Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পূর্বা বেলাইন হল কেন, মতের সংঘাত কর্তাদের

লিলুয়ায় পূর্বা এক্সপ্রেস বেলাইন হওয়ায় প্রাণহানি না-ঘটলেও ক্ষয়ক্ষতি ২০ কোটি টাকারও বেশি বলে রেলকর্তাদের ধারণা। কিন্তু ওই দুর্ঘটনার কারণ কী, তা নিয়ে এখনও টানাপড়েন চলছে। রেলকর্তাদের একাংশ মনে করছেন, ‘পয়েন্ট’ (যেখান দিয়ে ট্রেন এক লাইন থেকে অন্য লাইনে যায়)-এর ত্রুটির জন্যই পূর্বা লাইনচ্যুত হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, রবিবার পূর্বা যেখানে এবং যে-ভাবে বেলাইন হয়েছিল, সেখানে পয়েন্টের গোলমাল ছাড়া আর কোনও কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪২
Share: Save:

লিলুয়ায় পূর্বা এক্সপ্রেস বেলাইন হওয়ায় প্রাণহানি না-ঘটলেও ক্ষয়ক্ষতি ২০ কোটি টাকারও বেশি বলে রেলকর্তাদের ধারণা। কিন্তু ওই দুর্ঘটনার কারণ কী, তা নিয়ে এখনও টানাপড়েন চলছে।

রেলকর্তাদের একাংশ মনে করছেন, ‘পয়েন্ট’ (যেখান দিয়ে ট্রেন এক লাইন থেকে অন্য লাইনে যায়)-এর ত্রুটির জন্যই পূর্বা লাইনচ্যুত হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, রবিবার পূর্বা যেখানে এবং যে-ভাবে বেলাইন হয়েছিল, সেখানে পয়েন্টের গোলমাল ছাড়া আর কোনও কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে না। পূর্ব রেলের কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, ওখানে লাইন ভাঙা ছিল। কিন্তু যে-সব রেলকর্তা পয়েন্টের ত্রুটির বলছেন, তাঁরা লাইন ভাঙার তত্ত্ব মানতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, যথাযথ তদন্ত হলেই রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ত্রুটি প্রমাণিত হবে। দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে এ ভাবেই মত-সংঘাত বেধেছে কর্তাদের।

রবিবার সকালে লিলুয়ায় ঢোকার মুখে দিল্লিমুখী পূর্বার প্যান্ট্রিকার-সহ ১২টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। তবে কোনও কামরাই উল্টে যায়নি। দুর্ঘটনার পরে ওভারহেড তারে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় হাওড়া মেন ও কর্ড লাইনে এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দক্ষিণ-পূর্ব রেলে ফের ট্রেন চলাচল শুরু হয় আধ ঘণ্টা পরে। আর ঘণ্টাখানেক পরে দু’টি লাইন দিয়ে হাওড়া মেন লাইনে ট্রেন চালানো শুরু হয়। কিন্তু রবিবার বেশি রাতেও কর্ড লাইন দিয়ে ট্রেন চালানো যায়নি। ফলে রাতেও দুর্ভোগ চলে নিত্যযাত্রীদের। অথচ কেন তাঁদের দুর্ভোগ, দু’দিনেও নির্দিষ্ট ভাবে তা জানাতে পারেনি রেল।

দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে রেলকর্তাদের মধ্যে মতের সংঘাত কেন? রেল সূত্রের খবর, লাইন, সিগন্যাল বিভ্রাট বা অন্য যে-কোনও ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি প্রমাণিত হলে সিগন্যালিং এবং টেলি-যোগাযোগ দফতর ও ইঞ্জিনিয়ারিং (এ ক্ষেত্রে সিভিল) দফতরের কর্তাদের উপরে দায় বর্তানোর কথা। কিছুটা দায় বর্তায় রেলের সংশ্লিষ্ট জোনের প্রশাসনিক কর্তাদের উপরেও। সে-ক্ষেত্রে অনেক বড় বড় কর্তাকেও দায় নিয়ে শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে। সেই জন্য অনেক সময়েই দেখভালে ত্রুটির বিষয়টি এড়ানোর চেষ্টা হয়ে থাকে। রেলকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, আগেও বহু ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কারণ পাল্টে দেওয়া হয়েছে!

৪৮ ঘণ্টাতেও দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ জানানো গেল না কেন?

রেল সূত্রের বক্তব্য, এর মূলে আছে দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে কর্তাদের টানাপড়েন। সোমবার রেলকর্তাদের বারবার প্রশ্ন করা হলে তাঁরা শুধু বলেন, ‘তদন্ত হচ্ছে। দেখা যাক কী হয়।’ ওই দুর্ঘটনায় রেলের সম্পত্তির বিপুল ক্ষতি হয়েছে। এর দায় কার, তা স্পষ্ট না-হলে কাজের গাফিলতিতে বারে বারেই এমন ঘটনা ঘটবে বলে কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা।

রেলকর্তাদের মত-সংঘাতের মধ্যে যাত্রীদের দুর্ভোগ চলে সোমবারেও। অথচ পূর্ব রেল সূত্রে বলা হয়েছিল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এ দিন সকালে ট্রেন চলাচলে কিছুটা গতি এসেছে ঠিকই। কিন্তু মেন ও কর্ডের ট্রেন চালাতে হয়েছে পাঁচটির মধ্যে মাত্র তিনটি লাইন দিয়ে। দু’টি লাইন বন্ধই আছে। ফলে সকাল থেকে সব ট্রেনেরই দেরি হয়েছে। লোকাল ট্রেন চলেছে ২০-৩০ মিনিট দেরিতে।

এ দিন দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, লাইন মেরামতি চলছে। বেশির ভাগ কামরা লাইনে তুলে ফেলা হয়েছে। এস-৮ এবং এস-৯ কামরা দু’টির ক্ষতি হয়েছে বেশি। দু’টিকেই পাশে সরিয়ে রাখা হয়েছে। পাঁচ নম্বর লাইনটি এমন ভাবে ভেঙেচুরে গিয়েছে যে, প্রায় দেড় কিলোমিটার লাইন পাততে হয়েছে নতুন করে। ক্ষতিগ্রস্ত প্ল্যাটফর্মটিও সারানো হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

poorva express train derailed liluah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE