Advertisement
E-Paper

দেওয়ালের ক্যানভাসে কলরব জারি যাদবপুরে

রাতারাতি ক্যানভাসের চেহারা নিয়েছে রংচটে যাওয়া, ধূসর দেওয়াল। চারকোল আর রং তুলির আঁচড়ে সেখানে এখনও কলরবের ডাক! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর পদত্যাগের দাবিতে অনড় ছাত্রছাত্রীদের মতে, অস্ত্রে নয়, তাঁরা প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন গান-কবিতা-ছবিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্মহল-অন্দরমহল মিলিয়ে ইতিমধ্যেই কয়েকশো ছবি এঁকে ফেলেছেন পড়ুয়ারা। স্প্রে-পেন্টে কোথাও স্লোগানের দৃশ্যকল্প, কোথাও আবার চারকোলে কাল মেঘের অশনি সঙ্কেত।

ঊষসী মুখোপাধ্যায় চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১১

রাতারাতি ক্যানভাসের চেহারা নিয়েছে রংচটে যাওয়া, ধূসর দেওয়াল। চারকোল আর রং তুলির আঁচড়ে সেখানে এখনও কলরবের ডাক!

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর পদত্যাগের দাবিতে অনড় ছাত্রছাত্রীদের মতে, অস্ত্রে নয়, তাঁরা প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন গান-কবিতা-ছবিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্মহল-অন্দরমহল মিলিয়ে ইতিমধ্যেই কয়েকশো ছবি এঁকে ফেলেছেন পড়ুয়ারা। স্প্রে-পেন্টে কোথাও স্লোগানের দৃশ্যকল্প, কোথাও আবার চারকোলে কাল মেঘের অশনি সঙ্কেত। কোথাও মুখ-ঢাকা বিদ্রোহীর হাতে লাল গোলাপ, কোথাও আবার সাদা দেওয়াল জুড়ে ছাত্রদের উপর পুলিশি নির্যাতনের ছবি। তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর কথায়, “রাতের অন্ধকারে আলো নিভিয়ে নির্বিচারে ছাত্র পিটিয়েছে পুলিশ। অভিভাবক-সম উপাচার্যও আমাদের পাশে দাঁড়াননি। ঘটনাটা মেনে নিতে পারিনি। রাজনীতি করি না। তাই ছবি এঁকেই প্রতিবাদ।”

শুধু ছবিতেই নয়, ক্যাম্পাসে সকাল-বিকেল প্রতিবাদ চলছে গানের সুরেও। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের আনাচ কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে পড়শি দেশের গায়কের এক গানের সুর। যে গানের দৌলতে যাদবপুরের এই আন্দোলন কলরবের অবয়ব পেয়েছে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক ছাত্র বললেন, “অনেকে জানেনই না যে, যাদবপুরের আন্দোলনের নামটা আসলে বাংলাদেশের গায়ক অর্ণবের একটা গানের লাইন। কে, কী ভাবে এই গানটা আমাদের লড়াইয়ের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিল জানি না। কিন্তু যেই করে থাকুন, তাঁকে ধন্যবাদ।” জিওলজি বিভাগের এক প্রাক্তন ছাত্রের কথায়, “রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে হোক কলরব গাইলেই যাদবপুরের অনুষঙ্গ এসে পড়ে। গান গাইছিল বলে অষ্টমীর রাতে ম্যাডক্স স্কোয়ার থেকে ছাত্রদের বেরিয়ে যেতে বলা হল। এর পর কী ছবিও আঁকতে দেবে না?”

বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এসে গিটার, বেহালা, বাঁশির সুরে নিত্যনতুন গান বাঁধছেন পড়ুয়ারা। কখনও সত্যজিৎ রায়ের সুরের অনুকরণে উপাচার্যের ইস্তফার আর্জি, কখনও আবার যাদবপুর-কাণ্ডের প্রতিবাদে কবীর সুমন বা রূপম ইসলামের বাঁধা গানের অনুশীলন। কানে আসছে সব কিছুই।

ছবি আঁকাও চলছে সমান তালে। ইংরেজি বিভাগের এক স্নাতকোত্তর ছাত্র মনে করিয়ে দিলেন, “রং দে বসন্তী ছবির আসলাম খান চরিত্রটার কথা মনে পড়ে? দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে স্প্রে-পেন্টে ভগৎ সিংহের স্লোগান লিখছিল ছেলেটা। আমরাও তো সেটাই করছি। ছবি আঁকছি, আমাদের কথা বলছি।”

ছাত্রছাত্রীদের ‘ওয়াল-আর্টে’র প্রশংসা করে বাংলা বিভাগের এক গবেষক বলেন, “অন্যায়, অবিচারের সময় এই সব গান, কবিতা আর ছবিগুলোই উঠে আসে। কলরব তো এ ভাবেই হয়। সম্বল তো ওইটুকুই।”

উপাচার্যের পক্ষ নিয়ে অনেকে অবশ্য বলছেন, দেওয়াল নোংরা করা ছাড়া আর কিছুই করছেন না পড়ুয়ারা। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের প্রত্যুত্তর, “আসলে তো নোংরা দেওয়ালগুলোতে রং চড়াচ্ছি আমরা। কথায় বলে, দেওয়ালেরও কান আছে। আমাদের কথায় উপাচার্য তো কর্ণপাত করছেন না, এ বার তবে দেওয়ালেই কান পাতুন!”

jadavpur university usashi mukhopadhyay chowdhury vice chancellor abhijit chakrabarty
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy