Advertisement
E-Paper

টাকা তুলেছে ইন্দ্রনীলের লোক, দাবি হুমায়ুনের

সারদার সুতোয় জড়িয়ে দলের হাঁসফাঁস অবস্থা। দীর্ঘ হচ্ছে ‘বিদ্রোহী’র সংখ্যাও। বিড়ম্বনার মাঝেই মাথা চাড়া দিয়েছে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ আকচাআকচি। তালিকায় নব্য সংযোজন রেজিনগরের হুমায়ুন কবীর। প্রাক্তন এই মন্ত্রীর অভিযোগের তির, বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী তথা দলের প্রাক্তন মুর্শিদাবাদ জেলা পর্যবেক্ষক ইন্দ্রনীল সেনের দিকে। অভিযোগ, জেলা পুলিশে হোমগার্ড নিয়োগ নিয়ে প্রার্থীদের কাছে ‘ডোনেশন’ আদায়ের ‘কারবার’ খুলে বসেছিলেন তিনি।

রাহুল রায়

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৯

সারদার সুতোয় জড়িয়ে দলের হাঁসফাঁস অবস্থা। দীর্ঘ হচ্ছে ‘বিদ্রোহী’র সংখ্যাও। বিড়ম্বনার মাঝেই মাথা চাড়া দিয়েছে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ আকচাআকচি। তালিকায় নব্য সংযোজন রেজিনগরের হুমায়ুন কবীর।

প্রাক্তন এই মন্ত্রীর অভিযোগের তির, বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী তথা দলের প্রাক্তন মুর্শিদাবাদ জেলা পর্যবেক্ষক ইন্দ্রনীল সেনের দিকে। অভিযোগ, জেলা পুলিশে হোমগার্ড নিয়োগ নিয়ে প্রার্থীদের কাছে ‘ডোনেশন’ আদায়ের ‘কারবার’ খুলে বসেছিলেন তিনি। হুমায়ুন দাবি করেছেন, চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রার্থীদের কাছ থেকে কয়েক লক্ষা টাকা তুলেছিলেন ইন্দ্রনীল ও তাঁর অনুগামীরা। সোমবার তিনি বলেন, “নিতান্ত দুঃস্থ, গরিব ঘরের ছেলেদেরও রেয়াত করা হয়নি। তাঁদের বলা হত, চাকরি পেতে হলে দলে ডোনেশন দিতে হবে। আর সে টাকা তুলতেন ইন্দ্রনীলের অনুগামীরা।” তাঁর দাবি, নেপথ্যে যা ‘পরিচালনা’ করতেন স্বয়ং ইন্দ্রনীল।

ইন্দ্রনীল অবশ্য ওই সব অভিযোগ উড়িয়ে বলছেন, “ওঁদের অভিযোগ নিয়ে একটা কথাই বলতে পারি, রাবিশ!”

তৃণমূলের নেতাদের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। রাজ্যে পালা বদলের মাস কয়েকের মধ্যেই ছোট-মেজ নেতাদের সঙ্গেই বেশ কয়েক জন শ্রমিক নেতা এমনকী এক বিধায়ক ও সাংসদের বিরুদ্ধেও তোলাবাজির আঙুল উঠেছিল। নিউটাউনে ‘সিন্ডিকেট রাজ’ বা উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার শাসন ও ভাঙড়ে মাটি মাফিয়াদের আড়ালে জুলুমবাজিতে উঠে এসেছিল দলের একাধিক নেতার নাম।

কিছু দিন আগে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল জুড়েও দলের শ্রমিক সংগঠনের তাবড় নেতাদের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন কলকারখানা থেকে তোলা আদায়ের খবরে মুখ পুড়েছিল দলের। বাধ্য হয়ে দুর্গাপুরের এক শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে দলের কাছে অভিযোগ করেছিলেন দুর্গাপুরের (পূর্ব) বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়। সুরাহা হয়নি। পূর্বস্থলীর (উত্তর) বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল দাসের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলে ধমক খেয়েছিলেন শীর্ষ নেতৃত্বের।

বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দিকেও পরোক্ষে সেই তোলাবাজিরই অভিযোগ এনেছিলেন সিউড়ির বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ। মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহভাজন অনুব্রতকে কটাক্ষ করে তিনি বলতে ছাড়েননি, “দলে দু’ধরনের কর্মী আছেন। এক দল ভাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ দেখিয়ে বছরের পর বছর পশ্চিমবঙ্গে রয়ে যাবেন।” দলীয় সভায় তিনিও সতর্ক করে দিয়েছিলেন, “তোলা তুলে নেতা হতে চাইবেন না।”

এ দিন হুমায়ুনের অভিযোগেও সেই সুর। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান মঞ্চে এখন বাঁধা জায়গা ইন্দ্রনীলের। আর দলনেত্রীর সঙ্গে তাঁর সখ্যকে ভাঙিয়েই তোলা আদায়ের কারবার চালাচ্ছেন তাঁর অনুগামীরা।” এ ব্যাপারে অন্তত তিন বার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েও ‘সাড়া মেলেনি’ বলে জানাচ্ছেন হুমায়ুন। তাঁর প্রশ্ন, “এ অবস্থায় দলের পুরনো কর্মীরা প্রশ্নের মুখে পড়ছেন, দলের শীর্ষ নেতারা তা ভেবে দেখার সময় পেলেন না?”

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর গড় বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে ইন্দ্রনীল সেনকে প্রার্থী করেছিলেন দলনেত্রী। নির্বাচনে ভরাডুবির পরেও তাঁকে মুর্শিদাবাদের দলীয় পর্যবেক্ষক করে রেখে দেওয়া হয়। তবে, তা নিয়ে জেলা নেতাদের মধ্যে ক্ষোভের পারদ ক্রমেই বাড়তে থাকলে গত ১৭ নভেম্বর ওই পদ থেকে ইন্দ্রনীলকে সরিয়ে নেন মমতা। অভিযোগ এর পরেও দলীয় কর্মসূচিতে পর্যবেক্ষক হিসেবেই নিজের পরিচয় দিয়ে চলেছেন ইন্দ্রনীল। শুধু তাই নয়, ওই জেলার এক তাবড় নেতার দাবি, “মুখ্যমন্ত্রীর নাম করে জেলাশাসক বা এসপিকেও চালনা করেন খোদ ইন্দ্রনীলই।” অভিযোগ, জেলার কোন ক্লাব সরকারি অনুদান পাবে তাও ঠিক করেছেন তিনি। জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, “এই অবস্থায় হোম গার্ড নিয়োগে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ইন্দ্রনীলই যে শেষ কথা হবে, তা বলাই বাহুল্য।”

গত কয়েক মাস ধরে বহরমপুরের ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানে জেলা পুলিশ হোম গার্ড নিয়োগের পরীক্ষা চলছিল। হুমায়ুন বলেন, “কয়েক হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে থেকে ৯ হাজার ৫৩৫ জনকে বাছাই করে মৌখিক পরীক্ষা হয়েছিল। তার থেকেই ৩১৫ জনের তালিকা তৈরির কথা। ইন্দ্রনীলের শাগরেদরা ওই পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকেই নগদে টাকা নিয়েছে। কিন্তু সে নিয়োগ আর হয়নি। উপরন্তু বদলি হয়ে গিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার।”

কেন থমকে গেল নিয়োগ? এ ব্যাপারে তৎকালীন এসপি হুমনায়ুন কবীর কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

তবে বড়ঞা এলাকার বাসিন্দা এক প্রার্থী বলছেন, “ইন্দ্রনীলবাবুর নাম করে এক লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম জেলার এক নেতাকে। চাকরি তো হল না তাই, টাকা ফেরত চাইতে গিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, কিস্তিতে ফিরিয়ে দেবেন।”

rejinagar humayun kabir indranil sen rahul roy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy