Advertisement
E-Paper

জুটা-র বয়কটে নয়া জট সমাবর্তনে

সমাবর্তনে উপাচার্যের হাত থেকে তাঁরা যে শংসাপত্র নেবেন না, ছাত্রছাত্রীরা সেই বিষয়ে এককাট্টা। তাঁদের থেকেও এক ধাপ এগিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটা বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিয়েছে, তারা কোনও ভাবেই সমাবর্তনে যোগ দেবে না। শুধু তা-ই নয়, সমাবর্তনের আগের দিন বিকেল ৫টা থেকে ২৪ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিও আছে জুটা-র। অনশনের ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা চলছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৯

সমাবর্তনে উপাচার্যের হাত থেকে তাঁরা যে শংসাপত্র নেবেন না, ছাত্রছাত্রীরা সেই বিষয়ে এককাট্টা। তাঁদের থেকেও এক ধাপ এগিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটা বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিয়েছে, তারা কোনও ভাবেই সমাবর্তনে যোগ দেবে না। শুধু তা-ই নয়, সমাবর্তনের আগের দিন বিকেল ৫টা থেকে ২৪ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিও আছে জুটা-র। অনশনের ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা চলছে।

যাদবপুরের সমাবর্তনে প্রধান অতিথি কে হবেন, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টানাপড়েন চলেছে। ওই অনুষ্ঠান কোথায় হবে, অনেক টালবাহানার পরে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে আচার্য-রাজ্যপালকে। কিন্তু সমাবর্তন-জট কাটার বদলে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে জুটা অনুষ্ঠান বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়ায়। আগাম ঘোষণা করে কোনও শিক্ষক সংগঠনের সমাবর্তন বয়কট করার দৃষ্টান্ত কার্যত নজিরবিহীন বলে জানাচ্ছেন প্রবীণ শিক্ষাকর্তারা।

কী করতে চায় জুটা? ওই শিক্ষক সংগঠন এ দিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সমাবর্তন প্রক্রিয়ার সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকারা যুক্ত হবেন না। রীতি মেনে ২৪ ডিসেম্বর, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবসে সমাবর্তন হওয়ার কথা। তার আগের দিন বিকেল থেকে অবস্থান করবে জুটা। নিজেদের বক্তব্য জানাতে ১৭ ডিসেম্বর যাদবপুরের মোড়ে পথসভাও তারা। ‘যাদবপুর বাঁচাও’ স্লোগান তুলে উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর অপসারণের দাবিতেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত বলে জানান জুটা-র সদস্যেরা। সংগঠনের সভাপতি কেশব ভট্টাচার্য জানাচ্ছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে ১৮-২০ জন তাঁদের সংগঠনের সদস্য নন। অর্থাৎ সমাবর্তনে প্রায় কোনও শিক্ষককেই পাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়।

যাদবপুরের প্রাক্তন উপাচার্য অশোকনাথ বসু বলেন, “সাধারণত কোনও শিক্ষক সংগঠন এমন সিদ্ধান্ত নেয় না। যখন তা নেওয়া হচ্ছে, তখন বুঝতে হবে, শিক্ষকেরা বাধ্য হয়েই নিচ্ছেন।” প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য মালবিকা সরকারের বক্তব্য, শিক্ষক-শিক্ষিকারা সমাবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। তাই সমাবর্তনের আগে এই বিতর্কের অবসান হোক, সেটাই কাম্য।

তবে এমনটা যে হতে চলেছে, তার পূর্বাভাস ছিলই। ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ঘেরাও তোলার জন্য উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর ডাকে পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ুয়াদের উপরে পীড়ন চালানোর পরেই পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে। উপাচার্যের প্রতি বিমুখ হয়ে ওঠে পড়ুয়া ও শিক্ষক, দুই শিবিরই। সমাবর্তন নিয়ে জটিলতাও শুরু হয় তখন থেকেই। সমাবর্তনের স্থান নিয়ে জট কাটাতে হস্তক্ষেপ করেন আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। গত সপ্তাহে তিনি জানান, বরাবরের মতো ক্যাম্পাসেই সমাবর্তন হবে। একই সঙ্গে তিনি জানান, কেউ অনুষ্ঠান বয়কট করলে সেটা তাঁর ব্যাপার। এ দিন জুটা-র সিদ্ধান্ত জানার পরে অনেকটা একই প্রতিক্রিয়া শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, “জুটা একটি স্বাধীন সংগঠন। এই নিয়ে আমি কী বলব?” উপাচার্য এ ব্যাপারে কী ভাবছেন, তা জানার জন্য বারবার টেলিফোন করলেও তিনি কেটে দেন। এসএমএস করেও জবাব মেলেনি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, সমাবর্তন সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করার পিছনে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সক্রিয় ভূমিকা জরুরি। এত বড় অনুষ্ঠান শুধু আধিকারিক, শিক্ষাকর্মীদের দিয়ে উতরোনো কঠিন। তাই জুটা-র বয়কটের সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সমাবর্তন সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হওয়া নিয়েও সংশয় তৈরি হল বলে জানাচ্ছেন সেখানকার একাধিক কর্তা।

অভিজিৎবাবুর ইস্তফার দাবিতে কলরবমুখর ছাত্রছাত্রীরা সমাবর্তনে যাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। এই উপাচার্যের হাত থেকে তাঁরা শংসাপত্র নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। সমাবর্তনে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা কী হবে, সেই ব্যাপারে তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আগামী সপ্তাহে সেমেস্টার পরীক্ষার পরে। সমাবর্তনের মতো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক অনুষ্ঠানে পড়ুয়ারা যুক্ত না-হলে তা যে অনেকটাই নিষ্প্রভ হয়ে পড়বে, সেই ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়র অনেক কর্তাই একমত। তাঁরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক-শিক্ষিকারাও সমাবর্তন থেকে দূরে থাকলে উপাচার্যের প্রশাসনিক দক্ষতা আরও এক বার প্রশ্নের মুখে পড়বে।

সংগঠনের সভাপতি কেশববাবু এ দিন বলেন, “সমাবর্তনের প্রক্রিয়াতে আমরা তো যুক্ত হবোই না। যে-সব শিক্ষক-শিক্ষিকা জুটা-র সদস্য নন, তাঁদেরও এই অনুরোধ জানানো হবে।” জুটা সূত্রের খবর, সমাবর্তনের আগের ২৪ ঘণ্টা ক্যাম্পাসে অবস্থান ও অনশন কর্মসূচিও নেওয়া হতে পারে।

ছাত্রছাত্রীদের উপরে পুলিশি তাণ্ডবের প্রতিবাদে তো বটেই, এমনকী অন্যের গবেষণাপত্র নকলের অভিযোগেও অভিজিৎবাবুর ইস্তফা চায় জুটা। এ ব্যাপারে একাধিক বার রাজ্যপালের দ্বারস্থও হয়েছেন জুটা-র প্রতিনিধিরা। তাঁরা উপাচার্যকে এড়িয়ে চলছেন। সেই সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষোভ তো আছেই। সব মিলিয়ে সমাবর্তনে অশান্তির আশঙ্কায় ক্যাম্পাসের বাইরে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চান অভিজিৎবাবু। সরকার, আচার্যের কাছেও এ ব্যাপারে পরামর্শ চেয়ে দরবার করেন তিনি। সরকার জানিয়ে দেয়, এই বিষয়ে তাদের কোনও বক্তব্য নেই। আর রাজ্যপাল চেয়েছিলেন, সমাবর্তন কোথায় হবে, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষই। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়। শেষ পর্যন্ত আসরে নামতে হয় আচার্যকে। জুটা-র বয়কটের সিদ্ধান্তের জেরে নতুন যে-জট পাকাল, তা কী ভাবে কাটে, সেটাই দেখার।

juta jadavpur university convocation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy