Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
গাজল-হিলি

নয়া জাতীয় সড়কেও কাঁটা জমি

আর একটি জাতীয় সড়ক পাচ্ছে রাজ্য। তাতেও জমি-জটের আশঙ্কা! মালদহের গাজল থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত পর্যন্ত ১০৭ কিলোমিটার রাস্তাটিকে সম্প্রতি ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়ক হিসেবে ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সড়ক ও ভূতল পরিবহণ মন্ত্রক।

সোমনাথ চক্রবর্তী ও অনুপরতন মোহান্ত
কলকাতা ও গাজল শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:২৬
Share: Save:

আর একটি জাতীয় সড়ক পাচ্ছে রাজ্য। তাতেও জমি-জটের আশঙ্কা!

মালদহের গাজল থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত পর্যন্ত ১০৭ কিলোমিটার রাস্তাটিকে সম্প্রতি ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়ক হিসেবে ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সড়ক ও ভূতল পরিবহণ মন্ত্রক। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে কেন্দ্র এই রাস্তাটিকে চার লেনের করতে চায়। কিন্তু সড়ক সম্প্রসারণের জমি নির্বিঘ্নে জোগাড় হবে কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে।

জাতীয় সড়ক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিজেই এটির সম্প্রসারণের কাজ করবেন, নাকি রাজ্য পূর্ত দফতরের হাতে এর দায়িত্ব ছাড়া হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে সম্প্রসারণের প্রশ্নে জমি যে ফের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সরকারি কর্তাদের একাংশ।

তাঁদের বক্তব্য, বেশ কয়েক বছর আগেই এই রাস্তাকে জাতীয় সড়ক করার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের মত নেওয়া হয়েছিল। কেন্দ্রের নতুন সরকার পরিকাঠামো ক্ষেত্রে জোর দেওয়ায় সারা দেশ জুড়েই বেশ কিছু রাস্তাকে জাতীয় সড়কের স্তরে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উত্তরবঙ্গ দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সড়ক-বাণিজ্যের অন্যতম পথ হিসেবে বাড়তি গুরুত্ব থাকায় গাজল-হিলি সড়ককে বেছে নেওয়া হয়েছে।

কিন্তু জাতীয় সড়ক হিসেবে একে চার লেনের করতে কয়েক হাজার একর জমি প্রয়োজন। কী ভাবে তা পাওয়া যাবে, সেটাই ভাবাচ্ছে রাজ্যের পূর্ত কর্তাদের।

কারণ, ‘অ্যাপ্রোচ রোড’-এর জন্য প্রয়োজনীয় ১১১ একর জমি মিলছে না বলে ৩০০ কোটি টাকার ফুলহার সেতু নির্মাণের কাজ দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে রয়েছে রাজ্যে। বারাসত থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত রাস্তাও চার লেনে সম্প্রসারণে হাত দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য জমি দিতে না পারায় সেই রাস্তা চওড়া হয়নি। রাজ্য প্রশাসনের অন্দরেই তাই আশঙ্কা, পেট্রাপোলের ক্ষেত্রে যা হয়েছে, হিলির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গাজল-হিলি সড়কের বেশ কিছু অংশ জবরদখল হয়ে রয়েছে। রাস্তা জুড়ে রয়েছে বহু দোকানপাটও। গঙ্গারামপুর পুরনো বাসস্ট্যান্ড, বুনিয়াদপুর মোড়, তিওর ও ত্রিমোহনী বাজার-সহ জায়গায় জায়গায় রাস্তা সরু হয়ে গিয়েছে দখলদারের জন্য। পূর্ত দফতরের বক্তব্য, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ রাস্তাটি হাতে নিলে তারাই সব সরিয়ে দেবে।

রাস্তার দু’ধারে অনেক জায়গায় পূর্ত দফতরের জমি রয়েছে। প্রয়োজন মতো সেই জমি নিতে হবে। বালুরঘাট থেকে হিলির মধ্যে কিছু জায়গায় জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। দক্ষিণ দিনাজপুরের পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অরূপ রায় বলেন, “গাজল থেকে হিলি সীমান্ত পর্যন্ত রাস্তাটি ১০ মিটার চওড়া। হিলি এলাকায় দু’টি জীর্ণ সেতু রয়েছে। সেই সেতুর পাশে নতুন দু’টি সেতু তৈরির কাজ শুরু করেছে পূর্ত দফতর।”

কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের গাজল মোড় থেকে দৌলতপুর, বংশীহারি, গঙ্গারামপুর, হারসুরা, বালুরঘাট হয়ে হিলির বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত বর্তমান দু’লেনের রাস্তাটি ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়ক হিসেবে উন্নীত করা হয়েছে। হিলি সীমান্তে আন্তর্জাতিক চেক পোস্ট রয়েছে। এই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের বহু নাগরিক যাতায়াত করেন। এখান দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে স্থল-বাণিজ্য বাড়াতে চাইছে কেন্দ্র। সেই জন্য হিলিতে আধুনিক ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রকের হিসেবে, হিলি সীমান্ত দিয়ে আগামী দিনে যে পরিমাণ পণ্য চলাচলের সম্ভাবনা রয়েছে, রাস্তার মান তার উপযুক্ত নয়। সেই কারণেই এটিকে চার লেনে সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত। আর এই কাজ দ্রুত করতে চায় নরেন্দ্র মোদীর সরকার।

রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী অবশ্য কেন্দ্রের বিরুদ্ধেই ঢিমেতালে কাজের অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর কথায়, “চলতি বছরের মার্চ মাসে কেন্দ্র বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। কিন্তু এখনও রাস্তাটি পূর্ত দফতরের হাতেই রয়েছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এখনও রাস্তাটি নেননি।” দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরীর বক্তব্য, “হিলি সীমান্তের কাছেই ত্রিমোহনী। এখানে রাস্তা সংকীর্ণ। ব্রিটিশ আমলের দু’টি ছোট সেতু রয়েছে। ভগ্নপ্রায় এই সেতু দিয়েই পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ রাস্তাটি হাতে নিলে রাস্তার উন্নতি হবে।”

হিলি কাস্টমস অ্যান্ড ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অশোক মণ্ডল বলেন, “হিলি সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ১৪০টি পণ্যবাহী লরি বাংলাদেশে যায়। বাংলাদেশ থেকেও মাসে ২০-২৫টি পণ্যবাহী গাড়ি আসে। সব মিলিয়ে হিলি সীমান্ত দিয়ে দিনে প্রায় ১০০ কোটি টাকার আমদানি-রফতানি হয়। এর থেকে ভারত সরকারের মাসে প্রায় ৮০ কোটি টাকা আয় হয়। রাস্তা চওড়া হলে কারবার আরও বাড়বে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE