন কলকাতায়। পরনে নতুন সুতির ছাপা শাড়ি। স্টিকারটা তুলতে ভুলেছেন। কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। সামলে নিয়ে বলেছেন, “লড়াইয়ে আমাকে জিততে হবে। না হলে মরে শান্তি পাব না।”

মুর্শিদাবাদের ওই মহিলা একা নন, উত্তর ২৪ পরগনা থেকে এসেছিলেন এক প্রৌঢ়া। নুন আনতে ভাত ফুরনো সংসারে পোষা ছাগলের জন্য ‘বর্ডারে’ গিয়েছিলেন পাতা আনতে। অভিযোগ, পাতা জোটেনি, জুটেছিল বিএসএফের বেধড়ক মার। হাসপাতালে ভর্তিও ছিলেন বেশ কয়েকদিন। এ দিন মঞ্চে দাঁড়িয়ে ওই প্রৌঢ়া বলছিলেন, “বিএসএফ তো আমাদের মানুষ বলেই মনে করে না। বর্ডারের মানুষের কি বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও আমাদের নেই?” ভোর তিনটেয় মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন আর এক জন মহিলা। গত বছর তাঁর স্বামী পুলিশের নির্যাতনে মারা গিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ দায়ের করেছেন। দাঁতে দাঁত চেপে পুলিশের বিরুদ্ধে শাস্তি চেয়ে লড়াই করছেন তিনি। দিন কয়েক আগে ক্ষতিপূরণও পেয়েছেন। সাকিনা এ দিন বলছেন, “ক্ষতিপূরণটা আমি হাতে পেয়েছি ঠিকই। কিন্তু অপরাধীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত এ লড়াই আমি চালিয়ে যাব।”

gourab biswas indo-bangla border bsf torture world human rights day academy of fine arts
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy