Advertisement
E-Paper

নজরে বীরভূম, হিংসার ছায়ায় আজ তৃতীয় দফার ভোট

বড় ধরনের গোলমাল ছাড়াই কেটেছে প্রথম দু’দফা। আজ, বুধবার রাজ্যে তৃতীয় দফার যে ভোটপর্ব অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, তা কিন্তু হচ্ছে পুরোদস্তুর রাজনৈতিক হিংসার আবহেই! দোসর হয়ে আছে সারদা-কেলেঙ্কারির ছায়া। দক্ষিণবঙ্গের চার জেলার মোট ৯টি কেন্দ্রে আজ ভোট। ইতিমধ্যেই দক্ষিণবঙ্গে ভোট-হিংসার বলি হয়েছেন পাঁচ জন। বিভিন্ন জায়গায় চলছে রাজনৈতিক সংঘর্ষ।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:০৪
বুথের পথে মহিলা ভোটকর্মী। দুর্গাপুরে। ছবি: বিকাশ মশান।

বুথের পথে মহিলা ভোটকর্মী। দুর্গাপুরে। ছবি: বিকাশ মশান।

বড় ধরনের গোলমাল ছাড়াই কেটেছে প্রথম দু’দফা। আজ, বুধবার রাজ্যে তৃতীয় দফার যে ভোটপর্ব অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, তা কিন্তু হচ্ছে পুরোদস্তুর রাজনৈতিক হিংসার আবহেই! দোসর হয়ে আছে সারদা-কেলেঙ্কারির ছায়া।

দক্ষিণবঙ্গের চার জেলার মোট ৯টি কেন্দ্রে আজ ভোট। ইতিমধ্যেই দক্ষিণবঙ্গে ভোট-হিংসার বলি হয়েছেন পাঁচ জন। বিভিন্ন জায়গায় চলছে রাজনৈতিক সংঘর্ষ। এমন এক আবহেই বুধবার ভোটে যাচ্ছে বীরভূম, বোলপুর, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, শ্রীরামপুর, হুগলি ও আরামবাগএই ৯টি কেন্দ্র। যে ভোটে ভাগ্য নির্ধারণ হতে চলেছে শতাব্দী রায়, জয় বন্দোপাধ্যায়, বাপ্পি লাহিড়ী, জর্জ বেকারের মতো তারকাদের পাশাপাশিই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রত্না দে নাগ, সুলতান আহমেদ, রামচন্দ্র ডোম, সাইদুল হক বা শক্তিমোহন মালিকের মতো পুরোদস্তুর ‘রাজনৈতিক’ প্রার্থীদের।

তবে, এ সবকে ছাপিয়ে সব মহলের নজর বীরভূমের দিকে। এই জেলায় অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করানোটা যে তাঁর কাছে ‘চ্যালেঞ্জ’, তা কয়েক দিন আগেই বলেছিলেন নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ। নিরপেক্ষ ভাবে কাজ না করার অভিযোগে কমিশন ইতিমধ্যেই বীরভূম ও বর্ধমানের পুলিশ সুপারকে বদলে দিয়েছে। তবে, বীরভূমের ভোটকে সেই জেলার তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং সুধীরকুমারের মধ্যে ‘সম্মানের লড়াই’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

কেন বীরভূম কমিশনের নজরবন্দি?

রাজ্যের মুখ্য নিবার্চনী অফিসারের অফিস সূত্রের খবর, গত এক বছর ধরে বীরভূমের নানা ঘটনাই নির্বাচন কমিশনকে ওই জেলাকে নিয়ে আলাদা করে ভাবিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ওই জেলায় অনুব্রত মণ্ডলের উস্কানিমূলক মন্তব্য, লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মণিরুল ইসলামের প্ররোচনামূলক বক্তৃতা উত্তেজনা তৈরি করেছে। বিরোধীরা এখানে শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের ধারাবাহিক অভিযোগ আনছে। সম্প্রতি সিউড়িতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাস্থলের রাস্তায় বিস্ফোরক উদ্ধারের জেরে পিটিয়ে মারা হয় এক সিপিএম কর্মীকে। তার পরে পরেই লাভপুরে এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে বোমা বাঁধার সময় বিস্ফোরণে মারা যায় দুই দুষ্কৃতী।

সব মিলিয়ে বীরভূমের পরিস্থিতি যথেষ্টই ভাবাচ্ছে কমিশনকে। গত শুক্রবার বীরভূম সফরে এসে সুধীরকুমারও মন্তব্য করেছিলেন, “এই জেলায় আইনশৃঙ্খলার কিছুটা অবনতি ঘটেছে।” আর সে কারণেই বেনজির নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে আজ ভোটগ্রহণ হবে বীরভূমে। মোতায়েন থাকবেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রায় দশ হাজার জওয়ান। জেলার মোট ২৯৬২টি বুথের (যার মধ্যে ১২৩৫টিই অতি স্পর্শকাতর হিসাবে চিহ্নিত) প্রত্যকটিতে হয় কেন্দ্রীয় আধাসেনা, নয় মাইক্রো অবজারভার থাকবেন।

তা না হলে রাখা হবে লাইভ ওয়েবকাস্টিং, ডিজিটাল ক্যামেরা বা ভিডিও ক্যামেরা।

পাশাপাশি, এই জেলার মাওবাদী প্রভাবিত ৯টি থানা এলাকাও নির্বাচন কমিশনের মাথাব্যথার কারণ। সে জন্য ওই ৯টি থানার সব ক’টি বুথকেই স্পর্শকাতর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বীরভূম লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়ায় দ্বিতীয় দফার ভোটের শেষে মাওবাদী হামলায় জওয়ান ও ভোটকর্মীদের মৃত্যু হয়েছিল। তার জেরে বীরভূমের মাওবাদী-প্রভাবিত থানা এলাকার বুথে ভোটকর্মীদের যাতায়াতের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। আকাশপথেও চলবে নজরদারি। যে-সব বুথে মোবাইল নেটওয়ার্কের সমস্যা হবে, সেখানে রাখা হবে স্যাটেলাইট ফোন। ত্রিস্তরীয় নজরদারিতে ভোট হবে অনুব্রত মণ্ডলের জেলায়। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের অফিস, কলকাতায় রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের অফিস এবং জেলায় ডিএম অফিস থেকে বীরভূমের ভোটপর্বের খুঁটিনাটি নজরে রাখা হবে।

বীরভূম যদি কমিশনের কাছে প্রধান ‘চ্যালেঞ্জ’ হয়, সঙ্গে আছে বরাবর রাজনৈতিক হিংসার মানচিত্রে প্রথম সারিতে থাকা আরামবাগও। ১৯৮০ সাল থেকে এই লোকসভা কেন্দ্র বামেদের দখলে। গত লোকসভা ভোটে রাজ্যে এ সিপিএমের ভরাডুবির মধ্যেও কলকাতার কাছের যে একমাত্র কেন্দ্রটিতে সিপিএম ক্ষমতা ধরে রেখেছিল, সেটা হল এই আরামবাগ। পরিস্থিতি পাল্টায় বিধানসভা ভোটের পর থেকে। এই কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভা আসনগুলির মধ্যে কেবল গোঘাট ও চন্দ্রকোনা ধরে রাখতে সক্ষম হয় বামেরা। পঞ্চায়েত ভোটেও আরামবাগে তৃণমূলের জয়যাত্রা অব্যাহত থেকেছে। এখন সেখানে কান পাতলেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ শোনা যায়। ২০০৯ সাল পর্যন্তও যা শোনা যেত সিপিএমের বিরুদ্ধে।

ভোটের ঠিক আগের দিন সেই আরামবাগও উত্তপ্ত। মঙ্গলবার শহরের গৌরহাটি মোড়ে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে আহত হন ১০ জন। পুলিশ আর র্যাফ লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। স্থানীয় এক সিপিএম নেতা-সহ দু’জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ভোটের অশান্তি চলছে অন্যত্রও। সোমবার রাতে কলকাতার নীলরতন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গিয়েছেন কেশপুরে রাজনৈতিক সংঘর্ষে আহত সিপিএম কর্মী উত্তম দোলই (৪৫)। কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলইয়ের অভিযোগ, “গত বৃহস্পতিবার ঘাটালের বামপ্রার্থী সন্তোষ রাণাকে নিয়ে মিছিল করার পরই তৃণমূলের লোকজন উত্তমের বাড়িতে হামলা চালায়। তারই জেরে প্রাণ দিতে হল উত্তমকে।” সিপিএমের অভিযোগ, কেশপুর-সহ ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে অবাধ নির্বাচনের পরিস্থিতি নেই। সাবেক ‘পাঁশকুড়া লাইনই’ ফের ফিরিয়ে আনছে তৃণমূল। লাগাতার সন্ত্রাস চালিয়ে নির্বাচন করতে চাইছে।

সোমবার রাতে দুর্গাপুরে সিপিএম কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওই রাতেই পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর ১ ব্লকের মুকুন্দপুর গ্রামে তাদের এক কর্মীকে তৃণমূল মারধর করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। ও দিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘুটিয়ারিশরিফের ধোঁয়াঘাটায় মঙ্গলবার জয়নগর কেন্দ্রে এসইউসি প্রার্থী তরুণ মণ্ডলকে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। এ দিন বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ কিছু কর্মী-সমর্থককে নিয়ে প্রচারে বেরিয়েছিলেন তরুণবাবু।

তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন বিনা প্ররোচনায় হামলা চালায় মিছিলে। দলীয় কর্মীদের ধাক্কাধাক্কি করায় তিনি বাধা দিলে তাঁকেও হেনস্থা হতে হয় তৃণমূলের হাতে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। নির্বাচন কমিশনকে ঘটনার কথা জানিয়েছেন তরুণবাবু।

তেতে আছে এক সময়ে ‘লাল দুর্গ’ বর্ধমানও। শুক্রবার রাতে হাটগোবিন্দপুরে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে এক যুব তৃণমূল নেতার মৃত্যু হয়। তার জেরে সিপিএম সমর্থকদের বাড়িতে পাল্টা হামলার অভিযোগ ওঠে। বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুনীল মণ্ডল এ দিনই অভিযোগ করেছেন, কাটোয়া থেকে পূর্বস্থলী যাওয়ার পথে দুই পুলিশকর্মী গাড়ি তল্লাশির নামে তাঁকে হেনস্থা ও দুর্ব্যবহার করেছেন।

নির্বাচনী অব্যবস্থা নিয়ে এ দিন একাধিক জেলায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ভোটকর্মীরা। নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রে পৌঁছনোর গাড়ি পেতে দেরি হওয়ায় মঙ্গলবার সকালে আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রাস্তা অবরোধ করেন ভোটকর্মীরা। একই কারণে এ দিন বীরভূমের রামপুরহাট মহকুমাশাসকের অফিসের চত্বরের বাইরে ভাঙচুর চালান ক্ষুব্ধ ভোটকর্মীদের একাংশ।

loksabha election birbhum durgapur bardhaman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy