Advertisement
E-Paper

পার্থর পছন্দেই সায় ত্রিপাঠীর, বিব্রত বিজেপি

ছাত্র, শিক্ষক থেকে শুরু করে এমেরিটাস অধ্যাপক, পুলিশকর্তা থেকে শিক্ষামন্ত্রী দফায় দফায় সব মহলের সঙ্গে কথা বলেছিলেন আচার্য। শেষমেশ শিক্ষামন্ত্রীর ‘পরামর্শ’ই তাঁর কাছে মান্যতা পেল। রাজভবন-সূত্রের খবর, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথা মেনে অভিজিৎ চক্রবর্তীকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। নিয়োগের চিঠি অভিজিৎবাবু সোমবার হাতে পেয়ে গিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৭

ছাত্র, শিক্ষক থেকে শুরু করে এমেরিটাস অধ্যাপক, পুলিশকর্তা থেকে শিক্ষামন্ত্রী দফায় দফায় সব মহলের সঙ্গে কথা বলেছিলেন আচার্য। শেষমেশ শিক্ষামন্ত্রীর ‘পরামর্শ’ই তাঁর কাছে মান্যতা পেল। রাজভবন-সূত্রের খবর, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথা মেনে অভিজিৎ চক্রবর্তীকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। নিয়োগের চিঠি অভিজিৎবাবু সোমবার হাতে পেয়ে গিয়েছেন।

যাদবপুরের উপাচার্যের পদে অভিজিৎবাবুই যে রাজ্য সরকারের পছন্দের প্রার্থী, বিভিন্ন সময়ে শিক্ষামন্ত্রীর মুখে সেই ইঙ্গিত মিলেছে। এমনকী গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের উপরে পুলিশি দমন-পীড়নের অভিযোগে সমাজের বড় অংশ প্রতিবাদে সরব হলেও পার্থবাবু দাঁড়িয়েছিলেন অভিজিৎবাবুর পাশে। ছাত্র-শিক্ষকদের একাংশের তরফে অভিজিৎবাবুর পদত্যাগের দাবি সংবলিত পত্র আচার্যের কাছে পৌঁছনোর পরেও পার্থবাবু রাজভবনে গিয়ে তাঁর সরকারের ‘ইচ্ছে’র কথা জানিয়ে আসেন। এবং রাজ্যপালকে বার বার মনে করিয়ে দেন যে, যাদবপুরের স্থায়ী উপাচার্য পদে সরকারের ‘পছন্দের প্রার্থী’ অভিজিৎবাবুর নাম রয়েছে সার্চ কমিটির বাছাই তালিকার একেবারে মাথায়। পাশাপাশি যাদবপুরে অশান্তির পিছনে বহিরাগত, বিশেষত মাওবাদী-সংশ্রব নিয়েও রাজ্যপালকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন পার্থবাবু।

এর পরে অভিজিৎবাবুর নিয়োগে সিলমোহর দেওয়া ছাড়া রাজ্যপালের কার্যত কিছু করার ছিল না। এ দিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি অভিযানের পরে রাজ্যের যে সব বিরোধী দল অভিজিৎবাবুর পদত্যাগের দাবি তুলেছিল, বিজেপি তাদের অন্যতম। এখন কেন্দ্রের বিজেপি সরকার নিযুক্ত রাজ্যপালই অভিজিৎবাবুর নিয়োগে ছাড়পত্র দেওয়ায় দলের রাজ্য নেতৃত্ব কিছুটা বিব্রত। তবে বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এ দিন রাখঢাক না-করে বলেছেন, “রাজ্যপাল বিচারবুদ্ধি কাজে লাগিয়ে রাজ্য সরকারের সুপারিশে অনুমোদন দিয়েছেন। কিন্তু ওঁর সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা একমত নই। আমরা মনে করি না, এতে সমস্যা মিটবে। যাদবপুরে অশান্তির জন্য দায়ী ওই উপাচার্য ও সরকারের নীতি।” রাজ্যপালের ‘বিচারবুদ্ধি’ প্রসঙ্গে দলের একাংশের ব্যাখ্যা: কেশরীনাথও মনে করেন, যাদবপুরের ছাত্র আন্দোলনের পিছনে মার্ক্সবাদী ও নকশালদের হাত রয়েছে, যাদের দমন করাই আপাতত প্রধান কর্তব্য। এবং অভিজিৎবাবু সেই কাজটা ভাল ভাবে করতে পেরেছেন। ফলে স্থায়ী উপাচার্য বাছাইয়ের প্রশ্নে রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের ‘পছন্দ’ মিলে গিয়েছে।

সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

বিজেপি’র মধ্যে কিছুটা দোটানা থাকলেও সিপিএম ও কংগ্রেস এ দিন অভিজিৎবাবুর নিয়োগের বিরুদ্ধে ফের সোচ্চার হয়েছে। বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র অভিজিৎবাবুর অপসারণের দাবি বহাল রেখেছেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা যাদবপুরের প্রাক্তনী সুজন চক্রবর্তীর পর্যবেক্ষণ, “নিজের নিরাপত্তায় বিঘ্নের দাবি তুলে যিনি পুলিশ ডেকে ছাত্রদের মার খাওয়ান, যাদবপুর কেন, কোনও বিশ্ববিদ্যালয়েরই উপাচার্য হওয়ার যোগ্যতা তাঁর নেই। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ছাত্র ও শিক্ষার স্বার্থের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হল!”

শিক্ষাজগতের কী প্রতিক্রিয়া?

যাদবপুরের ইংরেজির এমেরিটাস অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী, যাদবপুরের প্রাক্তন উপাচার্য অশোকনাথ বসু, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়ের মতো কিছু প্রবীণ শিক্ষক গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। আচার্যের কাছে ওঁদের অনুরোধ ছিল, স্থায়ী উপাচার্য বেছে নেওয়ার আগে তিনি যেন সার্চ কমিটির সুপারিশের তালিকায় থাকা তিন জনের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে কথা বলে যাচাই করে নেন, নেতৃত্বদানের ক্ষমতা কার কী রকম। কিন্তু তার আগেই রাজ্যপাল মনস্থির করে ফেলেছিলেন বলে এখন মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পড়ুয়াদের অনেকে। সিদ্ধান্ত জানার পরে তাঁরা যেমন হতাশ, তেমন সুকান্তবাবুরাও হতাশা গোপন করতে পারেননি। এত বিরোধিতা সত্ত্বেও রাজ্যপাল কেন অভিজিৎবাবুরই নামে সিলমোহর দিলেন?

রাজভবন সূত্রের খবর: যাদবপুরের উপাচার্য বাছাইয়ের লক্ষ্যে গঠিত সার্চ কমিটির সুপারিশ-তালিকার প্রথম নামটিই ছিল অভিজিৎবাবুর। ফলে দৌড়ে অভিজিৎবাবু গোড়া থেকে কিছুটা এগিয়ে ছিলেন, যে সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। রাজ্যপালকে তিনি বুঝিয়েছেন, সার্চ কমিটি যখন অভিজিৎ চক্রবর্তীর নাম প্রথমে রেখেছে, তখন পরের নামগুলো বিবেচনায় আনারই দরকার নেই। উপরন্তু পার্থবাবুর যুক্তি ছিল, দু’দফায় অস্থায়ী উপাচার্য থাকার সুবাদে অভিজিৎবাবু যাদবপুরের চরিত্রটা যথেষ্ট ভাল বোঝেন। ক্যাম্পাসে পুলিশি অভিযান, প্রতিবাদে ছাত্রদের আন্দোলন, অভিজিৎবাবুর পদত্যাগের দাবি ইত্যাদি সম্পর্কে রাজ্যপাল শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য জানতে চাইলে পার্থবাবু তাঁকে বোঝান, গোলমালের পুরোটাই হচ্ছে বহিরাগতদের মদতে, যাদবপুরের পড়ুয়াদের কোনও ভূমিকা নেই।

রাজভবন সূত্রের দাবি, সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্যপাল আর কোনও বিতর্কে যেতে চাননি। সরকারের মনোভাব বুঝে তিনি অভিজিৎবাবুকেই যাদবপুরের স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করেছেন। সূত্রটির এ-ও ইঙ্গিত, সুকান্তবাবুরা রাজনৈতিক কারণেই অভিজিৎবাবুর বিরোধিতা করছেন বলে কেশরীনাথের ধারণা হয়েছে। যাদবপুরের শিক্ষক সংগঠন ‘জুটা’র তরফে অভিজিৎ অপসারণের দাবি ওঠার মধ্যেও রাজনীতির রং দেখেছেন রাজ্যপাল। যা শুনে শিক্ষাবিদ মহলের পাল্টা প্রশ্ন, ওই প্রবীণ শিক্ষাবিদদের মধ্যে কোন রাজনৈতিক ভাবধারার যোগ পেলেন ত্রিপাঠী? তা ছাড়া যাদবপুরের যে শ’চারেক শিক্ষক অভিজিৎবাবুর পদত্যাগের দাবিতে রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছিলেন, তাঁদের সকলেই বিশেষ কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শে চালিত এমন তত্ত্ব মানতে জুটা-ও রাজি নয়।

নবনিযুক্ত উপাচার্য নিজে কী বলছেন? ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে পুলিশি প্রহরায় ছাত্রছাত্রীদের ঘেরাও ভেঙে বাড়ি ফেরার আট দিন বাদে অভিজিৎবাবু বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেছিলেন। সে দিনও তাঁকে ঘিরে ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখান। ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের যাতায়াত নিয়ে সে দিন ফের পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়ে এসেছিলেন অভিজিৎবাবু। সেই ইস্তক আর অফিসমুখো হননি। এ দিন তাঁর বাড়িতে গেলেও পুলিশি প্রহরা টপকে উপরে ওঠা যায়নি। দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে তিনি শুধু বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে ১৩ অক্টোবর। সে দিনই যা বলার বলব।”

উনি কিছু না-বললেও যাদবপুরের ছাত্র-শিক্ষকদের বৃহদংশ ছুটির মরসুমেও অভিজিৎ-বিরোধিতায় মুখ খুলেছেন। এঁদের যুক্তি: সার্চ কমিটির সুপারিশের এক নম্বর নামটিকেই বেছে নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রাজ্যপালের নেই। রবীন্দ্রভারতী ও বেসু’র ক্ষেত্রে তদানীন্তন রাজ্যপাল সার্চ কমিটির প্রথম নাম বাছেননি। যে সার্চ কমিটির সুপারিশের জোরে অভিজিৎবাবুর পদপ্রাপ্তি, সেই কমিটির গঠন সম্পর্কেও বিতর্ক বহাল। কী রকম?

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর: সার্চ কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয় মনোনীত সদস্য কে হবেন, আলোচ্যসূচিতে না-থাকলেও তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের (ইসি) এক বৈঠকে, যেখানে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সদস্য মনোনীত হয়ে যান অর্থনীতির শিক্ষক সুগত মারজিৎ। এবং ইসি’র সেই বৈঠকে সে দিন অভিজিৎবাবুই সভাপতিত্ব করছিলেন। “বিধি (স্ট্যাটিউট) চূড়ান্ত না-হওয়ায় এখন ইসি বা কোর্টের মতো সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটির সব সদস্যই মনোনীত। তাই কোনও বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়নি।” জানাচ্ছেন যাদবপুরের এক শিক্ষক। এ হেন আচমকা মনোনয়ন নিয়ে তখনও হইচই হয়েছিল। বিশেষত স্থায়ী উপাচার্য পদের দৌড়ে অভিজিৎবাবু সামিল হওয়ার পরে প্রশ্ন উঠেছিল, ওঁরই সভাপতিত্বে মনোনীত হওয়া সুগতবাবুর পক্ষে কি অন্য কাউকে বাছা সম্ভব?

প্রশ্নটা এ দিন ফের উঠেছে। আর সুগতবাবু এ দিন বলেছেন, “মনে হয়েছিল, অভিজিৎবাবুই যোগ্য ব্যক্তি। তাই ওঁর নাম সুপারিশ করেছি।” সার্চ কমিটিতে রাজ্য সরকারের মনোনীত সদস্য যিনি, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সেই গোপাল মিশ্র শাসকদলের ‘বিশেষ অনুগামী’ হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ, সরকারের মনোভাব বুঝে তিনিও অভিজিৎবাবুকে এগিয়ে রেখেছিলেন। তবে গোপালবাবুর দাবি, তাঁরা সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা মেনেছেন।

‘স্বচ্ছতা’র ব্যাখ্যাও দিয়েছেন গোপালবাবু। ওঁর বক্তব্য: তালিকার তিন জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রায় সমান হলেও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার নিরিখে অভিজিৎবাবু অনেকটা এগিয়ে। প্রবীণ শিক্ষকদের বড় অংশ কিন্তু যুক্তিটি সম্পূর্ণ মানতে পারছেন না। ওঁদের মতে, অন্য দুই প্রার্থী শিক্ষাগত যোগ্যতায় অভিজিৎবাবুর তুলনায় কয়েক কদম এগিয়ে। এক শিক্ষকের ব্যাখ্যা, “ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র অভিজিৎবাবু স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করেছেন দুর্গাপুরের রিজিওনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। সে জায়গায় অন্য দু’জন যাদবপুরের প্রাক্তনী। এক জন তো গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে বিস্তর পুরস্কারও পেয়েছেন!” তা ছাড়া তৃণমূল আমলে দু’দফায় বছর দেড়েকের জন্য অস্থায়ী উপাচার্যের দায়িত্ব পালন ছাড়া অভিজিৎবাবু প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা বলতে আর কী, সেই প্রশ্নও উঠেছে। সঙ্গে আরও প্রশ্ন, রাজনৈতিক দলের যোগাযোগ থাকলে উপাচার্যের অপসারণের নতুন আইন কার্যকর হওয়া সত্ত্বেও এখানে কেন অন্য নিয়ম? শাসকদলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি’র প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান-মঞ্চে উপস্থিত অভিজিৎ চক্রবর্তী কী ভাবে স্থায়ী উপাচার্য হলেন?

ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিতির ঘটনা বাদ দিলেও অভিজিৎবাবু তৃণমূলের বিশেষ ঘনিষ্ঠ হিসেবে ইতিমধ্যেই পরিচিত। এমনকী, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কমিটিতে এক মন্ত্রীর মেয়েকে মনোনীত করে তিনি বিতর্কেও জড়িয়েছেন। অভিজিৎবাবু যদিও তাঁর তৃণমূল-ঘনিষ্ঠতার কথা বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূলপন্থী কর্মচারী সংগঠন অবশ্য এ দিন অভিজিৎবাবুর পদপ্রাপ্তি উদ্যাপন করেছে মিষ্টিমুখ করে।

premanant vice councellor abhijit chakrabarty jadavpur university
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy