Advertisement
E-Paper

দেখা নেই মুকুলের, ফুড-পাথ জুড়ে দীর্ঘশ্বাস

‘দাদা’ এলেন না সিবিআইয়ের দোরে। পায়ে পায়ে এলেন না তাই অনুগত ভাইয়ের দল। ‘ওঁদের’ তাই মাথায় হাত। এত ডিমসেদ্ধ, এত মিষ্টি, এত ঘুগনি কে খাবে এ বার? মতি নন্দীর ‘স্টপার’ মনে পড়ে? ‘যুগের যাত্রী’ জিতছেই ধরে নিয়ে পনেরো কেজি রান্না মাংসের হাঁড়ি সঙ্গে করে খেলা দেখতে এসেছিল এক সমর্থক। শেষ মুহূর্তে কমল গুহর শট ঢুকল যাত্রীর গোলে। নিথর গ্যালারি থেকে একটি ক্ষীণ কণ্ঠ শোনা গেল, “অত মাংস কে খাবে এ বার?”

কাজল গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২০

‘দাদা’ এলেন না সিবিআইয়ের দোরে। পায়ে পায়ে এলেন না তাই অনুগত ভাইয়ের দল।

‘ওঁদের’ তাই মাথায় হাত। এত ডিমসেদ্ধ, এত মিষ্টি, এত ঘুগনি কে খাবে এ বার?

মতি নন্দীর ‘স্টপার’ মনে পড়ে? ‘যুগের যাত্রী’ জিতছেই ধরে নিয়ে পনেরো কেজি রান্না মাংসের হাঁড়ি সঙ্গে করে খেলা দেখতে এসেছিল এক সমর্থক। শেষ মুহূর্তে কমল গুহর শট ঢুকল যাত্রীর গোলে। নিথর গ্যালারি থেকে একটি ক্ষীণ কণ্ঠ শোনা গেল, “অত মাংস কে খাবে এ বার?”

বৃহস্পতিবার অবিকল যেন সেই হাহাকার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের সামনের ফুটপাথের দোকানে-দোকানে। এক কথায় ‘ফুড-পাথ’। রকমারি খাবারের দোকান সব। ঘুগনি, ডিম-রুটি, ভাত-ডাল-তরকারি, চাউমিন যা চাইবেন পাবেন। সারদা তদন্ত তেড়েফুঁড়ে শুরু হওয়ার পর এই দোকানিদের বলতে গেলে কপাল খুলে গিয়েছে। ইডি, সিবিআই দু’টো দফতরই এই সিজিও কমপ্লেক্সে। ‘রোজকার অতিথি’ সাংবাদিকেরা তো আছেনই। স্রেফ উৎসাহের টানেও অনেকে উঁকিঝুঁকি মারতে হাজির হচ্ছেন। আর কেউকেটা কারও ডাক পড়লে তো হয়েই গেল। ভিড় যত বাড়বে, খিদেও তত বাড়বে! দোকানদারদেরও পৌষমাস।

কিন্তু পৌষ সংক্রান্তির দিনটায় তাঁদের এক রকম পথেই বসিয়ে দিয়ে গেলেন মুকুল রায়! সিবিআইয়ের ডাক পাওয়ার পরেই মুকুল জানিয়েছিলেন, সোম-মঙ্গল তিনি দিল্লিতে আছেন। কলকাতায় ফিরে দেখা করবেন সিবিআই দফতরে। বুধবার দুপুরে তাঁর শহরে ফেরার খবর পেয়েই সিজিও কমপ্লেক্সের ফুটপাথের দোকানিরা নড়েচড়ে বসেন। ধরে নিয়েছিলেন (তার জন্য গুজবও কিছুটা দায়ী), বৃহস্পতিবারই হয়তো সিবিআই দফতরে দেখা যাবে তৃণমূল নেতাকে। কিন্তু রাতেই সিবিআইকে চিঠি পাঠিয়ে পনেরো দিন সময় চান মুকুল। গোয়েন্দারা তাঁকে আগামী সপ্তাহের মধ্যে দেখা করতে বলেন। মোদ্দা কথা, মুকুল যে এ দিন আসছেন না এই ‘সর্বশেষ’ খবরটা যতক্ষণে এসেছে, তত ক্ষণে বিপুল খাবারের আয়োজন সম্পূর্ণ। কেউ আবার খবর পেয়েছেন এ দিন দোকানে রওনা হওয়ার ঠিক আগে, কেউ আসতে-আসতে!

দীর্ঘশ্বাসের একটা কোলাজ তুলে দেওয়া যাক। ১) ঘুগনি বিক্রেতা: “অন্য দিন যা বিক্রি করি, আজ তার ডবল বানিয়ে এনেছিলাম। ভেবেছিলাম, সবটাই বিক্রি হবে যাবে। কিন্তু রাতে যে মুকুলবাবু আসবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন, তা জানতাম না।” ২) ডিমসেদ্ধ বিক্রেতা: “ভোরবেলায় এসে বাড়তি ডিম সেদ্ধ করে রেখেছিলাম। পরে যখন জানতে পারলাম মুকুলবাবু আসবেন না, তখন আর কিছু করার ছিল না।” ৩) মিষ্টি বিক্রেতা: “রাতেই বাড়তি মিষ্টি কিনেছিলাম। ভেবেছিলাম অনেক লোকজন আসবে। ভোরে ট্রেনে আসার সময়ে খবরের কাগজে পড়লাম, আজ আর কেউ আসছে-টাসছে না।”

আসলে ওই যে, হাহাকারটা পুরোপুরি মুকুলবাবুর জন্য তো নয়! দোকানিদের অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, ইডি বা সিবিআইয়ের জেরার মুখে বসতে আসার সময়ে ‘দাদারা’ সঙ্গে করে দু’চাকা-চার চাকায় বিস্তর ভাইদেরও নিয়ে আসেন। পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রই হাতে-গরম প্রমাণ। ভিড় উজিয়ে তিনি এলেন, গ্রেফতার হলেন, তার পর টানা কয়েক দিন অনুগতরা বাইরে হত্যে দিলেন। এরও অনেক আগে আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সঙ্গী-সাথী নিয়ে সিজিও কমপ্লেক্সের বাইরে বসে মাইক হাতে গান শুনিয়ে গিয়েছিলেন ‘খাঁচার পাখি ছোলা খায় / মোদী মোদী গান গায়...।’ খাঁচার পাখি সত্যিই কী খেয়েছিল জানা যায়নি, তবে সিজিও কমপ্লেক্সের সামনের ভিড় চেটেপুটে ফুটপাথের খাবার বিলক্ষণ খেয়েছিল। এমনও হয়েছে, ভিড়ের খাবার জোগাতে গিয়ে দোকানিদের ‘ভাঁড়ারে’ টান পড়েছে। এ দিন তাই অনেকে বাড়তি পাঁচশো-হাজার টাকা লাগিয়েছিলেন। কিন্তু সে আশা হল দুরাশা।

এই ব্যবসায়ীদের মধ্যেও দিব্যি বোঝাপড়া। যিনি ফল বিক্রি করেন, তিনি অন্য কিছু বেচেন না। যিনি ডিম-রুটি বিক্রি করেন, তিনি ডাল-ভাত রাঁধেন না। কাষ্ঠ হেসে এক জন বললেন, “এই বোঝাপড়াটা থাকায় প্রত্যেকেরই মোটামুটি বিক্রিবাটা হয়। কিন্তু এ দিনটা তো...।” কথা শেষ করলেন না ভদ্রলোক। তবে তাঁর এক সর্তীর্থ আশাবাদী, “ক’দিন আর না এসে পারবেন? আসতে তো হবেই! শুধু মুকুলবাবু কেন, অনেকের কথাই তো খবরে শুনছি। তখন সব ক্ষতি উসুল হয়ে যাবে।”

‘আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ!’

mukul roy saradha scam CBI kajal gupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy