Advertisement
০৬ মে ২০২৪

পাড়ুইয়ে তল্লাশির নামে তাণ্ডব, অভিযুক্ত তৃণমূলও

পাড়ুইয়ে পুলিশের উপরে হামলায় অভিযুক্তদের সকলেই বিজেপি কর্মী নয়। এমনকী ধৃতদের মধ্যেও অন্তত দু’জনের দাবি, তাঁরা তৃণমূল সমর্থক। অথচ গোটা চৌমণ্ডলপুর গ্রাম বলছে, তারা বিজেপি করে বলেই তৃণমূলের উস্কানিতে পুলিশ তাণ্ডব চালিয়েছে। শুক্রবার দুপুরে চৌমণ্ডলপুর গ্রামে দুষ্কৃতীদের মারে পাড়ুই থানার ওসি জখম হওয়ার পর থেকে ঘটনার দায় এড়ানোর মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি এবং তৃণমূল দুই পক্ষই। কিন্তু পুলিশ যে ৪৩ জনের নামে লিখিত অভিযোগ করেছে, তাতে দু’পক্ষের লোকজনই আছে।

চৌমণ্ডলপুরে পুলিশের তল্লাশির পর লণ্ডভণ্ড ঘর। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

চৌমণ্ডলপুরে পুলিশের তল্লাশির পর লণ্ডভণ্ড ঘর। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

মহেন্দ্র জেনা ও দয়াল সেনগুপ্ত
পাড়ুই ও সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৭
Share: Save:

পাড়ুইয়ে পুলিশের উপরে হামলায় অভিযুক্তদের সকলেই বিজেপি কর্মী নয়। এমনকী ধৃতদের মধ্যেও অন্তত দু’জনের দাবি, তাঁরা তৃণমূল সমর্থক। অথচ গোটা চৌমণ্ডলপুর গ্রাম বলছে, তারা বিজেপি করে বলেই তৃণমূলের উস্কানিতে পুলিশ তাণ্ডব চালিয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে চৌমণ্ডলপুর গ্রামে দুষ্কৃতীদের মারে পাড়ুই থানার ওসি জখম হওয়ার পর থেকে ঘটনার দায় এড়ানোর মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি এবং তৃণমূল দুই পক্ষই। কিন্তু পুলিশ যে ৪৩ জনের নামে লিখিত অভিযোগ করেছে, তাতে দু’পক্ষের লোকজনই আছে।

ওই হামলার পরেই শেখ শামিম, মোজাম্মেল হক, শেখ নুর আলম, নুর হোসেন ও হাফিজ মোল্লা নামে পাঁচ জনকে পুলিশ ধরে। শনিবার সিউড়ি আদালতে এসে হাফিজ ও শামিম দাবি করেন, তাঁরা তৃণমূল সমর্থক। বাকি তিন জন কোনও কথা বলেননি। বিচারক ঋষি কুশারী তাদের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

তা হলে কি দুই দলের লোকজনই হামলায় জড়িত? তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, “আমাদের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক নয়। পুলিশকে কারা আক্রমণ করে, শুক্রবারের ঘটনায় তা পরিষ্কার। তৃণমূল কোনও ভাবেই যুক্ত নয়।” বিকেলে সিউড়ি সদর হাসপাতালে আহত ওসি প্রসেনজিৎ দত্তকে দেখে বেরিয়ে রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহও দাবি করেন, “কিছু দিন ধরে বিজেপি এলাকায় সন্ত্রাস করার চেষ্টা করছে। এটা ওদের চক্রান্ত।” বিজেপির জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল পাল্টা বলেন, “আমাদের কেউ পুলিশকে আক্রমণ করেনি। অনুব্রত মণ্ডলের এলাকায় আমাদের ক্ষমতা বাড়ছে দেখে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরাই পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে তাণ্ডব চালাচ্ছে।”

তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের শক্ত ঘাঁটি পাড়ুইয়ের কিছু গ্রামে বিজেপি যে থাবা বসিয়েছে, সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। স্থানীয় মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েতের চৌমণ্ডলপুর থেকে তৃণমূলের টিকিটে পঞ্চায়েতে জিতে আসা আঞ্জু মানোয়ারা বেগমও বিজেপির দিকে ঝুঁকেছেন। তাঁরও দাবি, “বিজেপির প্রভাব বাড়ছে বলেই তৃণমূলের যোগসাজসে পুলিশ আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।” আঞ্জুর ভাই সওকত আলি ওরফে শেখ সদাইয়ের কথাই ওই এলাকায় ‘শেষ কথা’ বলে ধরা হয়। পুলিশের করা অভিযোগে ছ’নম্বরে তার নাম রয়েছে। কিছু দিন আগেও অনুব্রত-অনুগামী বলে পরিচিত সদাইয়ের শাগরেদ শেখ রকিবের বক্তব্য, “তৃণমূলের অনাচার দেখে এখন বিজেপিকে সমর্থন করছি। তবে পুলিশ যাদের ধরপাকড় করছে, তাদের বেশির ভাগই নিরীহ।”

শুক্রবার সাত্তোর-কসবা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বাজেয়াপ্ত ৫০০ বোমা এ দিন ফাটিয়ে দেয় পুলিশ। কমব্যাট ফোর্স নিয়ে চৌমণ্ডলপুর ও পাশের রাঘাইপুর এবং গোলাপবাগ গ্রামেও ব্যাপক তল্লাশি চালায়। কিন্তু গোটা এলাকা থেকেই তল্লাশির নামে নিরীহ লোকজনকে ধরপাকড় বা তল্লাশির নামে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এ দিন এলাকায় গিয়ে পুরুষদের দেখাই মেলেইনি। মাঝপাড়ায় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। ভেঙে পড়ে অনেকগুলি পানীয় জলের কল। গরুর গাড়ি ফেলে দেওয়া হয়েছে পুকুরে। বহু স্কুলপড়ুয়াও এলাকাছাড়া। মহিলারা ঘরে ডেকে দেখিয়েছেন, কী ভাবে সব কিছু ভাঙচুর-তছনছ করা হয়েছে।

চৌমণ্ডলপুরে উত্তরপাড়ার বাসিন্দা হাসনা বিবি, গুলেহারা বিবিদের অভিযোগ, তাঁরা বিজেপি করেন বলে অপরাধী ধরার নামে পুলিশ ও তৃণমূলের গুণ্ডাবাহিনী এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে। মহিলাদের উপরে অত্যাচার করেছে। খাওয়ার জলের কল পর্যন্ত ভেঙে দিয়েছে। এখনও গ্রামে থাকা শেখ আজিম, আব্দুস সাত্তারও অভিযোগ করেন, “পুলিশ অত্যাচার করছে এলাকায়। তৃণমূলের গুণ্ডাবাহিনী সঙ্গে নিয়ে গুলেহারা বিবির বাড়িতে লুঠপাঠ চালিয়েছে নির্বিচারে।”

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাদের, আব্দুল মান্নান, আতিউর রহমানদের অভিযোগ, “তৃণমূলের মঙ্গলডিহি অঞ্চল সভাপতি নজরুল ইসলাম, ইলামবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মফিজুল হক ও গোলাপবাগের খোকন শেখের নেতৃত্বে তৃণমূলের গুণ্ডাবাহিনী গত কয়েক দিন ধরে দফায়-দফায় হামলা চালিয়েছে। আমরা পুলিশে জানিয়েছিলাম। পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।” পঞ্চায়েত সদস্য আঞ্জু মানোয়ারা বেগমের ক্ষোভ, “পুলিশ আসল অপরাধীদের ধরছে না অথচ আমরা বিজেপি করি বলে জলের কল ভেঙে দিয়ে গিয়েছে, এ কোন দেশে বাস করছি আমরা!”

বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার দাবি, “পুলিশ ভাঙচুর বা অত্যাচার করেনি।” দুধকুমারবাবুর অভিযোগ, “ওই এলাকার কর্মী-সমর্থকদের কাছে শুনলাম, পুলিশের সঙ্গে তৃণমূলের কিছু দুষ্কৃতীও পুলিশের পোশাক পরে তল্লাশির নামে হামলা করেছে।” নজরুল ইসলাম অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, “আমাদের দলে সমাজবিরোধীদের জায়গা নেই। যে রাজনৈতিক দলের ছাতার নীচে দুষ্কৃতীরা রয়েছে, তারাই আমাদের নামে যত মিথ্যা অভিযোগ করছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

parui tmc dayal sengupta mahendra jena
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE