মঙ্গলবার রাত তখন ৮টা।
ঠাকুরনগরে মতুয়াদের পীঠস্থান ঠাকুরবাড়ির সামনের রাস্তাঘাট কার্যত সুনসান। বাড়ির সামনে বসে দুই পুলিশকর্মী গল্পে মত্ত। ঘণ্টা দুয়েক আগেই এ বাড়ির ছেলে সুব্রত ঠাকুরের নাম আসন্ন বনগাঁ লোকসভার উপ-নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। কিন্তু তার জন্য কোনও উচ্ছ্বাস চোখে পড়ল না ঠাকুরবাড়ির সামনে। দেখা গেল না বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের।
বাড়ির ভিতরে অবশ্য মিষ্টির আয়োজন করেছিলেন সুব্রতর জেঠিমা মমতাবালা ঠাকুর। যিনি আসন্ন ভোটের ময়দানে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে সুব্রতর বিরুদ্ধে নামছেন। এ দিন রাতে যে-ই আসছেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে, তাঁকেই মিষ্টি খাওয়ান মমতাবালা। তাঁর অনুগামীদের দাবি, “লড়াই তো অনেক সহজ হয়ে গেল। মতুয়াদের মধ্যে সুব্রতর গ্রহণযোগ্যতা নেই। তা ছাড়া, বিজেপি-রও অনেকে ওঁকে মানতে পারছে না। তাই ও বিজেপি প্রার্থী হওয়ায় আমরা আনন্দিত। সে কারণে মিষ্টিমুখ করাচ্ছি।”
সুব্রত অবশ্য জানিয়েছেন, জেঠিমা-সহ বাড়ির বড়দের আশীর্বাদ নিয়েই তিনি ভোটে লড়তে চান। তাঁর কথায়, “জেঠিমার সঙ্গে ভোটের ময়দানে রাজনৈতিক লড়াই হবে। কোনও ব্যক্তিগত আক্রমণ সেখানে হবে না।” মমতাও দেওরের ছেলেকে আশীর্বাদ দেবেন বলে জানান।
সুব্রত যে প্রার্থী হতে পারেন, তা নিয়ে জল্পনাটা গাঢ় হয়েছিল গত ১৫ জানুয়ারি। যে দিন মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর তাঁর বড় ছেলে সুব্রতকে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন। তখন সুব্রত বলেছিলেন, “দুটো দিন অপেক্ষা করুন। কাদের সঙ্গে মতুয়াদের সমর্থন আছে তা দেখতে পাবেন। বাঁধটা ভাঙতে দিন।”
গত ১৫ জানুয়ারি মমতাবালাকে যখন তৃণমূূল প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন ঠাকুরবাড়ির সামনে ভক্ত-সমর্থকদের ভিড় জমেছিল। হইচই কম হয়নি। কিন্তু মঙ্গলবার সুব্রতকে বিজেপি প্রার্থী ঘোষণা করার পরেও ভিড় না হওয়া নিয়ে কয়েক জন মতুয়া-ভক্ত বলেন, ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের মধ্যে সাম্প্রতিক কোন্দল এবং ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে তাঁদের অনেকেই অসন্তুষ্ট।
দীর্ঘদিন লেখাপড়া ও কর্মসূত্রে বিদেশে কাটিয়ে সুব্রত বাড়ি ফেরেন ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে। ছ’মাস পর তিনিই হয়ে যান সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক। নিজের কাজের মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে মতুয়া ঠাকুরবাড়ির ‘মুখ’ও হয়ে ওঠেন কথাবার্তায় সাবলীল বছর পঁত্রিশের সুব্রত। কিন্তু জেঠিমাদের সঙ্গে বারবার পারিবারিক কোন্দলে তাঁর নাম জড়ায়। যা অনেক মতুয়া ভক্তই ভাল ভাবে নেননি।
এতদিন যে লড়াই ছিল পারিবারিক, এ বার তা আসতে চলেছে রাজনীতির ময়দানে। যে মতুয়া ভোট ব্যাঙ্ককে ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে পাখির চোখ করে একের পর এক নির্বাচন পেরিয়েছে তৃণমূল, সেই মতুয়া ভোটকেই বিজেপি হাতিয়ার করে লোকসভার উপ-নির্বাচনে জিততে চাইছে।
কে জেতে, এখন সেটাই দেখার।