নির্মল মাজি
নির্মল আছেন নির্মলেই!
চিকিৎসকদের একাংশের ‘জ্যান্ত পুতুল’ পোড়ানোর হুমকি দেওয়ায় তৃণমূলের চিকিৎসক নেতা নির্মল মাজির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠছে বিভিন্ন স্তরে। তাঁর রেজিস্ট্রেশন বাতিলের দাবিও জানানো হয়েছে। সেই দাবির জবাবে নির্মলবাবু বুধবারেও হুঙ্কার ছেড়েছেন, “যা বলেছি, ঠিকই বলেছি। আবার বলব। আরও হাজার বার বলব।”
একাধিক সভায় গুলি করে উড়িয়ে দেওয়া, বঁটি দিয়ে নলি কাটা, কুড়ুল দিয়ে দু’টুকরো করার মতো উস্কানিমূলক বক্তৃতা দেওয়ায় তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। তাঁরই সুরে চিকিৎসকদের একাংশের ‘জ্যান্ত পুতুল’ পোড়ানোর হুমকি দেওয়ায় শাসক দলের চিকিৎসক নেতা নির্মলবাবুর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার দাবি উঠেছে। নির্মলবাবু বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিষদীয় সচিব (পদমর্যাদায় যা প্রতিমন্ত্রীর সমতুল)। তিনি রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতিও। এমন উস্কানিমূলক মন্তব্যের জন্য কেন নির্মলবাবুকে ওই সব পদ থেকে সরানো হবে না, উঠছে সেই প্রশ্নও।
চিকিৎসকদের সর্বভারতীয় সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা আইএমএ-র সভাপতি, মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া বা এমসিআই-এর সভাপতি এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে মঙ্গলবার চিঠি দিয়ে নির্মলবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সিপিএম প্রভাবিত চিকিৎসক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টরস (এএইচএসডি)। সেই সঙ্গে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে চিঠি লিখে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার আর্জি জানিয়েছে ওই সংগঠন। তাদের বক্তব্য, গত ২২ অগস্ট নির্মলবাবু উস্কানিমূলক যে-বক্তব্য পেশ করেছিলেন, তার পরে অনেক চিকিৎসকই বাড়ির বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন। যে-কোনও মুহূর্তে হামলার আশঙ্কা করছেন তাঁদের অনেকে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য ওই চিঠি হাতে পাননি বলে জানান।
সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের এক সভায় জাপানি এনসেফ্যালাইটিস সংক্রান্ত পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেছিলেন এএইচএসডি-র নেতারা। মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রকাশ্য সমালোচনা করেছিলেন বক্তাদের কেউ কেউ। ওই মারণ রোগের প্রকোপ সংক্রান্ত তথ্য গোপন করার অভিযোগে কয়েক জন স্বাস্থ্যকর্তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। এই ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সরব হন ওই চিকিৎসকেরা।
তৃণমূলপন্থী চিকিৎসকেরা তার পরেই পাল্টা সভা ডাকেন। সেখানে উত্তরবঙ্গে সাসপেন্ড হওয়া স্বাস্থ্য আধিকারিকদের লক্ষ করে নির্মলবাবু বলেছিলেন, “যারা কাজ করে না, তাদের কুশপুতুল পুড়বে নাকি জ্যান্ত পুতুল পুড়বে, তা জানা নেই।” মানুষ ওই চিকিৎসকদের ‘রাস্তায় দাঁড় করিয়ে জামাপ্যান্ট খুলে নেবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এএইচএসডি-র সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ চক্রবর্তীর বক্তব্য, নির্মল মাজি যা বলেছেন, সেটা স্পষ্টতই ভীতিপ্রদর্শন এবং প্রাণনাশের হুমকি। নির্মলবাবু যে-হেতু আইএমএ এবং রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের শীর্ষ স্তরে রয়েছেন, তাই সেখানে অভিযোগ জানিয়ে লাভ নেই। “সেই জন্যই আমরা ওই দুই প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বারস্থ হয়েছি,” বলেছেন সত্যজিৎবাবু।
যাঁর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, সেই নির্মলবাবু অবশ্য নিজের অবস্থানে অনড়। এ দিন তিনি বলেন, “এই প্রথম নয়। এর আগেও ওই সংগঠন আমার নামে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করেছিল। কোনও ফল হয়নি। তাই এই বিষয়টাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। যা বলেছি, ঠিকই বলেছি।”
দফায় দফায় উস্কানিমূলক উক্তির পরে তোলপাড় শুরু হওয়ায় সাংসদ তাপসবাবু লিখিত ভাবে ক্ষমা চেয়েছিলেন। কিন্তু নির্মলবাবু সে-পথের ধার ধারছেন না। বারবার প্ররোচনামূলক আস্ফালনের জন্য কেন তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন শিবিরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy