Advertisement
E-Paper

দূরে কাজে যেতে চান না ‘মুক্ত’ দীপ

রাতটা প্রায় জেগেই কাটিয়েছে ইন্দাসের দিবাকরবাটি। হাতে ফুল-মালা, মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে। ১২০ দিন জঙ্গিদের কবলে থাকার পরে গ্রামের ছেলে দীপকে এক ঝলক দেখার জন্য আলোর মালায় সাজানো রাস্তার দু’ধারে সোমবারের রাতে এলাকার মানুষ ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৪ ০৩:০৫
ছেলেকে আঁকড়ে। সোমবার রাতে বাঁকুড়ার দিবাকরবাটিতে। ছবি: শুভ্র মিত্র।

ছেলেকে আঁকড়ে। সোমবার রাতে বাঁকুড়ার দিবাকরবাটিতে। ছবি: শুভ্র মিত্র।

রাতটা প্রায় জেগেই কাটিয়েছে ইন্দাসের দিবাকরবাটি। হাতে ফুল-মালা, মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে। ১২০ দিন জঙ্গিদের কবলে থাকার পরে গ্রামের ছেলে দীপকে এক ঝলক দেখার জন্য আলোর মালায় সাজানো রাস্তার দু’ধারে সোমবারের রাতে এলাকার মানুষ ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন।

সোমবার রাতেই কলকাতা বিমানবন্দের যখন নেমেছিলেন দীপ মণ্ডল, তখন তাঁকে ‘বরণ’ করে নেওয়ার জন্য সেখানে হাজির দিবাকরবাটির শতাধিক বাসিন্দা। মাঝরাতে দীপকে নিয়ে বাস যখন দিবাকরবাটিতে পৌঁছয়, তখন সেখানেও হাজির কয়েকশো পুরুষ-মহিলা। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলাকার ছেলেকে এক ঝলক দেখার জন্য। বাস থেকে নামতেই দীপকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন মা অঞ্জনা মণ্ডল, গত চার মাসে ছেলের চিন্তায় যিনি রাতের পর রাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি। ‘আর কেঁদো না মা! আমি তো ফিরে এসেছি’ বলেই মাকে প্রণাম করলেন দীপ।

ভিড়ের মধ্যে তখন আক্ষরিক অর্থেই হুটোপুটি। তারই মধ্যে বাজি ফাটানো শুরু হয়েছে, আবির উড়ছে। বাড়িতে ঢোকার আগে প্রদীপ জ্বালিয়ে, দই-মিষ্টি খাইয়ে দীপকে বরণ করে নিলেন পাড়ার বয়স্ক মহিলারা। মণ্ডলবাড়িতে তখন পা ফেলারও জায়গা নেই। আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব থেকে প্রতিবেশীরা ঘিরে ধরেছেন দীপকে। বড়দের আশীর্বাদের হাত মাথা ছুঁয়ে যাচ্ছে বছর চব্বিশের যুবকের। বাড়িতেই তুমুুল হাততালির মধ্যে কেক কাটা হল। দীপের মুখে এক টুকরো কেক তুলে দিলেন তাঁর দিদিমা।

ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ২টো। বহু মাস পরে বাড়ির বিছানায় যখন শুতে গেলেন দীপ, তখন সাড়ে ৪টে বেজে গিয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই ফের দিবাকরবাটির মণ্ডলবাড়ির সামনে ভিড় জমাতে শুরু করেন এলাকার বাসিন্দারা। জঙ্গিরা কেন তাঁকে ধরেছিল, কী ভাবে রেখেছিল, কোথায় কোথায় নিয়ে গিয়েছিলসব প্রশ্নের জবাব হাসিমুখেই দিয়েছেন ওই যুবক। দুপুরে মায়ের হাতে মুগের ডাল, মাছের ঝাল, বেগুন ভাজা, বাঁধাকপির তরকারি খেয়ে বেলা ১১টা নাগাদ দীপ রওনা দেন নবান্নের উদ্দেশে। সঙ্গে তাঁর বাবা নিখিল মণ্ডল, পিসতুতো দাদা অর্ণব মণ্ডল, সম্পর্কে কাকা রাজীব কুণ্ডু ও বন্ধু বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য।

এ দিন নবান্নে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মিষ্টির প্যাকেট হাতে দেখা করেন দীপ, অর্ণব ও নিখিলবাবু। অপহরণের পর থেকে জঙ্গিদের ঘাঁটিতে কী ভাবে তাঁর দিন কেটেছে, কী ভাবে প্রতি মুহূর্তে তিনি মৃত্যুর আতঙ্কে থাকতেন, সে কথা স্বরাষ্ট্রসচিবকে জানিয়েছেন দীপ। পরে সাংবাদিকদের কাছে অর্ণব বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও রাজ্যের পুলিশের কর্তারা ভাইকে উদ্ধারের জন্য মিজোরাম সরকার ও পুলিশের সঙ্গে অনবরত যোগাযোগ রেখেছেন। তাঁদের সবার জন্যই ভাইকে ফিরে পেয়েছি। তাই রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছিলাম।” দীপ জানান, আগে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের কাছে তাঁর চাকরির জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। এ দিন অবশ্য তাঁরা এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রসচিবকে কিছু জানাননি।

চার মাস ‘বন্দি জীবন’ কাটিয়ে পরিবার ছেড়ে আপাতত আর দূরে কাজ করতে যেতে চান না দীপ। তাঁর কথায়, “এখন আমি পরিবারের সঙ্গে থাকতে চাই। আমার বিশ্রাম দরকার।” ছেলেকে দূরে যেতে দিতে নারাজ অঞ্জনাদেবীও। এ দিন তিনি বলেন, “কত দিন যে ওর পথ চেয়ে বসেছিলাম। ও ফিরে আসায় আমার কতটা আনন্দ হচ্ছে, বলে বোঝাতে পারব না। এখন আর ওকে কাছছাড়া করছি না।” নিশ্চিন্ত দীপের দিদিমা মীনারানি কুণ্ডুও। নাতিকে ফিরে পেতে গত চার মাস ধরে অসংখ্য ঠাকুরের কাছে মানত করেছেন তিনি। এ দিনও নৈবদ্য সাজিয়ে মন্দিরে পুজো দিতে যাওয়ার পথে ওই বৃদ্ধা বললেন, “ঠাকুর মুখ তুলে চেয়েছেন। দীপকে ফিরে পেয়েছি।”

deep indas dibakarbati
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy