অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি বোধহয় একেই বলে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়, নদিয়ার ধুবুলিয়া এবং কোচবিহারে সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বে নতুন তিন মেডিক্যাল কলেজ গড়তে দু’টি বেসরকারি সংস্থাকে বাছাই করা হয়েছিল। স্বাস্থ্য দফতরকে তমকে দিয়ে তারা জয়েন্ট এন্ট্রান্স পাশ-দের জন্য ভাঙড়ে ৭২%, ধুবুলিয়ায় ৭০% ও কোচবিহারে ৫৪% আসন সংরক্ষিত রেখেছে। স্বাস্থ্যকর্তারা সেখানে ৩৩%-এর বেশি আসন প্রত্যাশাই করেনি।
স্বাস্থ্যদফতরের খুশি হওয়ার কারণ প্রধানত দু’টি। প্রথমত, জয়েন্টএন্ট্রান্স থেকে বেশি ছাত্র নেওয়া মানে মেধার ভিত্তিতে বেশি লোক নেওয়া। ফলে যাঁরা ডাক্তারি পাশ করে বার হবেন তাঁদের যোগ্যতা নিয়ে সংশয় থাকবে না।
দ্বিতীয়ত, অনেক দরিদ্র-মেধাবি ছাত্রছাত্রী পড়ার সুযোগ পাবে কারণ জয়েন্টএন্ট্রান্সের মাধ্যমে মেডিক্যালে সুযোগ পাওয়াদের ফি অনেকটা কম। এবং আশা করা যায়, এদের একটা বড় অংশ পাশ করার পর সরকারি হাসপাতালে কাজে যোগ দেবে। এতে ডাক্তারের অভাব খানিকটা হলেও মিটবে।
স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “বাম আমলে যাদবপুর কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয়েছিল। ১ টাকায় তাদের কলকাতার বুকে জমি দেওয়া সত্ত্বেও কেপিসি ৩৩%-র বেশি আসন জয়েন্টএন্ট্রান্স পাশ ছাত্রদের জন্য ছাড়েনি। সেখানে জেলার মেডিক্যাল কলেজে জয়েন্টএন্ট্রান্স পাশদের জন্য ৭০-৭২% আসন পাওয়াটা অভাবনীয়।”
কিন্তু, এই উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যেমন, ম্যানেজমেন্ট কোটা কমিয়ে তারা ব্যবসা করবে কী ভাবে, লাভ কমে গেলে ২ বছরের মধ্যে আদৌ মেডিক্যাল কলেজ বানানো শেষ করতে পারবে কিনা, সর্বোপরি এত শিক্ষক-চিকিত্সক জোগাড় করবে কী ভাবে ইত্যাদি। বামঘেঁষা সরকারি চিকিত্সকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সভাপতি গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “কলেজগুলিতে নাকি দেড়শো করে আসন থাকবে। এত শিক্ষক মিলবে কোথায়? স্বাস্থ্যদফতর তাদের কোনও শিক্ষককে ভিআরএস দেবে না ঠিক করেছে। বাকি শিক্ষকদের ইতিমধ্যে বাইরের বিভিন্ন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ তুলে নিয়েছে। ২ বছরে ওই তিনটি মেডিক্যালের একটিও চালু হবে কিনা সন্দেহ ।”
যদিও বাছাই হওয়া সংস্থাগুলির দাবি, কোনও সমস্যাই হবে না। ধুবুলিয়া ও কোচবিহার মেডিক্যালের দায়িত্ব পাওয়া সংস্থার তরফে অমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, “ম্যানেজমেন্ট কোটায় যতটুকু আসন থাকবে তার থেকে ভাল টাকাই আসবে। লোকসান হবে না। স্বাস্থ্যদফতর আমাদের চালু একটা হাসপাতাল দিয়ে দিচ্ছে। সেখানে ২ বছরে মেডিক্যাল কলেজ গড়তে সমস্যা হবে না। সেই হাসপাতালের ৭৫% লভ্যাংশ আমরা পাব।”
ভাঙড় মেডিক্যালের দায়িত্ব পাওয়া অন্য সংস্থার তরফে অসীম রায়ের বক্তব্য, “আমরা যখন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বানিয়েছিলাম তখনও শিক্ষকের সমস্যা হয়েছিল। আমরা কাটিয়ে উঠেছি, মেডিক্যালের ক্ষেত্রেও উঠব। আমরা বেশি মাইনে দেব, জেলায় ভাল থাকার জায়গা দেব। দরকার পড়লে হাসপাতাল থেকে রোজ কলকাতায় যাতায়াতের যানবাহন ফ্রি-তে দেব। শিক্ষক-চিকিত্সকেরা যোগ দেবেনই।”
পশ্চিমবঙ্গে শালবনি, বররা, সিউড়ি-র মতো একাধিক জায়গায় স্বাস্থ্যপরিষেবায় যুক্ত একটি সংস্থার কর্তা শতদল সাহা-র এ ব্যাপারে মত, এ রাজ্যে জেলা শহরগুলি যেহেতু এখনও তেমন উন্নত হয়ে ওঠেনি তাই সেখানে গিয়ে থাকার মতো চিকিত্সক পেতে মুশকিল হতে পারে। তবে বেসরকারি অংশীদারেরা যদি বেশি মাইনে দেয় এবং মেডিক্যাল কলেজ তৈরির পর সেখানে ওই শিক্ষক-ডাক্তারদের প্র্যাকটিসের ব্যবস্থা করে দেয় তা হলে অনেকে আগ্রহী হতে পারেন।
তবে একাধিক স্বাস্থ্যকর্তার আশঙ্কা, মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামো বিশেষ করে চিকিত্সক পেতে কালঘাম ছুটবে। এর জন্য ২ বছরের মধ্যে কলেজ তৈরি না-ও হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy