Advertisement
E-Paper

প্রার্থী ঘোষণা হতেই তৃণমূলে ভাঙনের ইঙ্গিত

মনোনয়ন না পাওয়ায় শাসক দলের অন্দরে মান-অভিমান পালা অব্যাহত। বনগাঁ লোকসভা উপনির্বাচনে প্রার্থী না করায় সপুত্র দল ছেড়ে ছিলেন মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। শুক্রবার, কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে তাঁর নাম বিবেচিত হচ্ছে ধরে নিয়ে দিনভর দলীয় কার্যালয়ে অপেক্ষায় ছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা, দলের নদিয়া জেলা সম্পাদক বিধান পোদ্দার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০০

মনোনয়ন না পাওয়ায় শাসক দলের অন্দরে মান-অভিমান পালা অব্যাহত।

বনগাঁ লোকসভা উপনির্বাচনে প্রার্থী না করায় সপুত্র দল ছেড়ে ছিলেন মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। শুক্রবার, কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে তাঁর নাম বিবেচিত হচ্ছে ধরে নিয়ে দিনভর দলীয় কার্যালয়ে অপেক্ষায় ছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা, দলের নদিয়া জেলা সম্পাদক বিধান পোদ্দার। দুপুরে, জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত ওই কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে সত্যজিৎ বিশ্বাসের নাম ঘোষণা করতেই ‘আশাহত’ বিধান জানিয়ে দিয়েছেন, সস্ত্রীক দলত্যাগ করা ছাড়া তাঁর সামনে আর কোনও রাস্তা খোলা নেই।

মান করে মঞ্জুলের পথেই বিজেপি’তে যোগ দেওয়াই মনস্থ করেছেন তিনি। জেলার মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ অনুগামী বিধান বলছেন, “বিজেপি-র জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়েছে। এখন সিদ্ধান্তটা আমাকেই নিতে হবে।” তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণনগর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সাধনাও যে স্বামীর পথেই হাঁটবেন, তা আড়াল করছেন না। তাঁর সটান জবাব, “যে দলে আমার স্বামীকে অপমান করা হয় সে দলে আমি থাকব কী করে। পদ ছাড়ব, দল থেকেও ইস্তফা দেব।”

এ দিন বিকেলেই কৃষ্ণগঞ্জের ভীমপুরে বিধানের বাড়িতে গিয়েছিলেন নদিয়া জেলা বিজেপি সভাপতি কল্যাণ নন্দী। ঘণ্টা দেড়েক আলোচনার পরে তাঁর বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনি অবশ্য কোনও মন্তব্য না করে মুচকি হেসে চলে যান।

কৃষ্ণগঞ্জ কেন্দ্রে ১৯৯৬ সালে কংগ্রেসের টিকিটে প্রার্থী হয়েছিলেন বিধান। সিপিএম প্রার্থী সুশীল বিশ্বাসের কাছে সামান্য ভোটে সে বার পরাজিত হন তিনি। ২০০১ সালেও তৃণমূল প্রার্থী হয়ে সেই সুশীলবাবুর কাছেই তাঁর পরাজয় হয়েছিল। ব্যবধান ছিল মাত্র ৫৪১ ভোট। এর পরেই সুশীলবাবু তৃণমূলে যোগদান। জেলা তৃণমূলের এক নেতা জানান, সুশীলবাবুর মৃত্যুতে দল যে এ বার বিধানকেই প্রার্থী করবে, দলীয় নেতারা সে ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন।

মাস খানেক ধরে মতুয়া ঠাকুরবাড়ি ঘিরে বিজেপি-তৃণমূল দড়ি টানাটানি ক্রমেই প্রকাশ্যে এসে পড়েছিল। পড়শি জেলা নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জে, প্রার্থী বাছাই নিয়ে আকচাআকচিটা অবশ্য থমকে ছিল দলের অন্দরে। নদিয়ায় দলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত এবং মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের গোষ্ঠী বিবাদ অচেনা নয়। এ দিন সেই চেনা লড়াই শেষে গৌরীবাবু শেষ হাসি হাসলেও উজ্জ্বল অবশ্য বলছেন, “আমি উত্তরবঙ্গে যাচ্ছি। ফিরে এসে যা বলার বলব।”

যা শুনে দলের এক তাবড় জেলা নেতা বলছেন, “দিন কয়েক সবুর করুন। উজ্জবলবাবুকা গুস্সা কিঁউ আতা হ্যায় ক’দিনের মধ্যেই বুঝতে পারবেন!” তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত বিধানসভা নির্বাচনে তেহট্ট কেন্দ্রে তাপস সাহার কথা। সাড়ে তিন বছর আগে, নদিয়ার ওই কেন্দ্রে দলের এই দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ের ‘বলি’ হয়েছিলেন জেলার দাপুটে নেতা তাপস সাহা। প্রার্থী করা হয়েছিল গৌরীবাবুকে। নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হয়ে লড়েছিলেন তাপস। আসনটি গিয়েছিল সিপিএমের কব্জায়। তৃণমূল প্রার্থী গৌরীবাবুর স্থান হয়েছিল তিন নম্বরে। এ বারও কি তারই পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে?

এ দিন, প্রার্থী ঘোষণার পরেই কৃষ্ণগঞ্জের বহু নেতা-কর্মীকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘বিদ্রোহ’ না করলেও নির্বাচনে তাঁরা ‘বসে যাবেন’। এলাকার একাধিক জেলা পরিষদ সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য এমনকী একাধিক পঞ্চায়েত প্রধান, যে দলের টিকিট পাওয়া ‘আনকোরা’ প্রার্থীকে মেনে নেবেন না তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এক জেলা পরিষদ সদস্য বলেন, “বিধানের মতো প্রার্থী থাকতে সত্যজিৎকে কেন দল নির্বাচন করল এটা মাথায় ঢুকছে না। এ তো পায়ে কুড়ুল মারার সমান। দল কেন এমন করল?”

তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিধান নিজেই, “আমি বরাবরই উজ্জ্বল বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ। সেই কারণেই আমি বঞ্চিত হলাম।” দাবি করেছেন, ‘সর্বস্ব উজাড়’ করে দল করেছেন তিনি। আক্ষেপ যাচ্ছে না তাঁর, “বছরের পর বছর দলের নির্দেশ মেনে চলার এই প্রতিদান!”

krishnaganj by election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy