এত দিন গোয়েন্দারা বলছিলেন, পাকিস্তানি জঙ্গিদের কাছ থেকেই প্রশিক্ষণ নিয়েছে খালিদ মহম্মদ। এ বারে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ দাবি করল, সে হাতেকলমে জঙ্গি-শিক্ষা নিয়েছে পাকিস্তানে গিয়েই।
মায়ানমারের নাগরিক খালিদকে খাগড়াগড়-কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে গত ১৭ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয়। শনিবার কলকাতা নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারক মহম্মদ মুমতাজ খানের এজলাসে খালিদকে হাজির করায় এনআইএ। তদন্তকারী সংস্থার পক্ষ থেকে আরও দাবি করা হয়, খাগড়াগড়-কাণ্ডের তদন্তে খালিদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক জন।
খালিদকে গ্রেফতার করার অব্যবহিত পর এনআইএ-র তরফে দাবি করা হয়, সে তেহরিক-ই-আজাদি-আরাকান নামে একটি জঙ্গি সংগঠনে প্রশিক্ষণ নিয়েছে এবং তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান-এর সদস্যরা এসে তাকে জেহাদি প্রশিক্ষণ দিয়ে গিয়েছিল। পাকিস্তানি জঙ্গিদের সঙ্গে খালিদের ঘনিষ্ঠতার কথা এবং তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়ার দাবি এনআইএ প্রথম থেকেই করে আসছে। তবে পাকিস্তানে গিয়ে খালিদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ নেওয়ার বিষয়টি এনআইএ-র পক্ষ থেকে এই প্রথম দাবি করা হল। খালিদ যে বিস্ফোরকের ব্যাপারে এক জন বিশেষজ্ঞ এবং আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) তৈরিতে সিদ্ধহস্ত, সেই ব্যাপারেও এনআইএ বারবার দাবি করেছে।
খালিদের আইনজীবী অবশ্য এনআইএ-র এই দাবির বিরোধিতা করেন। মক্কেলের জামিনের জন্য আবেদন করে তিনি বলেন, যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেওয়া হয়, কেউ কোনও বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, তা হলেও তাকে কোনও ঘটনার (অর্থাৎ খাগড়াগড় কাণ্ড) সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করা যায় না। খালিদের কাছ থেকে তদন্তকারীরা কোনও কিছু উদ্ধারও করতে পারেননি বলে দাবি করে সেই যুক্তিতে তার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করা হোক বলে আইনজীবী আর্জি জানান। এর বিরোধিতা করেন এনআইএ-র আইনজীবী বলেন, খালিদ মায়ানমারের বাসিন্দা এবং পাকিস্তান থেকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়ে ভুয়ো নথি দেখিয়ে এ দেশে ঢোকে। হায়দরাবাদে থাকলেও তার সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এ রকম এক জনকে জামিন দেওয়া হলে তদন্ত প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে বলে তাঁর দাবি।
এর পর খালিদের জামিনের আবেদন খারিজ করে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তাকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। খাগড়াগড়-কাণ্ডে ধৃতদের মধ্যে আরও ১০ জনকে এ দিন আদালতে আনা হয়। যাদের মধ্যে ছিল জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর বর্ধমান মডিউল বা গোষ্ঠীর ‘আমির’ সাজিদ, অসমে ধৃত জেএমবি-র চাঁই শাহনুর আলমও। সবারই ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
খাগড়াগড়ের জঙ্গি ডেরা তথা গবেষণাগারে বিস্ফোরক তৈরির কাঁচামাল পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগে বীরভূমের কীর্ণাহারের বাসিন্দা আমজাদ আলি শেখকে এনআইএ গ্রেফতার করেছে। আমজাদ এ দিন বিচারককে জানায়, তার কিডনিতে পাথর জমেছে, যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছে, অথচ উপযুক্ত চিকিৎসা পাচ্ছে না। বিচারক জানান, এই ব্যাপারে আমজাদের যা আবেদন, সেটা জেল সুপারের মাধ্যমে তাঁর কাছে পৌঁছতে হবে। খাগড়াগড়-কাণ্ডে ধৃত দুই মহিলার অন্যতম, চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা আলিমা বিবি যাতে তার স্বামী আবদুল হাকিমের সঙ্গে সপ্তাহে এক দিন জেলের মধ্যে কথা বলতে পারেন, সেই আর্জি জানান তার আইনজীবী। বিচারক জানান, জরুরি পরিস্থিতি মনে করলে জেল সুপার এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অনুমতি দিতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy