Advertisement
E-Paper

জলপাইগুড়ি ভেঙে নয়া জেলা আলিপুরদুয়ার

জলপাইগুড়ি জেলাকে দু’ভাগ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। একটি হবে জলপাইগুড়ি। অন্যটি আলিপুরদুয়ার। ফলে ২৫ জুন থেকে রাজ্যে মোট জেলার সংখ্যা বেড়ে হচ্ছে ২০। শুক্রবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে এ কথা জানান। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জলপাইগুড়ি সদর আর মালবাজার মহকুমা নিয়ে হবে জলপাইগুড়ি জেলা। সাবেক আলিপুরদুয়ার মহকুমা যাবে আলিপুরদুয়ার জেলায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৪ ০২:৪৭
জেলা ভাগের আনন্দে আবির মেখে উৎসব। শুক্রবার আলিপুরদুয়ারে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

জেলা ভাগের আনন্দে আবির মেখে উৎসব। শুক্রবার আলিপুরদুয়ারে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

জলপাইগুড়ি জেলাকে দু’ভাগ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। একটি হবে জলপাইগুড়ি। অন্যটি আলিপুরদুয়ার। ফলে ২৫ জুন থেকে রাজ্যে মোট জেলার সংখ্যা বেড়ে হচ্ছে ২০। শুক্রবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে এ কথা জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জলপাইগুড়ি সদর আর মালবাজার মহকুমা নিয়ে হবে জলপাইগুড়ি জেলা। সাবেক আলিপুরদুয়ার মহকুমা যাবে আলিপুরদুয়ার জেলায়। জেলা ভাগের পরে থানার বিন্যাস হবে। নতুন জেলা গঠন উপলক্ষে ২৪ তারিখ আলিপুরদুয়ার যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।

আলিপুরদুয়ারের মানুষ বহু দিন থেকেই আলাদা জেলা চাইছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, জলপাইগুড়ি জেলা দু’ভাগে ভাগ করা হলে সাধারণ মানুষের লাভ হবে এবং প্রশাসন জনগণের আরও কাছে যেতে পারবে।

বাম আমলে মেদিনীপুর জেলা ভাগের সময়েও প্রশাসন ও আমজনতার দূরত্ব আরও কমানোর যুক্তিই দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু অবিভক্ত মেদিনীপুরে তৃণমূলের ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠার কারণেই তড়িঘড়ি জেলা ভাগ করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। জলপাইগুড়ি জেলা ভাগের ক্ষেত্রে অবশ্য তড়িঘড়ি করার কোনও অভিযোগ নেই। কারণ, প্রায় সাড়ে তিন দশক ধরে তা নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু তৃণমূল ক্ষমতাসীন হওয়ার ৩ বছরের মধ্যে যে কাজটা হয়নি, তা লোকসভা ভোটের মাসখানেক পরে হওয়ায় বাম, বিজেপি শিবির থেকে অনেক প্রশ্ন তোলা হয়েছে। নানা সমালোচনাও হচ্ছে।

যেমন বাম শিবিরের দাবি, ঝাড়গ্রামকে আলাদা পুলিশ জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাকে পূর্ণাঙ্গ জেলা করার বিষয়টিও এগোচ্ছিল। বর্ধমান ভেঙে আসানসোল জেলা করার প্রক্রিয়াও আগেই শুরু হয়েছিল। রাজ্য জেলা পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে ঝাড়গ্রাম, আসানসোলের দাবি উপেক্ষিত হল কেন, সেই প্রশ্নেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের অভিযোগ তুলেছে বামেরা। বিজেপি শিবিরের অনেকে অভিযোগ করেছেন, আসানসোলে বাবুল সুপ্রিয় জেতায় সেখানে জেলা গঠনের বিষয়টি নিয়ে এগোতে চাইছে না রাজ্য।

তৃণমূলের অন্দরেরও খবর, লোকসভা ভোটে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে জয় এলেও বিজেপির ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলাটা শাসক দলের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষত, রাজ্যে ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে ৩ বছর কেটে গেলেও জেলা ঘোষণার কাজ না এগোনোয় আলিপুরদুয়ারে তৃণমূল বিরোধী সব দলই ভোট প্রচারে তা হাতিয়ার করেছিল। বিজেপি, কেপিপি ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, এই তিন দলের জোট বিষয়টি নিয়ে সরব হয়। জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে বিজেপি গত বারের চেয়ে অনেক বেশি ভোটও পায়। শুধু তা-ই নয়, লোকসভা ভোটে তৃণমূলের চেয়ে কালচিনি বিধানসভায় প্রায় ৩০ হাজার ও মাদারিহাটে ২৪ হাজার ভোটে এগিয়ে বিজেপি।

তৃণমূল সূত্রেই জানা গিয়েছে, ভোটের ফল প্রকাশের পরে দলের তরফে প্রদেশ নেতৃত্বকে পাঠানো রিপোর্টে বলা হয়, জেলা গঠনের প্রক্রিয়া ত্বরাণ্বিত না করলে আগামী দিনে বেকায়দায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জলপাইগুড়িকে দু’ভাগ করায় আলিপুরদুয়ার যে খুশি হবে, তা নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের সন্দেহ নেই। জলপাইগুড়ি জেলা কার্যালয় থেকে আলিপুরদুয়ার মহকুমার দূরত্ব প্রায় ১০১ কিলোমিটার। এই মহকুমার অন্তর্গত কুমারগ্রাম ব্লক জেলাসদর থেকে প্রায় ১৪৩ কিলোমিটার দূরে। এ ছাড়াও এই মহকুমার কালচিনি, মাদারিহাট, বীরপাড়া, আলিপুর এক ও দুই ব্লকগুলি জেলাসদর থেকে কম বেশি ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জেলাসদর থেকে প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলির এই বিরাট দূরত্ব এই এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে যথেষ্ট অসুবিধাজনক। এবং জেলা থেকে বিভিন্ন রকম পরিষেবা পাওয়ার জন্য তাঁদের বিস্তর সময় ও পথ অতিক্রম করতে হয়। সে ক্ষেত্রে নতুন জেলা আলিপুরদুয়ারের জেলা সদর অনেক কাছের হবে। তৃণমূল নেতৃত্বের ধারণা সঠিক প্রমাণ করে এ দিন জেলা ঘোষণার পরেই উৎসবে মাতেন আলিপুরদুয়ারের মানুষ।

কিন্তু উত্তরবঙ্গের বিভাগীয় সদর জলপাইগুড়ির আয়তন সঙ্কুচিত করলে সেখানে জনসমর্থন বিপরীত খাতে বইতে শুরু করবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছিল তৃণমূলের অন্দরে। আয়তন প্রায় অর্ধেক হয়ে জলপাইগুড়ি যে শুধু পর্যটনের বহু আকর্ষণীয় এলাকা হারাল তা-ই নয়, টান পড়ল তার পকেটেও। পর্যটন থেকে আয় কমার পাশাপাশি ৬৭টি বড় মাপের চা বাগানও চলে যাচ্ছে নতুন জেলায়। ফলে রাজস্ব আদায় কমবে জেলা প্রশাসনের। সেই ক্ষোভ কী ভাবে সামাল দেওয়া যাবে তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। প্রদেশ তৃণমূল সূত্রের খবর, সেই আলোচনায় জলপাইগুড়িতে মেডিক্যাল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়টি ত্বরাণ্বিত করার উপরে জোর দেওয়ার আর্জি জানান স্থানীয় নেতারা।

শাসক দলের প্রদেশ নেতারা তৎপর হতেই জেলা ভাগের প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। রাজ্যের পক্ষ থেকে বিচার বিভাগের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়। গত সোমবার সেই অনুমতি মিলেছে। তা পাওয়ার পরে পুলিশ-প্রশাসনের অফিস ও অফিসার নিয়োগের প্রাথমিক প্রক্রিয়া সারতে তিন দিন লেগে যায়। তার পরেই এ দিন বিধানসভায় জেলা ভাগের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

এই অবস্থায় জেলা ভাগের ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, আলিপুরদুয়ারে তৃণমূল জিতেছে, তবুও নানা ভয় তাড়া করছে বলেই তারা নতুন জেলা ঘোষণা করতে বাধ্য হল। কিন্তু প্রশাসনিক সুবিধার্থে বর্ধমানকে ভেঙে আসানসোলকে আলাদা জেলা করার কথা রয়েছে। সেখানে বিজেপি জিতেছে। আসানসোলের জেলা হওয়া হল না। তাঁর বক্তব্য, “তাই তৃণমূলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের প্রশ্ন উঠবেই।”

new district alipuduar jalpaiguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy