Advertisement
E-Paper

নেতৃত্বে চাই কেমন মুখ, সলতে পাকাচ্ছে সিপিএম

বিপর্যয়ের ধাক্কার মধ্যেই সম্মেলন-পর্বের জন্য সলতে পাকানোর কাজ শুরু করে দিতে চাইছে সিপিএম। লোকসভা ভোটে নজিরবিহীন ভরাডুবির পরে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে বদলের দাবি উঠেছে প্রবল ভাবে। আলিমুদ্দিনের উপর তলার সরে দাঁড়ানোর দাবিও একই রকম তীব্র। কর্মী-সমর্থকদের দাবি মেনে এখনই পদত্যাগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেও আসন্ন সম্মেলন-প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নেতৃত্বে পরিবর্তনের কাজই করতে চাইছে সিপিএম।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৪ ০৩:৫০

বিপর্যয়ের ধাক্কার মধ্যেই সম্মেলন-পর্বের জন্য সলতে পাকানোর কাজ শুরু করে দিতে চাইছে সিপিএম।

লোকসভা ভোটে নজিরবিহীন ভরাডুবির পরে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে বদলের দাবি উঠেছে প্রবল ভাবে। আলিমুদ্দিনের উপর তলার সরে দাঁড়ানোর দাবিও একই রকম তীব্র। কর্মী-সমর্থকদের দাবি মেনে এখনই পদত্যাগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেও আসন্ন সম্মেলন-প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নেতৃত্বে পরিবর্তনের কাজই করতে চাইছে সিপিএম। সম্মেলনের পর্ব কখন শুরু করা উচিত, তা নিয়ে দলের অন্দরে দ্বিমত অবশ্য এখনও মেটেনি। তবু এর মধ্যেই দল এবং গণসংগঠনের সর্ব স্তরে দলিত, আদিবাসী, মহিলা, সংখ্যালঘু-সহ আরও বেশি করে সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিদের তুলে আনার চেষ্টা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মতামত চাওয়া হয়েছে সব রাজ্য নেতৃত্বের কাছ থেকে। সম্মেলনে কেন্দ্রীয় থেকে একেবারে লোকাল কমিটি পর্যন্ত কী ভাবে নেতৃত্ব সাজানো যাবে, তার রূপরেখা তৈরিতে এখন থেকেই হাত লাগাচ্ছেন প্রকাশ কারাট, সীতারাম ইয়েচুরি, বিমান বসুরা।

সম্মেলন-প্রক্রিয়া নিয়ে মতামত যাচাই করতে আগামী ৮-১০ অগস্ট দিল্লিতে বসছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। কিন্তু তার আগেই ১৯-২০ জুলাই পলিটব্যুরোর বৈঠক ডাকা হয়েছে সাংগঠনিক বিষয়ের প্রাথমিক পর্যালোচনা সেরে নিতে। যাতে তার নির্যাস নিয়ে পরের মাসের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনা শুরু করা যায়। দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, “সারা দেশেই সংগঠনে বড়সড় ধাক্কা এসেছে। গণসংগঠনগুলোর কাজেও বহু ক্ষেত্রে শিথিলতা ধরা পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, কেরলের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংগঠন যথাসম্ভব গুছিয়ে নেওয়ার জন্য যতটা সময় কাজে লাগানো যায়, সেটাই এখন লক্ষ্য।” পলিটব্যুরো হয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির বেঁধে দেওয়া রূপরেখাই প্রতিটি রাজ্য কমিটির হাতে আসবে। তার ভিত্তিতে আবার তৈরি হবে রাজ্যওয়াড়ি সম্মেলনের নির্দেশিকা।

দলের এক পলিটব্যুরো সদস্য বলছেন, “গত বারই আমরা নেতৃত্বের বিভিন্ন স্তরে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পরিবর্তন করেছিলাম। এ বারের সম্মেলনে সেই প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা আরও বাড়ানোর চেষ্টা হবে।” এক দিকে যেমন সাধারণ সম্পাদক বা রাজ্য সম্পাদক বদলের প্রক্রিয়া হবে, তেমনই নিচু তলার কমিটিগুলির গড়নও এমন ভাবে হবে, যাতে তৃণমূল স্তরে দল ধরে রাখতে সহায়ক হয়।

পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তনের ধাক্কায় এমনিতেই সংগঠনে ধস নেমেছিল, লোকসভা ভোটের পরে বেড়েছে বিজেপি-তে যাওয়ার প্রবণতা। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, বিপর্যয়ের দায় উপর তলা এড়াতে পারে না ঠিকই। কিন্তু তৃণমূল স্তরের কর্মীদের ঠিক মাথার উপরে স্থানীয় নেতৃত্বের

যে স্তর থাকে, সেই অংশের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। লোকসভা ভোটে দলের একাধিক প্রার্থীর নজরে এসেছে, এই অংশের ভূমিকা মোটেও সন্তোষজনক নয়। তাই মাঠে-ময়দানে লড়াই চালানোর যোগ্যতাসম্পন্ন, সমাজের পিছিয়ে-থাকা অংশের প্রতিনিধিদের নিয়ে নতুন কমিটি সাজানোর চেষ্টা হবে।

ছাত্র, যুব, শ্রমিক, কৃষক ফ্রন্ট-সহ গণসংগঠনের অবস্থাও সিপিএমকে চিন্তায় রেখেছে। তাদের কাজেও তাই ঝাঁকুনি দেওয়ার চেষ্টা হবে। ছাত্র বা যুব সংগঠন থেকে যাঁরা সাংসদের পর্যায়ে গিয়েছেন, বা একসঙ্গে একাধিক দায়িত্বে আছেন, তাঁদের অব্যাহতি দেওয়ারও ভাবনা রয়েছে।

দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “এমন কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াই করার অভিজ্ঞতা দলের বেশির ভাগেরই নেই। প্রয়োজনীয় রদবদল এনে সংগঠনকে যুগোপযোগী করতে হবে।” দলের বড় অংশের মতে, উপযুক্ত সৈনিক থাকলে তবেই আন্দোলনের পথে ঠিক ভাবে হাঁটা সম্ভব হবে।

রাজ্যে বিপর্যয়ের প্রভাব থেকে বেরিয়ে বিমানবাবুরা অবশ্য এখনই পথে নামার চেষ্টা শুরু করেছেন। শাসক দলের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে যে কারণে ২৫-২৭ জুন কলকাতার রাজপথে দিন-রাত অবস্থান হবে। বিমানবাবু, সূর্যকান্ত মিশ্রের মতো শীর্ষ নেতারা কর্মীদের পাশাপাশিই ধর্নায় রাত কাটাবেন। আর তার পরেই ২৮ জুন বসবে রাজ্য কমিটি।

sandipan chakrabarty cpm leadership problem biman basu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy