Advertisement
E-Paper

দক্ষিণের কড়চা

নিজের আঁকা নিয়ে তাঁর কথা ছিল, ‘আমি কি আর আঁকি, আঁচড়-মাচড় কাটি।’ কবির সেই আঁচড়ই দাগ ফেলে দিল সময়ের শরীরে। কবির হাতে বাঁশ বেণু হয়ে বেজে ওঠে, তাঁর তুলি জন্ম দিল নতুন চিত্রভাষার। যা তাঁর একান্তই নিজস্ব, অননুকরণীয়। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবিই নয়। কবি এবং দেশে-বিদেশে তাঁর সমসাময়িক চিত্রকরদের আঁকা ৩২টি প্রতিকৃতি নিয়ে শান্তিনিকেতনে নন্দন গ্যালারিতে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী। নাম ‘এগজিবিশন অব পোর্ট্রেটস’। তার মধ্যে রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবি তিনটি।

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০৩
বাঁ দিকের ছবিটি রবীন্দ্রনাথের আঁকা। উপরে এলিজাবেথ ব্রুনারের আঁকা কবির প্রতিকৃতি।

বাঁ দিকের ছবিটি রবীন্দ্রনাথের আঁকা। উপরে এলিজাবেথ ব্রুনারের আঁকা কবির প্রতিকৃতি।

নন্দনে প্রদর্শনী

মুখের আঁকিবুকি

নিজের আঁকা নিয়ে তাঁর কথা ছিল, ‘আমি কি আর আঁকি, আঁচড়-মাচড় কাটি।’

কবির সেই আঁচড়ই দাগ ফেলে দিল সময়ের শরীরে। কবির হাতে বাঁশ বেণু হয়ে বেজে ওঠে, তাঁর তুলি জন্ম দিল নতুন চিত্রভাষার। যা তাঁর একান্তই নিজস্ব, অননুকরণীয়।

কিন্তু রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবিই নয়। কবি এবং দেশে-বিদেশে তাঁর সমসাময়িক চিত্রকরদের আঁকা ৩২টি প্রতিকৃতি নিয়ে শান্তিনিকেতনে নন্দন গ্যালারিতে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী। নাম ‘এগজিবিশন অব পোর্ট্রেটস’। তার মধ্যে রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবি তিনটি। ওয়াটারপ্রুফ কালিতে কাগজে আঁকা দু’টি ছবিতে নারীর মুখাবয়ব, একটির বিষয় নারী প্রতিমা।

এ বারের ছবিগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি এই প্রথম প্রদর্শিত হল। যার একটি মুকুল দে-র ছাপচিত্রে গুরু অবন ঠাকুরের ছবি। ১৯৩১-এ শান্তিনিকেতনে বোর্ডের উপরে তেল রঙে এলিজাবেথ ব্রুনারের আঁকা রবীন্দ্রনাথও এই প্রথম বার বাইরে এল— জানালেন নন্দন মিউজিয়মের কিউরেটর সুশোভন অধিকারী। তাঁর কথায়, “বিষয় ও আঙ্গিকের দিক থেকে শিল্পীদের কাজগুলিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ব্রুনারের রবীন্দ্রনাথ, মুকুল দে-র আঁকা অবন ঠাকুরের ছবি, অবন ঠাকুরের আঁকা এন্ড্রুজ এই প্রথম প্রদর্শিত হল।”

অবন ঠাকুরের নিজের আঁকা দুটি ওয়াশ পোর্ট্রেট রয়েছে প্রদর্শনীতে। একটি কবির, অন্যটি এন্ড্রুজের। রয়েছে গগন ঠাকুরের আঁকা দুটি পোর্ট্রেটও। রামকিঙ্করের পেনসিল স্কেচে পুলিনবিহারী সেন, সেই সঙ্গে প্রথম জীবনে আঁকা জলরঙের দুটি প্রতিকৃতিও ঠাঁই করে নিয়েছে। একটি শিল্পীর বৌদির, অন্যটি মায়ের। রয়েছে বিনোদবিহারীর করা দু’টি ছাপচিত্র। একটির নাম ‘জয়া অ্যান্ড লীলা’— ‘জয়া’ শিল্প ঐতিহাসিক জয়া আপ্পাস্বামী, ‘লীলা’ শিল্পীর স্ত্রী। অন্যটি আত্মপ্রতিকৃতি।

অসিত হালদারের ওয়াশে সাদা-কালোয় কিউবিস্ট ধরনে আঁকা রবীন্দ্রনাথ কবির প্রথম দিকের একটি জ্যামিতিক আত্মপ্রতিকৃতির কথা মনে করিয়ে দেয়। রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর শ্যামলী বাড়ির সামনে রবীন্দ্রনাথ ও পেনসিল স্কেচে একটি প্রতিকৃতিও রয়েছে। নন্দলাল বসুর ওয়াশে আঁকা এন্ড্রুজের প্রতিকৃতিটিও বহু দিন পরে দেখা গেল।

নন্দনে যে ১৯ হাজার শিল্পকর্ম রয়েছে, তার মধ্যে এমন অনেক কাজই এখন থেকে প্রদর্শন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলাভবন। এ বারের প্রদর্শনী চলবে ২ মে পর্যন্ত।

সুলতানার কথা

‘সোনার পিঞ্জরে ধরে রেখো না আমায়/ আমারে উড়িতে দাও দূর নীলিমায়!’... লিখেছিলেন রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তাঁর সেই উড়ানের স্বপ্ন বাংলার মেয়েদের কাছে পৌঁছোয় অনেক পরে। তত দিনে তাঁর অকালপ্রয়াণ ঘটে গিয়েছে। তা-ও বা যদিও তাঁর চিন্তা-চর্চা প্রবন্ধ-নিবন্ধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তাঁর শিল্পী সত্তা নিয়ে তার কতটুকুই বা হয়? কবি রোকেয়া বা গল্পকার রোকেয়া তো আজও অনেকখানি অচেনা। ১৯০৫ সালে সরোজিনী নায়ডু এবং কমলা সাতথিয়া নাথান সম্পাদিত ‘ইন্ডিয়ান লেডিজ ম্যাগাজিন’ পত্রিকায় ইংরেজিতে ‘সুলতানা’জ ড্রিম’ নামে কল্পকাহিনি লিখেছিলেন রোকেয়া। পরে তিনি নিজেই সেটির বঙ্গানুবাদ করেন, নাম দেন ‘সুলতানার স্বপ্ন’। সেই কাহিনি এবং এ রকম আরও বেশ কিছু মূল্যবান তথ্য-চিন্তা-কথা ধরা রয়েছে মীরাতুন নাহারের জীবনশিল্পী রোকেয়া বইয়ে। প্রকাশক ভাঙরের উদার আকাশ সংস্থা।

কন্যাশ্রীর গান

একাই একশো গান লিখে ফেলেছেন তিনি, রাজ্য সরকারি কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রচারের জন্য। তার সবগুলিতে বাউল সুর দিয়ে গেয়ে রেকর্ড করে বর্ধমান জেলা প্রশাসনের হাতে তুলেও দিয়েছেন নিজেই জানালেন স্বপন ঘোষ। বাড়ি বর্ধমান শহরে খাজা আনোয়ার বেড় এলাকায়। সম্প্রতি এসেছিলেন দুর্গাপুরে এক অনুষ্ঠানে। শুধু গান নয়, আরও অনেক কিছুই পারেন স্বপনবাবু। তবলাবাদন, কবিতা পাঠ, শ্রুতিনাটক, মূকাভিনয়, হাস্যকৌতুক, মায় ম্যাজিক। অনুষ্ঠান করে এসেছেন রাষ্ট্রপতি ভবনেও। ২০১৪ সাল থেকে ‘দুঃস্থ বাউল শিল্পী’ হিসেবে তাঁকে মাসিক এক হাজার টাকা করে ভাতা দিচ্ছে রাজ্য সরকার। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “স্বপনবাবু সরকারের নানা প্রচারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন বরাবর। কন্যাশ্রীর প্রচারে ওঁর গান আমি শুনেছি।”

বিপন্ন বোধ

‘ছোটবেলায় বড় কালো পিঁপড়ের গলা পুরনো ব্লেডে কাটতে ভাল লাগত। সেই ঘোর কেটেছিল দু’চার দিনে। তার পর কালীঘাটে মানতের বলির পাঁঠার ছিন্নমুণ্ড দেখে বহু দিন মাংস খাওয়া ত্যাগ।’ এই ভাবেই তাঁর বিশ্ব, তাঁর বোধের পর্দা সরাতে ধীরে এগিয়েছেন কিন্নর রায়। মেদিনীপুর থেকে প্রকাশিত, ঋত্বিক ত্রিপাঠী সম্পাদিত জলদর্চি পত্রিকার বিশ্ববোধ সংখ্যায়। ঝকঝকে ছাপা পাতাগুলি উল্টে যেতে যেতে প্রশ্ন জাগে, বিশ্ববোধ আদতে কী? বিশ্বায়িত বোধ, না কি বিশ্ব সম্পর্কে বোধ? কোন বিশ্ব, আজকের না কি চিরন্তন? এ নিয়ে বিভিন্ন পেশার বহু নামী মানুষের চিন্তা জোগাড় করেছেন সম্পাদক, কিন্তু বেশির ভাগই পরিসরে ছোট, তাতে মূল প্রতিপাদ্য পৃথিবীর গভীর দুঃসময়, কিন্তু নিছক আঁচড়ে যে অভিঘাত তাতে রক্তক্ষরণ হয় কি? বরং ‘ফিরে পড়া’ অংশটি রবীন্দ্রনাথ, আবুল ফজল, বুদ্ধদেব বসুদের আঁচড়ে সুস্বাদু। পুরনো চাল বলেই হয়তো।

দৃশ্য নিয়ে

নাটক এবং নাট্য বিষয়ক পত্রিকা ‘দৃশ্যকাব্যে’র দ্বিমাত্রিক পরিচিতি। আদ্যন্ত শহুরে সংগঠন। তবে বরানগরের এই সংগঠনটির প্রসার ও পরিচিতি বাংলার গ্রাম-মফস্সল সুবিদিত। বালুরঘাট থেকে বারুইপুপর, নাটক বিষয়ে সামান্য আগ্রহীর কাছেই এই নাট্য পত্রিকার কদর যথেষ্ট। আগ্রহ রয়েছে তাঁদের নব্য প্রযোজনা নিয়েও। নতুন নাটক ‘অহম্’ নিয়ে সদ্য পূর্ব মেদিনীপুর সফর করে ফিরল দৃশ্যকাব্য। ছোটদের থিয়েটার নিয়েও নতুন দিশা দেখাচ্ছে সংস্থাটি। শুরু হতে চলেছে তাদের নতুন শাখা ‘ছোটদের দৃশ্যকাব্য’।

অন্তরের ছায়া

এখনও কেউ গুনগুন করে কাঁদছে মনে হচ্ছে। সে কি তাহলে এখনও স্বপ্নের মধ্যে, ঘুমের মধ্যে আছে!... কাহিনি এগোচ্ছে মৃত্যুর স্বপ্ন থেকে ভোরের আত্মহত্যার দিকে। এক নারী অপরের বিপর্যস্ত প্রস্থানে আঙুল বুলিয়ে চিনে নিচ্ছে নিজের লুকোনো ক্ষতস্থান। এই ভাবেই ঘরে-বারান্দায়, ঘরোয়া সংলাপে পাক দিয়ে-দিয়ে চলেছে পাপিয়া ভট্টাচার্যের উপন্যাস ছায়া পড়ে (গাঙচিল)। আদতে ঘাটালের মেয়ে পাপিয়ার তিনটি গল্পগ্রন্থ ‘আশাবরী’, ‘ললিতাঘাট’, ‘ঘন যামিনীর মাঝে’ ও দু’টি উপন্যাস ‘তরঙ্গ মিলায়ে যায়’ এবং ‘ভাসান’ আগেই প্রকাশিত হয়েছে।

খেয়ালে পঁচিশ

স্থানীয় মানুষ ওঁকে চেনেন গিরীন ডাক্তার বলে। বাঁকুড়া পুরসভার হোমিওপ্যাথি ডাক্তার গিরীন্দ্রশেখর চক্রবর্তী রোজ সকালে তারাশঙ্করের আরোগ্য নিকেতনের মতোই নিজের ডিসপেন্সারিটি খুলে বসেন। কিন্তু কাজের মাঝে চিন্তা চলে খেয়ালী নিয়ে। তাঁর সম্পাদিত ওই পত্রিকাটি কিন্তু আর পাঁচটা পত্রিকার মতো নিছক গল্প-উপন্যাস-কবিতায় পাতা ভরায় না। এক-একটি সংখ্যা তৈরি হয় এক-এক প্রসঙ্গ নিয়ে। সাম্প্রতিক রজতজয়ন্তী বর্ষপূর্তি স্মারক সংকলনের বিষয় জঙ্গলমহল। সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে এলাকার ভূত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ নিয়ে একগুচ্ছ লেখা। পাশাপাশি কাজ চলছে বাঁকুড়ার বিস্মৃত শিল্পী সত্যেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে সংকলন প্রকাশেরও, জানালেন গিরীন্দ্রশেখর।

নৃত্যযোগী

দিল্লিতে ২০০৫-এ দিল্লিতে শো করতে গিয়ে মঞ্চেই চোট পেয়েছিলেন তিনি। পরের ছ’মাস বিছানায়। কোমরের নীচ থেকে ধীরে ধীরে অবশ হয়ে যেতে শুরু করেছিল। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, আর যা-ই হোক, নাচটা এ যাত্রা বন্ধ রাখতেই হবে। কিন্তু হাল ছাড়েননি বছর বিশেকের রাহুলদেব মণ্ডল। খবর পেয়েছিলেন, চেন্নাইয়ের এক জায়গায় যোগব্যায়ামের মাধ্যমে রোগ সারানো হয়। কয়েক মাস ধরে চলে চিকিৎসা। বছরখানেকের মধ্যেই স্টেজে ফেরেন বারাসতের তরুণ নৃত্যশিল্পী। ছোটবেলা থেকেই তাঁর প্রথাগত তালিম ভরতনাট্যমে। ২০০৭ সালে জাতীয় যুব উৎসবে সেরা শিল্পীর পুরস্কার পান। বিবেকানন্দের জন্ম সার্ধশতবর্ষে গিয়েছেন শিকাগোতেও। কী ভাবে ভরতনাট্যমের সঙ্গে প্রাচীন যোগশাস্ত্রের মেলবন্ধন ঘটানো যায়, তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন থাকেন অনেক আগে থেকেই। তাতে বেরিয়ে আসে ‘নৃত্য-যোগসূত্র’। ইতিমধ্যে অক্সফোর্ডে তা নিয়ে পেপারও পড়া হয়ে গিয়েছে রাহুলের। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নৃত্য-যোগের কর্মশালা হয়। পরে সেখানকার সিলেবাসেও আবশ্যিক পেপার হিসেবে ঢুকে পড়েছে নৃত্য-যোগ। আপাতত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরবঙ্গ ক্যাম্পাসে নৃত্যকলা শেখাচ্ছেন রাহুল।

south karcha karcha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy