Advertisement
E-Paper

জেলে মন্ত্রীকে সঙ্গ দিচ্ছেন ফেলুদা-ব্যোমকেশ

গোয়েন্দাদের চালে মাত হয়ে শ্রীঘরে যেতে হয়েছে। কিন্তু আলিপুর জেলের ওয়ার্ডেও দুই গোয়েন্দা তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী। শ্রী ব্যোমকেশ বক্সী এবং শ্রী প্রদোষচন্দ্র মিত্র। বাংলা সাহিত্যের দুই ডাকসাইটে গোয়েন্দার রুদ্ধশ্বাস কাহিনি পড়েই এখন অধিকাংশ সময় কাটাচ্ছেন ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৬

গোয়েন্দাদের চালে মাত হয়ে শ্রীঘরে যেতে হয়েছে। কিন্তু আলিপুর জেলের ওয়ার্ডেও দুই গোয়েন্দা তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী।

শ্রী ব্যোমকেশ বক্সী এবং শ্রী প্রদোষচন্দ্র মিত্র। বাংলা সাহিত্যের দুই ডাকসাইটে গোয়েন্দার রুদ্ধশ্বাস কাহিনি পড়েই এখন অধিকাংশ সময় কাটাচ্ছেন ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র।

আগের বার জেলে পা দিতে না দিতেই চোখে অন্ধকার দেখে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। ফেরার পর থেকে কিন্তু বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে মদনকে। প্রথম দু’দিন এ-দিক ও-দিক ঘুরে বেড়িয়েছেন, অন্য বন্দিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কতকটা যেন জেল পরিদর্শনের মেজাজেই ছিলেন মন্ত্রী।

কিন্তু গত দু’-এক দিন ধরে দেখা যাচ্ছে, সেই ‘রাজার’ মেজাজেও ভাটা। নিজের ছ’নম্বর ওয়ার্ড (মন্দির ওয়ার্ড) থেকে বড় একটা বেরোচ্ছেন না মদন। যদিও ওয়ার্ডের বাইরে থেকে তাঁকে দেখতে মাঝেমধ্যেই সহ-বন্দিদের উঁকিঝুঁকি। কিন্তু পাহারাওয়ালার অনুমতি ছাড়া ভেতরে ঢোকাই যাবে না। কাজেই মন্ত্রীকে ‘খুব কাছ থেকে দেখা’ সকলের বরাতে নেই।

সেই ‘দুর্লভ’ সুযোগটা যাঁরা পেয়েছেন, তাঁরাই খবর দিলেন ২০১৪-’১৫-র সন্ধিক্ষণে দিনভর ফেলু-ব্যোমকেশেই ডুবে মদন।

ফেলুদার মতো ভোরে উঠে যোগব্যায়ামের অভ্যেস তাঁর নেই। বরং বরাবরই দেরিতে ঘুম থেকে ওঠেন। জেলেও অন্যথা হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার, বছরের প্রথম দিনে সকাল ৭টায় জেলে ‘গুনতি’র সময়ে হাজিরা দিয়ে আবার ঘুম। উঠেছেন সাড়ে দশটা নাগাদ। চুমুক দিয়েছেন পছন্দের গ্রিন টি-তে, সঙ্গে বিস্কুট। একটু পরে পাউরুটি, কলা আর ডিমসেদ্ধ দিয়ে ব্রেকফাস্ট।

‘ডিভিশন ওয়ান’ বন্দি তিনি।

তাই ভাল খাবারের পাশাপাশি খাট-বিছানা, টেবিল-চেয়ার, বইপত্রও পাচ্ছেন। প্রাতরাশের পর টেবিল-চেয়ারে বসে প্রথমে খবরের কাগজ তুলে নিয়েছেন। ‘বেণীসংহার’-এ রয়েছে, ব্যোমকেশ প্রথমে কাগজের বিজ্ঞাপনগুলো পড়ে নিয়ে তার পর শুরু করতেন খবর পড়া। মন্ত্রীর কাগজ পড়ার পন্থাটা বোঝা যায়নি। তবে মন দিয়েই পড়েছেন।

কাগজ শেষ করে সেই টেবিলেই বসেছেন ব্যোমকেশের সঙ্গে। কারারক্ষীরা জানালেন, টেবিলের এক পাশে রাখা ছিল ‘ফেলুদা সমগ্র’ও। সত্যান্বেষীর কেয়াতলার বাড়ি থেকে মাঝেমধ্যে প্রদোষ মিত্তিরের রজনী সেন রোডের বাড়ির কলিং বেলেও আঙুল রেখেছেন মন্ত্রী।

জেল সূত্রের খবর, বাড়ি থেকেই ব্যোমকেশ ও ‘ফেলুদা সমগ্র’ দেওয়া হয়েছে মদনকে। জেলের এক অফিসার বলেন, “সাধারণত খুব বিতর্কিত বই না হলে আমরা পড়ার অনুমতি দিই। আমাদের লাইব্রেরি থেকেও বন্দিরা বই নিয়ে পড়তে পারেন। আর ব্যোমকেশ বা ‘ফেলুদা সমগ্র’ তো আটকানোর প্রশ্নই ওঠে না।”

তবে ওয়ার্ডের বাকি ১১ জন বন্দি ও রক্ষীদের ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেননি মন্ত্রী। দিনভর যাঁদের সঙ্গেই তাঁর দেখা হয়েছে, জেলের কর্মী-অফিসার, চিকিৎসক সকলকেই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলেছেন, ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’! বাড়ি থেকে আসা দুপুর ও রাতের খাবার খেয়েছেন। সেই খাবার মন্ত্রীকে দেওয়ার আগে রোজকার মতো পরীক্ষা করে নেওয়া হয়েছে। যদি কিছু মেশানো-টেশানো থাকে!

ঠিক গোয়েন্দা কাহিনির মতোই।

ওয়ার্ডের বাইরে চলছে আর এক কাহিনি। খোদ মন্ত্রী জেলের ‘অতিথি’। এই সুযোগে অনেকেই নাকি মদনের সঙ্গে দেখা করে নম্বর বাড়িয়ে নিতে চাইছেন। সেই তালিকায় বন্দি, রক্ষী, অফিসার সবাই রয়েছেন। তাপস মণ্ডল নামে বর্ধমানের

কালনা জেলে কর্মরত তৃণমূলের কারারক্ষী সংগঠনের এক সদস্য নাকি এই ক’দিন জেলের বাইরে কার্যত ‘ডিউটি’ দিয়েছেন। যদি ‘দাদা’র কিছু দরকার হয়।

নিরুপম খাঁড়া নামে শাসক দলের কারারক্ষী সংগঠনের একটু বড় গোছের এক নেতাও এ দিন এসেছিলেন মদনের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু প্রেসিডেন্সি জেলের কর্মী হওয়ায় আলিপুর জেলে ঢোকার অনুমতি পাননি। কিছুটা চেঁচামেচি করেন নিরুপম। শেষে বিফল মনোরথ হয়েই ফিরতি পথ ধরেন।

মন্ত্রী নিজেও খুব বেশি কারও সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন না বলে জানাচ্ছেন জেলের অফিসারেরা। এক অফিসার বলেন, “মন্ত্রী ওয়ার্ডের বাইরে কড়া পাহারা বসানোর অনুরোধ করেছিলেন। যে কেউ যখন-তখন তাঁর কাছে চলে যাচ্ছিল। তাই মন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়েও আমরা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছিলাম।”

১৯ ডিসেম্বর মন্ত্রীকে ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছিল আদালত। সেই হিসেবে ১ জানুয়ারিতেই তাঁর বিচার বিভাগীয় হেফাজতের মেয়াদ শেষ হল। আজ, শুক্রবার ফের আদালতে পেশ করা হবে মন্ত্রীকে। কাজেই আজ সকালটায় আর ফেলু-ব্যোমকেশের সঙ্গে তাঁর বেশিক্ষণ মোলাকাত হবে না, এ-ই যা!

saradha madan mitra jail feluda byomkesh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy