Advertisement
E-Paper

চোরদের ছেড়ে আমাদের সঙ্গে আসুন: সূর্যকান্ত

নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি চালনার পরে যাঁরা সেই ঘটনা সমর্থন করেননি, তাঁদের বামফ্রন্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসার ডাক দিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সারদা-কাণ্ডে রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্র গ্রেফতার হওয়ার পরে এ বার তৃণমূলের ‘সৎ’ লোকেদের দল ছেড়ে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানালেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। সারদা-সহ একের পর ঘটনায় শাসক দল যেমন এখন কোণঠাসা, তেমনই তৃণমূলের অন্দরে একাংশ দলের কাজকর্মে যথেষ্টই ক্ষুব্ধ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৫৮
মদনের পক্ষে ও বিপক্ষে, দুই মিছিল। শনিবার রামপুরহাটে একটি গলির মধ্যে হঠাৎই মুখোমুখি তারা।  ছবি:অনির্বাণ সেন।

মদনের পক্ষে ও বিপক্ষে, দুই মিছিল। শনিবার রামপুরহাটে একটি গলির মধ্যে হঠাৎই মুখোমুখি তারা। ছবি:অনির্বাণ সেন।

নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি চালনার পরে যাঁরা সেই ঘটনা সমর্থন করেননি, তাঁদের বামফ্রন্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসার ডাক দিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সারদা-কাণ্ডে রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্র গ্রেফতার হওয়ার পরে এ বার তৃণমূলের ‘সৎ’ লোকেদের দল ছেড়ে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানালেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। সারদা-সহ একের পর ঘটনায় শাসক দল যেমন এখন কোণঠাসা, তেমনই তৃণমূলের অন্দরে একাংশ দলের কাজকর্মে যথেষ্টই ক্ষুব্ধ। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যবাবু এই সময়ে ‘সৎ’ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দল ছেড়ে বেরিয়ে আসার আবেদন জানিয়ে শাসক দলে বিভাজনকেই উস্কে দিতে চেয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রীকে সিবিআইয়ের জেরা-সহ একাধিক দাবিতে কেন্দ্রের উপরে চাপ সৃষ্টি করতে শনিবার ধর্মতলা থেকে মৌলালি পর্যন্ত মিছিল ছিল বামেদের। কলকাতার পাশাপাশি মিছিল ছিল সব জেলাতেও। মদনের গ্রেফতারির প্রতিবাদে ময়দানে ক্রীড়াপ্রেমীদের মিছিলে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতির প্রসঙ্গ তুলে সূর্যবাবু বলেন, “তৃণমূলে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা চোর নন। সৎ মানুষ। তৃণমূলে অনেক দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক মানুষও আছেন। তাঁদের কাছে আমাদের আবেদন, চোরেদের সঙ্গে না থেকে আমাদের সঙ্গে আসুন! গরিব আমানতকারীদের টাকা ফেরাতে প্রয়োজনে ঝান্ডা ছাড়াই আন্দোলনে নামব।” সারদা-কাণ্ডে ঠেকায় পড়ে তৃণমূল নেত্রী শনিবারও বলেছিলেন, বিজেপি-বিরোধিতায় যে কোনও দলকে সঙ্গে নিতে তাঁর আপত্তি নেই। পত্রপাঠ প্রস্তাব নাকচ করেছিল বামেরা। সূর্যবাবু এ দিন আবার তৃণমূল কর্মীদের কাছে আহ্বান জানিয়ে পাল্টা চাল দিয়েছেন!

মিছিলে উপস্থিত বাম কর্মীদের উদ্দেশে এ দিন সূর্যবাবুর পরামর্শ, “আমাদের মাথা নিচু করে তৃণমূলের সাধারণ কর্মীদের ঘরে যেতে হবে। তাঁরা সৎ মানুষ। তাঁদের বুঝিয়ে আমাদের সঙ্গে নিতে হবে।” তৃণমূল কর্মীদের ঘরে গিয়ে কী বলতে হবে, তা-ও জানান সূর্যবাবু। তাঁর কথায়, “তৃণমূল থাকবে না। এই সরকার থাকবে না। ভেঙে পড়বে!” তৃণমূলে যাঁরা চুরি করেননি, কেন দলনেত্রীর কথায় তাঁদের গলায় ‘আমরা সবাই চোর’ লেখা ঝুলিয়ে মিছিল করতে হবে, সে প্রশ্নও তোলেন সূর্যবাবু।

বামেরা আহ্বান জানালেও তৃণমূলের এক রাজ্য নেতা পাল্টা বলেন, “ওঁদের লোকজন সব বিজেপি-তে চলে যাচ্ছে। ওঁরা আবার তৃণমূলে হাত বাড়াতে চাইছেন! তৃণমূল কর্মীরা কেউ মরে গেলেও সিপিএম হবে না!”

বাম মিছিলের শেষে জমায়েতে সিপিআইয়ের প্রবীর দেব, ফরওয়ার্ড ব্লকের দেবব্রত রায়, আরএসপি-র সুকুমার ঘোষ বক্তা ছিলেন। দেবব্রত বলেন, “মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে তাঁর বাড়ির উল্টো দিকে জেলখানার কয়েদিরা নাকি হাত নেড়ে অভিনন্দন জানিয়েছিল। আসলে তারা বুঝেছিল, তৃণমূলের সবাই এক এক করে জেলে যাবে! হাত নেড়ে সেটাই বলেছিল!” মিছিলের গোড়া থেকেই এ দিন স্লোগান ছিল ‘গলি গলি মে শোর হ্যায়, মমতা ব্যানার্জি চোর হ্যায়’! বা ‘টুম্পাই, মদনের পরে কে? মুকুল, মমতা আবার কে’? মিছিলের শেষে মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়ানো হয়। সূর্যবাবু ছাড়াও রবীন দেব, সিপিআইয়ের মঞ্জুকুমার মজুমদার, পিডিএসের অনুরাধা পূততুণ্ড, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের পার্থ ঘোষ ছিলেন মিছিলের প্রথম সারিতে। কম সময়ের নোটিসে ডাকা হলেও ভিড় হয়েছিল ভালই।

সম্প্রতি বামেদের মিছিলে আগের থেকে সাড়া মিলছে বেশি। তার ব্যতিক্রিম হয়নি এ দিনও। কলেজের বহু ছাত্র-ছাত্রীকে হাঁটতে দেখে বাম নেতাদের ব্যাখ্যা, ছাত্র-যুবদের যে অংশ বামেদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল, তাদের একাংশ আবার উৎসাহ দেখাচ্ছে। পথ-চলতি অনেককেই এ দিন বলতে শোনা গিয়েছে, এরা তো ঠিক কথাই বলছে! মিছিল শেষ হওয়ার কথা ছিল মৌলালির রামলীলা ময়দানে। কিন্তু পুরসভার তরফে ওই মাঠেও সভা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। অগত্যা মৌলালি পেরিয়ে সিআইটি রোডের উপরেই মিছিল শেষ করতে হয়। সাইকেল ভ্যানের উপরে দাঁড়িয়ে সূর্যবাবু বক্তৃতা করেন।

সারদা নিয়ে তাঁর তোলা পুরনো প্রশ্ন ফের উত্থাপন করে সূর্যবাবু এ দিন বলেছেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত করছে। মুখ্যমন্ত্রী কী করে বলেন, এটা কেন্দ্রের চক্রান্ত?” তাঁদের মতে, আলিপুর আদালতের সামনে তৃণমূলের বিক্ষোভও দেশের সংবিধান ও আইন-কানুনের বিরুদ্ধে! বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, “মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের সম্মান নিয়ে বড় বড় কথা বলছেন। মন্ত্রীর গ্রেফতারের পরে উনিই অসাংবিধানিক আচরণ করে রাজ্যের সম্মান কলঙ্কিত করেছেন!” পিডিএসের রাজ্য সম্পাদক সমীর পূততুণ্ডও এ দিন বলেছেন, সারদার তদন্ত এবং আইনি প্রক্রিয়ার উপরে রাজ্য প্রশাসন বা দলীয় শক্তি ব্যবহার করে বাধা না দিয়ে তৃণমূলের উচিত, সুপ্রিম কোর্টের কাছে গিয়েই তাদের বক্তব্য জানানো। আর কেন্দ্রের কাছে সূর্যবাবুর দাবি, সারদা কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত কারও বিদেশে পালানো আটকাতে দেশের সব বিমানবন্দরকে সতর্ক করা দরকার।

madan mitra cbi arrest saradha scam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy