Advertisement
E-Paper

নকল রুখে কুমোরটুলির শিল্প বাঁচাতে উদ্যোগী আইআইটি

শিল্প-বৈচিত্র্যের বিবর্তনে কখনও কখনও শিল্পের মৌলিকতা নষ্ট হয়। খড়্গপুর আইআইটির গবেষকদের মতে, এর অন্যতম উদাহরণ কলকাতার কুমোরটুলির মৃৎশিল্প। সম্প্রতি এই শিল্প ঘরানার খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণের পরে তার সংরক্ষণে জোর দিয়েছে খড়্গপুর আইআইটি। শিল্পের মৌলিকতার স্বার্থে তারা শিল্পভিত্তিক, শিল্পীভিত্তিক, কারিগরি প্রযুক্তিভিত্তিক ‘পেটেন্ট’-এ উৎসাহী।

দেবমাল্য বাগচি

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪৩
মগ্ন শিল্পী। কুমোরটুলির নিত্য দিনের ছবি। ফাইল চিত্র

মগ্ন শিল্পী। কুমোরটুলির নিত্য দিনের ছবি। ফাইল চিত্র

শিল্প-বৈচিত্র্যের বিবর্তনে কখনও কখনও শিল্পের মৌলিকতা নষ্ট হয়। খড়্গপুর আইআইটির গবেষকদের মতে, এর অন্যতম উদাহরণ কলকাতার কুমোরটুলির মৃৎশিল্প। সম্প্রতি এই শিল্প ঘরানার খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণের পরে তার সংরক্ষণে জোর দিয়েছে খড়্গপুর আইআইটি। শিল্পের মৌলিকতার স্বার্থে তারা শিল্পভিত্তিক, শিল্পীভিত্তিক, কারিগরি প্রযুক্তিভিত্তিক ‘পেটেন্ট’-এ উৎসাহী। এমন ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছে কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সমিতি।

কুমোরটুলির মৃৎশিল্পের আদিরূপ থেকে বিবর্তন ও বিকাশ, ঘুরে ঘুরে দেখছেন আইআইটির অধ্যাপকেরা। সঙ্গে থাকা গবেষক-পড়ুয়ারা সংগ্রহ করছেন এই শিল্পের নানা তথ্য। শিল্প-ঐতিহ্যের সঙ্গে বিজ্ঞানের মেলবন্ধনে একটি প্রকল্পও গড়েছে আইআইটি। এর নাম ‘সায়েন্টিফিক অ্যাপ্রোচ টু নেটওয়ার্কিং আন্ড ডিজাইনিং অফ হেরিটেজ ইন্টারফেস’ বা ‘সন্ধি’। এই প্রকল্পে ভাষা, সঙ্গীত, ইতিহাস, অঙ্কন, শিল্প-সহ ৯টি বিভাগে কাজ চলছে। এগুলির মধ্যে শিল্প বিভাগে কুমোরটুলি হল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যে এই সন্ধি প্রকল্পে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক।

কুমোরটুলি কেন? প্রকল্পের অন্যতম তত্ত্বাবধায়ক তথা আইআইটির অধ্যাপক জয় সেনের মত, ভারতবর্ষের মধ্যে একমাত্র এখানেই সনাতন মাতৃতান্ত্রিক উপাসনার চর্চা অব্যহত। এখানকার দেবীমূর্তিই তার প্রমাণ। ধর্ম-প্রকৃতিবিদ্যা-মাতৃভাবনা রয়েছে কুমোরটুলি ঘরানায়। তা ছাড়া কুমোরটুলির প্রতিমা তথা মূর্তির জনপ্রিয়তার জন্যও এই শিল্পের সংরক্ষণ জরুরি, এমনটাই মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক।

মৃৎশিল্পে প্রযুক্তি কী ভাবে সাহায্য করবে? গবেষকদের ব্যাখ্যা, মূলত মাটির গুণাগুণ এবং মৌলিকতা অক্ষুণ্ণ রাখায় প্রযুক্তি সহযোগিতা করবে। কেমন? মূর্তি তৈরির সময়ে কোন মাটির সঙ্গে কোন মাটি মেশালে তা দ্রুত শুকোবে কিংবা বেশি পোক্ত হবে, তা দেখানো হবে। আইআইটির স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগের গবেষক-ছাত্রী দেবপ্রিয়া চক্রবর্তীর ব্যাখ্যা, চারশো বছরেরও পুরনো টেরাক্রুডা ধর্মী (টেরাকোটা কাঁচা মাটি পুড়িয়ে হয়, আর টেরাক্রুডা কাঁচা মাটির শিল্পকর্ম) এই কুমোরটুলি শিল্পে এখন নানা রাসায়নিক ব্যবহৃত হচ্ছে। অথচ কয়েক বছর আগেও সেখানে ভেষজ দ্রব্যই ব্যবহার হত। গুণমানও ছিল যথেষ্ট ভাল। এক কথায়, পুরোনো শিল্প ঘরানার সংরক্ষণের সঙ্গেই নতুন পদ্ধতির মান উন্নত করতে প্রযুক্তির ব্যবহৃত হবে।

দেবপ্রিয়ার বক্তব্য, কুমোরটুলির পুরনো পদ্ধতি থেকে আমরা কী শিখতে পারি, ওই শিল্পকে আকর্ষণীয় করতে কী দেওয়া যেতে পারে, তার রূপরেখা তৈরির কাজ করতে ভাল লাগছে। আর্ট কলেজের প্রাক্তনী তথা গবেষক-পড়ুয়া তুষারকান্তি সাহা বলেন, “আমরা ধাপে ধাপে কুমোরটুলির তথ্যগুলি নথিভুক্ত করছি। আমাদের প্রযুক্তি ওঁদের কোন স্তরে কাজে লাগানো যেতে পারে, সেটাও দেখছি। আর্টের ছাত্র হিসেবে আমার আশা, এই প্রকল্পে কুমোরটুলি সমৃদ্ধ হবে।”

সন্ধির গবেষকদের মতে, বর্তমানে অনেক শিল্পীই নিজেদের শিল্পকর্ম নকল বা চুরি হওয়ার আশঙ্কায় ভোগেন। তা ঠেকাতে পেটেন্টের প্রয়োজন। তাঁদের মতে, এক্ষেত্রে কুমোরটুলির সব তথ্য এক জায়গায় করে শিল্পভিত্তিক, শিল্পীভিত্তিক, কারিগরি প্রযুক্তিভিত্তিক পেটেন্ট-এর আবেদন করবেন। তাতে শিল্পকর্মের নিজস্বতা অক্ষুন্ন থাকবে।

কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সমিতির সহ-সম্পাদক ভবেশরঞ্জন পাল বলেন, “আমাদের পুরনো ও নতুন ঘরানা আজীবন বেঁচে থাকুক। আইআইটি-র এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।” তাঁরা প্রয়োজনীয় সাহায্য করবেন বলেও আশ্বস্থ করেছেন।

pujo debmalya bagchi khargapur iit
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy