Advertisement
E-Paper

নাম ভাঁড়িয়ে ঝাড়খণ্ড থেকে পাসপোর্টও করায় রেজাউল

খাগড়াগড়-কাণ্ডে ধৃত, বোমার মজুতদার রেজাউল করিম ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা হিসেবে ভুয়ো পরিচয়ে পাসপোর্টও বার করে নিয়েছিল। এবং সেটা খাগড়াগড় বিস্ফোরণের মাস ছয়েক আগে হয়েছিল বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি। তাঁদের বক্তব্য, জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর জঙ্গি-জাল শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, দেশের অন্য রাজ্যেও কতটা ছড়িয়েছিল, ভুয়ো পরিচয় দিয়ে তৈরি রেজাউলের ওই পাসপোর্ট-ই তার প্রমাণ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৫
ব্যাঙ্কশাল কোর্টে রেজাউল করিম।-নিজস্ব চিত্র

ব্যাঙ্কশাল কোর্টে রেজাউল করিম।-নিজস্ব চিত্র

খাগড়াগড়-কাণ্ডে ধৃত, বোমার মজুতদার রেজাউল করিম ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা হিসেবে ভুয়ো পরিচয়ে পাসপোর্টও বার করে নিয়েছিল। এবং সেটা খাগড়াগড় বিস্ফোরণের মাস ছয়েক আগে হয়েছিল বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি। তাঁদের বক্তব্য, জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর জঙ্গি-জাল শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, দেশের অন্য রাজ্যেও কতটা ছড়িয়েছিল, ভুয়ো পরিচয় দিয়ে তৈরি রেজাউলের ওই পাসপোর্ট-ই তার প্রমাণ। খাগড়াগড়ে তৈরি বোমাগুলির একটি বড় অংশ পাকুড় ও রাজমহল হয়ে বাংলাদেশে যেত বলে গোয়েন্দারা আগেই জানিয়েছিলেন।

গত ১০ জানুয়ারি সকালে রেজাউলকে ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জের করনপুরা থেকে গ্রেফতার করেন জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র গোয়েন্দারা। মঙ্গলবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করানো হলে রেজাউলকে বিচারক ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত এনআইএ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

গোয়েন্দারা জানান, ঝাড়খণ্ডের করনপুরায় আনোয়ার নাম নিয়ে রেল লাইন পাতার কাজে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করছিল রেজাউল। আর পাসপোর্ট তৈরি করানোর সময়ে সে ফরিদুল নামের ভেক ধরেছিল বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন। তবে সেই সময়ে তার ঠিকানা ছিল রাঁচির পার্শ্ববর্তী জেলা রামগড়ের চিতরপুরের ইসলামনগর নামে একটি তল্লাটে। সাহেবগঞ্জের করনপুরা থেকে কিন্তু ওই জায়গা বহু দূরে। তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য, ওই জায়গায় রেজাউল কিছু দিন ছিল এবং ফরিদুল নামের আড়ালে থাকা রেজাউলের পাসপোর্ট তৈরি হয়েছিল ২০১৪-র মার্চে। তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, কলকাতার দক্ষিণে এক জায়গায় তল্লাশি চালিয়েও রেজাউলের ওই পাসপোর্ট সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জেনেছেন, পাসপোর্ট-এর আবেদনের ভিত্তিতে ঝাড়খণ্ডের রামগড় জেলার রাজারাপ্পা থানা ২০১৪-র ১৮ ফেব্রুয়ারি ফরিদুল ওরফে রেজাউলের ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’-এর কাজ শেষ করে ইতিবাচক রিপোর্ট-ই পাঠিয়েছিল সংশ্লিষ্ট দফতরে। কাজেই, পাসপোর্ট পেতে ফরিদুলের ভেক ধরা রেজাউলের অসুবিধে হয়নি। ওই পাসপোর্ট-এর আবেদন সংক্রান্ত কাগজপত্র ঘেঁটে পুলিশ এখন জানতে পারছে, মহম্মদ সাজিদ ও সাদ্দাম হোসেন নামে দুই স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদুলকে চেনেন বলে আবেদনপত্রে উল্লেখ করা আছে। অর্থাৎ ‘রেফারেন্স’ হিসেবে ওই দু’জনের নামই উল্লেখ করা হয়েছিল। পাসপোর্টে ফরিদুলের বাবার নাম লেখা রয়েছে--- মফিজুল। তবে সাজিদ ও সাদ্দাম মঙ্গলবার দফায় দফায় পুলিশি জেরার মুখে দাবি করেছেন, তাঁরা রেজাউল বা ফরিদুল নামে কাউকে চেনেন না এবং কী ভাবে ওই পাসপোর্টের আবেদনপত্রে তাঁদের নাম এল, সেটা তাঁরা বুঝতে পারছেন না।

রামগড় জেলার পুলিশ সুপার এম তামিলভানন বলেন, “ফরিদুলের ভুয়ো পরিচয়ে রেজাউলের পাসপোর্টের আবেদনের পুলিশ ভেরিফিকেশন যখন হয়েছিল, তখন রাজারাপ্পা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার যিনি ছিলেন, সেই ডিএম রজকের কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে।” এসপি স্বীকার করে নেন, ওই পাসপোর্টের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর পরিচয় যাচাইয়ের কাজে গাফিলতি হয়েছিল।

বিস্ফোরণের দু’সপ্তাহের মাথায় ওই ৩৫টি দেশি গ্রেনেড ও চারটি সকেট বোমা রেজাউলের বাড়ির গোপন কুঠুরি থেকে উদ্ধার হয়। বিস্ফোরণের দিন বর্ধমানের বাদশাহি রোডের বাড়ি থেকে পালিয়ে রেজাউল মুর্শিদাবাদে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পালিয়ে থাকার সময়ে ঝাড়খণ্ড ছাড়া বিহারেও আশ্রয় নিয়েছিল রেজাউল। বিহারেও জেএমবি ডেরা তৈরি করেছে কি না, সেটা তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন।

এ দিন কলকাতার নগর দায়রা আদালতে এনআইএ-র আইনজীবী শ্যামল ঘোষ জানান, অসম থেকে গ্রেফতার হওয়া জেএমবি চাঁই শাহনুর আলম ও সইখুল ইসলামকে রেজাউলের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা প্রয়োজন। শাহনুর ও সইখুলকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এনআইএ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এনআইএ-র পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়, খাগড়াগড়-কাণ্ডে বর্তমানে ১১ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও ওই তালিকা থেকে তারা হবিবুর রহমানের নাম প্রত্যাহার করতে চায়। তদন্তকারীদের বক্তব্য, মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা ওই যুবকের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ মেলেনি। বিচারক এনআইএ-র দাবি মেনে নিয়েছেন।

rezaul karim nia probe khagragarh blast
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy