Advertisement
E-Paper

চন্দনের বাটি হাতে দাদার দেহ দেখল বোনেরা

ধান-দুব্বো তোলা হয়ে গিয়েছিল সাত সকালেই। পছন্দ করে কেনা হয়েছিল পাজামা-পাঞ্জাবিও।কিন্তু দাদাকে ভাইফোঁটা’টা আর দেওয়া হল না দুই বোনের।নিয়তি মুখোপাধ্যায় আর মালতি চক্রবর্তীশনিবার সকালে গুলিতে ঝাঁঝরা ভাঙরের বেঁওতা গ্রামের রমেশ ঘোষালের দুই বোন। বাপের বাড়ি আসার পথেই খবরটা শুনেছিলেন--তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে গুলিতে শেষ হয়ে গিয়েছে তাঁদের দাদা। বাড়িতে ঢুকে তাঁরা দেখলেন রক্তের দাগ। আগুনে খাক হয়ে যাওয়া দাদার দোকান, মোটরবাইক। পুড়ে যাওয়া বাড়ি আর সাদা কাপড়ে মোড়া দাদার রক্তাক্ত দেহ।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৮

ধান-দুব্বো তোলা হয়ে গিয়েছিল সাত সকালেই। পছন্দ করে কেনা হয়েছিল পাজামা-পাঞ্জাবিও।কিন্তু দাদাকে ভাইফোঁটা’টা আর দেওয়া হল না দুই বোনের।নিয়তি মুখোপাধ্যায় আর মালতি চক্রবর্তীশনিবার সকালে গুলিতে ঝাঁঝরা ভাঙরের বেঁওতা গ্রামের রমেশ ঘোষালের দুই বোন। বাপের বাড়ি আসার পথেই খবরটা শুনেছিলেন--তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে গুলিতে শেষ হয়ে গিয়েছে তাঁদের দাদা। বাড়িতে ঢুকে তাঁরা দেখলেন রক্তের দাগ। আগুনে খাক হয়ে যাওয়া দাদার দোকান, মোটরবাইক। পুড়ে যাওয়া বাড়ি আর সাদা কাপড়ে মোড়া দাদার রক্তাক্ত দেহ।

নিয়তির বাড়ি জয়নগরের দক্ষিণ বারাসতে। মালতি কুলতলির জালাবেড়িয়ার বাসিন্দা। বাপেরবাড়ি যাবেন বলে ব্যাগপত্র গুছিয়ে শনিবার সাতসকালে রওনা দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু শনিবার সেখানে আর তাঁদের বেশি ক্ষণ থাকা হয়নি। দাদা খুন হওয়ায় দিনভর কাটাতে হল লেদার কমপ্লেক্স থানায়। দিনের শেষে কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না দুই বোনই। কোনও রকমে তাঁরা বলেন, “কত আনন্দ নিয়ে আসছিলাম। ভেবেছিলাম হই-হুল্লোড় হবে। এমন একটা দিনে রাজনীতির জন্য যে দাদাকে বলি হতে হবে ভাবতেও পারছি না।”

বছর বিয়াল্লিশের রমেশ বাড়ির পাশেই একটি কাপড়ের দোকান চালাতেন। ছিলেন তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তাঁদের দাদা যে মানসিক ভাবে কিছুটা অস্থির ছিলেন, তা জানতেন নিয়তি এবং মালতি। এমনকী, বৃহস্পতিবার রাতে যে দাদার মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সে কথাও দুই বোনের অজানা নয়। তাই শুক্রবার রাতে দাদা ফোন করে তাঁদের তাড়াতাড়ি আসতে বলায় শনিবার সকালেই বেরিয়ে পড়েন দুই বোন।

প্রতি বছর ভাইফোঁটার দিনে দুই বোন ছাড়াও ছেলেমেয়েদের নিয়ে রমেশের বাড়িতে আসতেন তাঁর ভাইঝি, বাসন্তীর সরবেড়িয়ার বাসিন্দা টুম্পা মজুমদার। মিষ্টি, মাংস-ভাত, হই-হুল্লোড়ে কাটত দিন। শুক্রবার রাতেই টুম্পা চলে এসেছিলেন। কাকা রমেশের কথামতো তাঁর দোকান থেকে নিজের জন্য এবং দুই পিসির জন্য বেছে রেখেছিলেন ভাইফোঁটার শাড়িও। কিন্তু সে শাড়ি আর নেওয়া হয়নি।

এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের অনুগামীরা ওই বাড়িতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। রমেশের বুকে-পেটে চারটি গুলি করা হয়। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এর পরে হামলাকারীরা তাঁর দোকান, মোটরবাইকও জ্বালিয়ে দেয়। বাড়ির একাংশেও আগুন লাগানো হয়।

টুম্পা বলেন, “সকাল থেকেই কাকুকে তৈরি হওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছিলাম। তখন সবে স্নান করে কাকু জামা পরছিলেন বারান্দায়। আচমকা কয়েক জন এসে কাকুর ঘাড়ে ধাক্কা মারে। ছিটকে মাটিতে পড়ে যায় কাকু। তার পরে জোরে ফটাফট শব্দ। দু’হাতে পেট চেপে ধরে কাকু উপুড় হয়ে পড়ে যায়।” এর পরে ঘটনার কথা বলতে গিয়েও শিউরে উঠছিলেন টুম্পা। তিনি জানান, দুষ্কৃতীরা ঘরের জিনিসপত্র লন্ডভন্ড করে। আগুন লাগিয়ে চলে যায়।বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ ওই বাড়িতে এসে পৌঁছন মালতি-নিয়তিরা। ঘরে তখন কাঁদছেন টুম্পা, রমেশের স্ত্রী আশা, আর বৃ্দ্ধা মা। দুই বোনের কথায়, “কাকে কী জিজ্ঞাসা করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। পুলিশ আমাদের সামনেই দাদার দেহ তুলে নিয়ে গেল। চার দিকে তখন পোড়া গন্ধ।”

bhangar arabul tmc party clash
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy