Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জলকর না নিতে অনড় রাজ্য, ভুগছে শহরতলি

বাসভাড়া বাড়বে না। সরকারের এই অনড় অবস্থানে কার্যত পঙ্গু হতে বসা পরিবহণ পরিষেবার মাসুল গুনছে শহর। এ বার জলকর নিয়ে অনেকটা একই ধরনের নীতির সৌজন্যে প্রায় তলানিতে ঠেকেছে শহর লাগোয়া এলাকার জল সরবরাহ ব্যবস্থা। ঠিক যে ভাবে পরিষেবা পেতে যাত্রীরা চাইলেও বাসভাড়া বাড়াতে রাজি নয় রাজ্য পরিবহণ দফতর, জলকর নিয়েও একই ধরনের অভিযোগের আঙুল উঠেছে কেএমডব্লিউএসএ-র বিরুদ্ধে।

সুপ্রিয় তরফদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২৭
Share: Save:

বাসভাড়া বাড়বে না। সরকারের এই অনড় অবস্থানে কার্যত পঙ্গু হতে বসা পরিবহণ পরিষেবার মাসুল গুনছে শহর। এ বার জলকর নিয়ে অনেকটা একই ধরনের নীতির সৌজন্যে প্রায় তলানিতে ঠেকেছে শহর লাগোয়া এলাকার জল সরবরাহ ব্যবস্থা। ঠিক যে ভাবে পরিষেবা পেতে যাত্রীরা চাইলেও বাসভাড়া বাড়াতে রাজি নয় রাজ্য পরিবহণ দফতর, জলকর নিয়েও একই ধরনের অভিযোগের আঙুল উঠেছে কেএমডব্লিউএসএ-র বিরুদ্ধে।

পরিষেবার হালে ক্ষোভ বাড়ছে গঙ্গার পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে শহর লাগোয়া এলাকাগুলির প্রায় ৬ লক্ষ বাসিন্দার। অথচ খোদ রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলছেন, “আমি কেএমডব্লিউএসএ-কে জল কর নিতে বারণ করেছি। জলের পরিবর্তে কখনওই মানুষের থেকে কর নেওয়া যাবে না।”

গঙ্গার দুই পাড়ে প্রায় ৬৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় জল সরবরাহ করে প্রান্তিক জল সরবরাহ প্রকল্প। যার দায়িত্বে কলকাতা মেট্রোপলিটন ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন অথরিটি বা কেএমডব্লিউএসএ। ভূগর্ভস্থ জল তুলে তা সংরক্ষণ ও পরিশুদ্ধ করার পরে পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হয় গঙ্গার পূর্ব পাড়ে নৈহাটি, হালিশহর, জগদ্দল, রাজারহাট, গোপালপুর, মহেশতলা পঞ্চায়েত এলাকার পাঁচুড় এবং গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে সাঁকরাইল, আন্দুল, বাঁকড়া, দুইল্যার প্রায় ৬ লক্ষ বাড়িতে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগে পরিষেবা ভাল ছিল। কিন্তু গত এক বছরে তা প্রায় তলানিতে ঠেকেছে।

কেএমডব্লিউএসএ সূত্রের খবর, এই প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক পরিবার থেকে দৈনিক ১ টাকা অর্থাৎ মাসে ৩০ টাকা জলকর নেওয়ার কথা। বিনিময়ে দিনে বরাদ্দ মাথাপিছু ৭০ লিটার জল। অর্থাৎ কোনও পরিবারে ৪ জন থাকলে দৈনিক ২৮০ লিটারের পরিবর্তে এক টাকা কর হিসেবে ধার্য হয়। অভিযোগ, এই কর না নেওয়াতেই রুগ্ণ হয়ে পড়ছে এই সংস্থা।

কেন নেওয়া হচ্ছে না জলকর?

সূত্রের খবর, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে বেশ কয়েক জনের এই কর বকেয়া পড়েছিল। প্রত্যেকের বাড়িতেই বিল পাঠায় এই সংস্থা। অভিযোগ, এর পরে ওই বছর অক্টোবর মাসে মন্ত্রী ওই সংস্থার এক অফিসারকে গ্রাহকদের কাছে জলকরের বিল পাঠানো বন্ধ করতে বলেন। তার পর থেকে আর বিল পাঠানো হয়নি।

কিন্তু আইনে জলকরের কথা উল্লেখ রয়েছে। তা বাতিল করতে গেলে আইন করে সেটা করা উচিত। মৌখিক ভাবে কি তা করা যায়?

কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “এটা সম্পূর্ণ সংবিধান বিরোধী কাজ। এ ধরনের কিছু করতে চাইলে সরকারকে বিধানসভায় আইন পাশ করাতে হবে। মৌখিক ভাবে কোনও মন্ত্রীই তা বলতে পারেন না।” আর প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, “সরকার স্পষ্ট করে বলুন তাঁরা কী চান। জল করের বিষয়ে কী তাঁদের নীতি? কর না নেওয়া হলে প্রকল্পই বা চলবে কী করে?”

উত্তরে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, “আমরা কোনও দিনও বলিনি জলকর নেওয়া হবে না। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে জলকর নেওয়া হয়। সাধারণ মানুষের থেকে কর নেওয়া হবে না। জানি এর ফলে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। ”

১৯৬৬-এ তৈরি হয় প্রান্তিক জল সরবরাহ প্রকল্প। বিভিন্ন পুরসভার মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী সংস্থা হিসেবেই এর আত্মপ্রকাশ। ১৯৬৬-এর আইনে কেএমডব্লিউএসএ-র তৃতীয় অধ্যায়ের ৯(১২) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, জল সরবরাহ পরিষেবা দেওয়ার বদলে কর নেওয়ার অধিকার আছে এই সংস্থার। ঠিক তেমনই সপ্তম অধ্যায়ের ৫৩ নম্বর ধারায় উল্লেখ রয়েছে: কর না পেলে জল সরবরাহের লাইন বিচ্ছিন্নও করতে পারে কেএমডব্লিউএসএ। প্রথমে ৫০ পয়সা জলকর নেওয়া হত। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ১৯৯৭ সালে তা বেড়ে হয় ১ টাকা। কিন্তু মন্ত্রীর নির্দেশে ২০১২ থেকে আর কর নেওয়া হয়নি। সংস্থা সূত্রের খবর, ২০১১-এ যেখানে বছরে ৫ কোটি টাকা কর আদায় হয়েছিল, সেখানে ২০১৩-এ করের অঙ্ক এসে দাঁড়ায় ১০ হাজারে। ফলে পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তো রয়েছেই। পাশাপাশি পাইপলাইনের রক্ষণাবেক্ষণ করা যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ ওই সংস্থার।

কিন্তু যাদের থেকে কর নেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন মন্ত্রী, সেই সাধারণ মানুষের কী মত?

প্রকল্পের গ্রাহক আন্দুলের বাসিন্দা অতনু সর্দার বলেন, “আমার থেকে ৬ মাস অন্তর ১৮০ টাকা করে জল কর নেওয়া হত। কিন্তু গত তিন বছর আর বিল আসে না। করও দিতে হয় না। কিন্তু পরিষেবাও আর আগের মতো ভাল নেই। ওই সামান্য কর দিতে কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু পরিষেবা ঠিক মতো দেওয়া উচিত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

water tax supriyo tarafdar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE