Advertisement
E-Paper

পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে চুপ দময়ন্তীর রিপোর্ট

গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা, নাকি পুড়িয়ে হত্যা এই ছিল মূল প্রশ্ন। দিনের পর দিন শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার সইতে না-পেরে মধ্যমগ্রামের কিশোরী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল বলে কলকাতা হাইকোর্টে জমা দেওয়া রিপোর্টে জানাল স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) বা বিশেষ তদন্তকারী দল। হাইকোর্ট নিযুক্ত ওই দলের নেতৃত্বে আছেন ডিআইজি (সিআইডি) দময়ন্তী সেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৪ ০৪:১৪

গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা, নাকি পুড়িয়ে হত্যা এই ছিল মূল প্রশ্ন। দিনের পর দিন শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার সইতে না-পেরে মধ্যমগ্রামের কিশোরী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল বলে কলকাতা হাইকোর্টে জমা দেওয়া রিপোর্টে জানাল স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) বা বিশেষ তদন্তকারী দল। হাইকোর্ট নিযুক্ত ওই দলের নেতৃত্বে আছেন ডিআইজি (সিআইডি) দময়ন্তী সেন।

দফায় দফায় গণধর্ষিত ওই কিশোরীর মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা পুলিশ প্রথমে ধৃতদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলা দিয়েছিল। তবে মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে মেয়েটি অভিযোগ করে, তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ তাকে পুড়িয়েই মারা হয়েছে। সেই জবানবন্দির ভিত্তিতে পরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুনের ধারা দেওয়া হয়। দময়ন্তীদেবীর সিট অবশ্য কিশোরীকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়নি।

কিশোরীর মৃত্যুর পরে এয়ারপোর্ট থানার পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠে। বলা হয়, কিশোরীর উপরে নির্যাতনের ঘটনা পুলিশকে জানানো হলেও তারা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়নি। সিটের রিপোর্টে অবশ্য এয়ারপোর্ট থানার বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। ওই রিপোর্ট নিয়ে বিচারপতি এ দিন কোনও মন্তব্য করেননি।

কেন ওই কিশোরীকে আত্মহত্যা করতে হল, তার কারণ ব্যাখ্যা করেছে সিট। তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই কিশোরীকে দু’-দু’বার ধর্ষিতা হতে হয়েছিল। তার পরেও দুষ্কৃতীরা তাকে নিস্তার দেয়নি। মধ্যমগ্রাম থেকে দমদমে পালিয়ে এসেও নিগ্রহ থেকে রেহাই পায়নি সে। সিটের রিপোর্ট বলছে, অবসাদ বা সাময়িক আবেগের বশে মেয়েটি আত্মহত্যা করেনি। দিনের পর দিন এলাকার দুই যুবক মিন্টা শীল ও রতন শীল তার উপরে মানসিক নির্যাতন চালিয়েছে। নানা ভাবে চাপ তৈরি করেছে। চাপ আর মানসিক নির্যাতনই তাকে আত্মহত্যার পথে যেতে বাধ্য করিয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৬ বছরের কিশোরীটির উপরে ওই দুই যুবক লাগাতার যে-নির্যাতন চালিয়েছে, মেয়েটির পক্ষে তা দুর্বহ হয়ে উঠেছিল। তাই নিজেই গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় সে। একটি ছোট মেয়ের উপরে যদি এ ভাবে মানসিক নির্যাতন চালানো না-হতো, তা হলে এটা ঘটত না। ওই দুই যুবকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযোগ আনা হয়েছে মানসিক নির্যাতন এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনার ধারাতেও।

কিশোরীর বাবার আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য এ দিন ওই রিপোর্টের প্রতিলিপি চান। জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বারাসত আদালতে গিয়ে চাইলেই ওই রিপোর্ট পাওয়া যাবে। বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত জিপি-কে বলেন, “হাইকোর্ট কেন এই প্রতিলিপি দেখার নির্দেশ দিতে পারে না, তা বুঝিয়ে বলুন।” এ দিন আদালতের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় ১৯ মার্চ ফের শুনানি হবে।

মধ্যমগ্রামের এক কিশোরীকে দু’-দু’বার গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। তার পরে মেয়েটিকে নিয়ে তার পরিবার মধ্যমগ্রাম ছেড়ে এয়ারপোর্ট আড়াই নম্বর গেটের কাছে একটি ভাড়াবাড়িতে উঠে আসে। সেখানেই আগুনে পুড়ে গুরুতর জখম হয় ওই কিশোরী। আর জি কর হাসপাতালে কিছু দিন চিকিৎসাধীন থাকার পরে তার মৃত্যু হয়। কিশোরীর মৃতদেহের সৎকার নিয়ে বিস্তর টানাহেঁচড়া এবং রাজনৈতিক টানাপড়েন চলে। পুলিশি তদন্তে অসন্তুষ্ট কিশোরীর বাবা সুবিচার চেয়ে হাইকোর্টের দ্বরস্থ হন।

জেলা পুলিশের তদন্ত নিয়ে হাইকোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করে। এক জন যোগ্য আইপিএস অফিসারকে তদন্তকারী হিসেবে বাছতে বলা হয়। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায় হাইকোর্টের কাছে ডিআইজি (সিআইডি) দময়ন্তীদেবীকে দিয়ে তদন্ত করানোর প্রস্তাব দেন। বিচারপতি তাতে সম্মত হন। তিনি জানান, দময়ন্তীদেবী নিজের পছন্দমতো অফিসারদের বাছাই করে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করবেন। তারাই এই ঘটনার তদন্ত করবে। দময়ন্তীদেবী সিআইডি থেকে চার জন অফিসারকে বাছাই করেন।

madhyamgram rape damayanti
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy