Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দক্ষিণের কড়চা

রবীন্দ্রনাথ-উপেন্দ্রকিশোর বন্ধুত্বে, ব্রাহ্ম সমাজের আবহাওয়ায় নিশ্চয়ই ছিল শিকড়টা। রায় পরিবার আর ঠাকুর পরিবারে সম্পর্কও ছিল। কিন্তু সুকুমার রায় শান্তিনিকেতনকে নিয়েছিলেন তাঁর নিজস্ব ধরনে। বোলপুর ব্রহ্মচর্যাশ্রমে ছাত্রজীবন থেকেই যাতায়াত ছিল সুকুমার রায়ের। তেমনই এক যাত্রাপথে কালিদাস নাগের সঙ্গে তাঁর পরিচয়।

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৪ ০০:১৫
Share: Save:

শান্তিনিকেতন-পর্ব
চার ইয়ারি কথা

রবীন্দ্রনাথ-উপেন্দ্রকিশোর বন্ধুত্বে, ব্রাহ্ম সমাজের আবহাওয়ায় নিশ্চয়ই ছিল শিকড়টা। রায় পরিবার আর ঠাকুর পরিবারে সম্পর্কও ছিল। কিন্তু সুকুমার রায় শান্তিনিকেতনকে নিয়েছিলেন তাঁর নিজস্ব ধরনে। বোলপুর ব্রহ্মচর্যাশ্রমে ছাত্রজীবন থেকেই যাতায়াত ছিল সুকুমার রায়ের। তেমনই এক যাত্রাপথে কালিদাস নাগের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। কালিদাস নাগের ডায়েরিতে সেই আদিকালের শান্তিনিকেতনবাসের সুকুমার-স্মৃতি “রবীন্দ্রনাথের যখন ৫০ বছর বয়স তখন একবার আমরা থার্ড ক্লাসের টিকিট করে শান্তিনিকেতন যাই। পথে পরিচয় হয় সুকুমার রায়ের সঙ্গে। তিনি বিলেত যাবেন...।” রবীন্দ্রনাথের আশ্রমে তখন পয়সার টানাটানি। শালপাতায় নুন রেখে কাঁকরভরা চাল ডাল খেতে হত। তখন সুকুমার রায়ের হাসির হর্রা শোনা গিয়েছিল। খাচ্ছেন আর মুখে মুখে গান রচনা করছেন। রবীন্দ্রনাথের অনুকরণে, এই তো ভাল লেগেছিল আলুর নাচন হাতায় হাতায়।”

আর সত্যজিৎ রায়? ১৯৪০-এর জুলাইয়ে নন্দলাল বসুর কলাভবনে ভর্তি হন সত্যজিৎ। সেই বছরই শান্তিনিকেতনে পড়তে আসেন দিনকর কৌশিক। ক্রমে শান্তিনিকেতনে তৈরি হয়ে ওঠে চার বন্ধুর এক অনবদ্য সখ্য। সত্যজিৎ, দিনকর কৌশিক, পৃথ্বীশ নিয়োগী আর সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়। সত্যজিৎকে ঘিরে এই চার বন্ধুর কাহিনি লিখেছেন অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য, তাঁর সম্প্রতি প্রকাশিত এক দুর্লভ মানিক (সিগনেট প্রেস) বইয়ে। দিনকর কৌশিকের দীর্ঘ স্মৃতিচারণ আর সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায় ওরফে ভুনুদা-র কাছে শোনা নানা গল্প হলেও সত্যির সঙ্গে প্রকাশিত তথ্য মিলিয়ে এ বই লেখা। তেমনই একটি অন্তরঙ্গ স্মৃতিচারণে ভুনুদা জানিয়েছেন নানা অজানা কথা। কুমুদিনী নামে এক দক্ষিণ ভারতীয় ছাত্রীর বীণা বাজানো শোনায় মানিকের আগ্রহ কিংবা অনেক রাতে কলাভবনের হস্টেলে মানিককে লণ্ঠন হাতে পৌঁছে দিতে যাওয়ার অন্তরঙ্গ গল্প। সঙ্গের ছবিতে পৃথ্বীশ, মানিক ও দিনকর কৌশিক।

অন্য সাধন

এ দেশে ছবি করিয়েরা বিখ্যাত হন কাহিনিচিত্র বানিয়ে। তথ্যচিত্র যাঁরা বানান, তাঁদের চেনেন কত জন? এমনকী যাঁরা এক নিঃশ্বাসে রবার্ট ফ্ল্যাহার্টি থেকে জিগা ভের্তভ বা বার্ট হানস্ট্রা আউড়ে দিতে পারেন, তাঁদেরই বা কত জন দেশি তথ্যচিত্র নির্মাতাদের চেনেন? সেই কারণেই কি প্রায় বিস্মৃতির অন্তরালে এক বুক অভিমান নিয়ে হারিয়ে গেলেন হরিসাধন দাশগুপ্ত? রোসেলিনির সঙ্গে তাঁর স্ত্রী সোনালির ইতালি চলে যাওয়া নিয়ে যত চর্চা হয়েছে, তাঁর কাজ নিয়ে কানাকড়িও হয়নি। উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত ‘কমললতা’ ছবির কল্যাণে কিছু পুরনো মানুষ হয়তো তাঁর নাম জানেন। কিন্তু ওই কাহিনি ছবির ভাবীকাল যদি তাঁকে মনে না-ও রাখে, ‘পাঁচথুপী: আ ভিলেজ ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল’ তথ্যচিত্র বহু আগেই চলচ্চিত্রের অভিধানে চলে গিয়েছে। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে বন্ধুত্বের বিচ্ছেদ থেকে ভাইয়ের মৃত্যু, শোকে গাঁথা এই প্রতিভা-বিকীর্ণ জীবনের উপরে একটু আলো ফেলতে চাইছে উত্তরপাড়া সিনে ক্লাব। রবিবার, ২০ জুলাই সন্ধ্যায় শিক্ষা-সংস্কৃতি পরিষদে ‘হরিসাধন দাশগুপ্তকে নিয়ে দু’চার কথা’ অনুষ্ঠানে দেখানো হবে ‘কোনারক’ আর ‘টেরাকোটা টেম্পলস’ তথ্যচিত্র দু’টিও। সঙ্গের ছবি সোশ্যাল নেটওয়ার্কের সৌজন্যে প্রাপ্ত।

সত্যের দায়

বাম মনস্ক পত্রিকায় তিনি লিখেছেন, অথচ দলের সঙ্গে তাঁর কোনও ‘অ্যাটাচমেন্ট’ ছিল না। পণ্য সাহিত্যের বিরোধিতার সঙ্গে সঙ্গে তিনি মনে করতেন, “পার্টির স্বার্থ যদি বহন করে কোনও লেখক, তাহলে তার কী অবস্থা হয়? তাহলে সে পার্টির লোক হয়ে যায়।” এও মনে করতেন, “ক্ষুদ্র স্বার্থ বহন করার জন্য সাহিত্যটা করা উচিত নয়।” তিনি গল্পকার, প্রাবন্ধিক সত্যপ্রিয় ঘোষ। তাঁর সম্পাদনায় অনুষ্টুপের ‘পূর্বাশার কথা’ পাঠক মনে রাখবে। “মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিনে শুভাশিস চক্রবর্তীর সম্পাদনায় প্রকাশিত হল ‘অহর্নিশ’ পত্রিকার জন্মবর্ষ সংখ্যা। প্রচ্ছদ করেছেন পার্থপ্রতিম দত্ত। সংগ্রহযোগ্য সংখ্যাটিতে তাঁকে নিয়ে ও তাঁর গদ্য নিয়ে লিখেছেন নলিনীকুমার চক্রবর্তী, অনিল আচার্য, রুশতী সেন প্রমুখরা। আষাঢ় দিনে ‘অহর্নিশ’ সম্প্রতি কলকাতার রোটারী সদনে আয়োজন করেছিল ‘মেঘদূত সন্ধ্যা’-র। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল কবি জয় গোস্বামীর ‘প্রবেশকথন’। দ্বিতীয় পর্বে ছিল নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির লেখা অবলম্বনে মেঘদূতের পাঠ ও অভিনয়। অনুষ্ঠান শেষ হয় নৃসিংহবাবুর মেঘযাত্রার কথকতায়।

সত্তরের প্রবীর

শনিবারের বারবেলা। ১৯৭৪-এর ২০ জুলাই। দেশ জুড়ে জরুরি অবস্থা। কলকাতা ও হাওড়ার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী মিলিত হয়েছে কার্জন পার্কে। মৃণাল সেন, বাদল সরকারের মতো বিশিষ্টেরাও এসে জুটেছেন। নাচ, গান, আবৃত্তি, কবিতাপাঠ, পথনাটকে ‘ভিয়েতনাম দিবস’ পালন হচ্ছে। পুলিশভ্যান ঘিরে ফেলল। লাঠিচার্জ। মৃণাল সেনরা গ্রেফতার হলেন। পুলিশের লাঠি খেয়ে মারা গেলেন ২৩ বছরের তরতাজা সাংস্কৃতিক কর্মী প্রবীর দত্ত। রবিবার, ২০ জুলাই সন্ধ্যায় তাঁকেই স্মরণ করতে চলেছে শহর বহরমপুর। শিল্পতালুকের ‘জলসাঘর’-এ শ্রুতিনাটক, আবৃত্তি, আলোচনার আয়োজন করেছে ‘বাচিক শিল্পচর্চার মুক্ত দিগন্ত’। একই সময়ে নিজেদের মহলাকক্ষে ‘প্রবীর দত্ত স্মরণ’ অনুষ্ঠান করবে বহরমপুরের ‘যুগাগ্নি’ নাট্যগোষ্ঠী।

ওপার থেকে

“বনগাঁর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই আমার নিবিড় সম্পর্ক। কর্মসূত্রে বাবা এখানে কিছুদিন ছিলেন। ছোটবেলায় আমারও সেই সূত্রে এখানে থাকতে হয়েছে।” বলছিলেন তানভীর মোকাম্মেল। ‘এবং অন্যকথা’ নামে একটি পত্রিকার বার্ষিক অনুষ্ঠানে প্রয়াত সাহিত্যিক সমর মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে সম্প্রতি বনগাঁ শহরে বলতে এসেছিলেন বাংলাদেশি চিত্র পরিচালক। ‘সাহিত্য ও চলচিত্র: সমাজসত্যের আলোকে’ শীর্ষক আলোচনায় তানভীর বললেন, “তবে চলচিত্রে সেন্সর নামক একটি বিষয়ের মধ্যে দিয়ে আসতে হয়। সাহিত্যে সেই সমস্যা অনেকটাই কম।” দেখানো হল তাঁর সাম্প্রতিক ছবি ‘জীবন ঢুলী’।

মাটির জল

ভ্যাপসা গরম। বাসের সিটে বা ট্রেনের কামরায় গলদঘর্ম হচ্ছেন। ব্যাগ থেকে যখন প্লাস্টিকের জলের বোতল বেরোচ্ছে, পাশের ঝোলা থেকে উঁকি দিল পোড়ামাটির বোতল। এক লিটার থেকে আড়াই লিটার, নানা মাপের এমন বোতল মিলছে পুরুলিয়ার বাজারে। দামও নাগালের মধ্যেই ১৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা। পুরুলিয়া ১ ব্লকের কোটলুই গ্রামের বেশিরভাগ পরিবারই বংশ পরম্পরায় মাটির জিনিস গড়ে। তাঁদেরই এক জন নরসিংহ কুমারের কথায়, “এ রকম বোতল কয়েক বছর ধরে বানাচ্ছি। এ বছর খুব চাহিদা। আমিই প্রায় হাজার খানেক বিক্রি করেছি।” শহরের ধর্মশালা মোড়ের মাটির জিনিসের দোকানি জানকী কুম্ভকারের কথায়, “আমার দোকান থেকে রাজস্থান, রাঁচি, বোকারোয় বোতল গিয়েছে।” খদ্দেররা কী বলছেন? শহরের বাসিন্দা পঙ্কজ মিত্তলের কথায়, “মাটির কুঁজোর জল খাননি? কেমন ঠান্ডা! এই বোতলেও যে তা-ই!”

ভিজছে অতীত

বর্ষায় মোগলমারির মহাবিহার নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সেই ২০০৩ সাল থেকে প্রথমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও পরে রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের উদ্যোগে এই মহাবিহারের খনন করা হয়েছে। সাম্প্রতিক খননকার্যে জানা গিয়েছে, এখানে সম্ভবত দু’টি বিহার ছিল। মিলেছে সীমানা পাঁচিল, প্রবেশদ্বার, অলঙ্কৃত দেওয়াল, কারুকার্যে মোড়া ইট, পোড়ামাটির বাসনপত্র এবং উৎসর্গ ফলক। বৃষ্টির হাত থেকে এই পুরাকীর্তিকে বাঁচাতে একটি ছাউনি তৈরি করতে শুরু করেছে রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতর। কিন্তু তা সম্পূর্ণ না হওয়ায় স্ট্যাকোর তৈরি দেওয়ালের মূর্তিগুলির গায়ে জল লাগছে। পলিথিনের আস্তরণ দিয়ে তা বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। উদ্যোগী স্থানীয় মানুষও।

গাছ-দাদু

সিউড়িতে প্রায় সকলেই তাঁকে ‘গাছপাগল’ বলে জানে। কোথাও ফাঁকা জায়গা দেখলেই তিনি গাছ পুঁতে দেন। তা-ও নিজের গ্যাঁটের টাকায়। বন দফতর থেকে গাছ কিনে গোটা বর্ষা জুড়ে অকাতরে বিলিও করেন যদু রায় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক উজ্জ্বল রায়। যত দিন শিক্ষকতা করেছেন, স্কুলের ফাঁকা জায়গায় হাজার চারেক নানা প্রজাতির গাছ লাগিয়েছেন। সেটাই নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার সদাইপুর থানার চিনপাই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচশো ছাত্রছাত্রীকে পেয়ারা ও লেবুর চারা দিলেন উজ্জ্বলবাবু। এখন ছোটরা তাঁকে চিনছে ‘গাছ-দাদু’ বলে।

একান্নবর্তী

১৯৬৩ সালে প্রথম কলকাতা শহরে ছাপাখানার আলো দেখেছিল একটি কবিতা পত্রিকা। ’৭৭ সালে তার সদর চলে যায় আসানসোলে। বছরে দু’টি সংখ্যা, কিন্তু ছেদ পড়েনি যাত্রায়। শুধু বাংলা নয়। ওড়িয়ার সীতাকান্ত মহাপাত্র, হিন্দি কবি অশোক বাজপেয়ী, পঞ্জাবীর অমৃতা প্রীতম, মরাঠি প্রভাকর মাচওয়ে, গুজরাতের ভোলাভাই পটেল, অসমিয়া কবি হেমেন বরগোহাঁই কত জনই তো লিখেছেন নিজের ভাষায়। সঙ্গে গিয়েছে তর্জমা। বাংলার কবিদের মধ্যে প্রেমেন্দ্র মিত্র, অন্নদাশঙ্কর রায়, অজিত দত্ত, অরুণ মিত্র, বিমলচন্দ্র ঘোষ, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, পিনাকী ঠাকুর, জয়া মিত্র, বিকাশ গায়েন, আনন্দ ঘোষ হাজরা, কালীকৃষ্ণ গুহ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায় তালিকা করতে বসলে শেষ করা শক্ত। হওয়ারই কথা। চলাটা তো কম নয়, একান্নটা বছর। ‘কবিকণ্ঠ’ নামে সেই পত্রিকার বহমানতার পিছনে রয়ে গিয়েছে এক সাহিত্যকর্মীর অক্লান্ত সাধনা। তিনি অসীমকৃষ্ণ দত্ত। শৈশব কেটেছে বাংলাদেশের রংপুরে। কলকাতায় এসে গৃহশিক্ষকতার কাজ যেমন করেছেন, পেট চালাতে বড়বাজারে দোকানেও কাজ করতে হয়েছে। সেই সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে টেলিফোন এক্সচেঞ্জে চাকরি। এর পরেই আসানসোলে চলে আসা। এই গোটা চড়াই-উতরাইয়ে কবিতার হাত কখনও ছাড়েননি তিনি। পরে টেলি দপ্তরের চাকরি ছেড়ে যোগ দেন আসানসোল ইস্টার্ন রেলওয়ে স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। মহীশিলা বয়েজ স্কুল, কলকাতায় ভবানীপুর ইনস্টিটিউশন, আসানসোল বানোয়ারিলাল ভালোটিয়া কলেজে পড়িয়েছেন। তাঁর নিজের কবিতা ও অনুবাদ গ্রন্থও প্রকাশ পেয়েছে। এখন চুরাশি বছর বয়সেও প্রাণবন্ত মানুষটির চিন্তা একটাই ‘কবিকণ্ঠ’কে কার হাতে দিয়ে যাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

south karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE