Advertisement
E-Paper

পক্ষপাতের অভিযোগে একসঙ্গে ২৩ অফিসারকে সরাল কমিশন

আগে সরে যেতে হয়েছিল এক জেলাশাসক, দুই অতিরিক্ত জেলাশাসক এবং পাঁচ পুলিশ সুপারকে। এ বার এক ধাক্কায় সরিয়ে দেওয়া হল রাজ্যের বিভিন্ন থানার ২০ জন পুলিশ অফিসার এবং তিন জন ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক (বিডিও)-কে। দিল্লি থেকে নির্বাচন কমিশন এই নির্দেশ জানিয়ে দিয়েছে মুখ্যসচিবকে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কমিশনের প্রধান সচিব আর কে শ্রীবাস্তব রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে এই নির্দেশ পাঠিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, আজ, বুধবার বেলা ১১টার মধ্যে ওই অফিসারদের অন্যত্র সরাতে হবে।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৩৮

আগে সরে যেতে হয়েছিল এক জেলাশাসক, দুই অতিরিক্ত জেলাশাসক এবং পাঁচ পুলিশ সুপারকে। এ বার এক ধাক্কায় সরিয়ে দেওয়া হল রাজ্যের বিভিন্ন থানার ২০ জন পুলিশ অফিসার এবং তিন জন ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক (বিডিও)-কে। দিল্লি থেকে নির্বাচন কমিশন এই নির্দেশ জানিয়ে দিয়েছে মুখ্যসচিবকে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কমিশনের প্রধান সচিব আর কে শ্রীবাস্তব রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে এই নির্দেশ পাঠিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, আজ, বুধবার বেলা ১১টার মধ্যে ওই অফিসারদের অন্যত্র সরাতে হবে। নিয়ম মেনে তাঁদের কোনও রকম ভোটের কাজে লাগানো যাবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে কমিশন।

বদলি হওয়া এই অফিসারদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে পর্যবেক্ষকরা তাদের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন বলে দাবি কমিশনের। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক, মহকুমা শাসক এবং বিডিওদের কাছ থেকেও তারা একই রিপোর্ট পেয়েছে। কমিশনের এক কর্তা বলেন, “নির্বাচনী প্রক্রিয়া চলাকালীন যে কোনও স্তরের অফিসারদের কঠোর ভাবে নিরপেক্ষ হতে হয়। কিন্তু বেশ কয়েক জন অফিসারের বিরুদ্ধে শাসক দলকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া এবং বিরোধীদের হেনস্থা করার নানা অভিযোগ উঠেছিল। তদন্ত করে যাঁদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, কেবল তাঁদেরই সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

কমিশন সূত্রে খবর, বদলি হওয়া বিভিন্ন জেলার আইসি এবং ওসি-দের মধ্যে রয়েছেন বর্ধমানের মঙ্গলকোট, কাঁকসা, বারাবনি এবং রানিগঞ্জ থানার ওসি-রা। পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে নির্বাচনের কাজ থেকে ‘ছুটি’ করে দেওয়া হয়েছে বজবজ-১, বিষ্ণুপুর-১ এবং এগরা-২ ব্লকের বিডিও-দের।

রানিগঞ্জ থানার ওসি অস্ত্র আইনে মামলা করেছিলেন বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে। যার জেরে বাবুলকে এ দিনই আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন নিতে হয়। জামিন নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওসি-কে সরানোর খবর পেয়ে আসানসোল কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “ধর্মের কল বাতাসে নড়ে!”

নির্বাচনী বিধি ভেঙে দোলা সেনের বাইক মিছিল নিয়ে মামলা করেছিলেন বিডিও। ওই বিডিও-কেই জেরা করার নির্দেশ দেন বারাবনির ওসি! ওই ওসি-র পক্ষপাতিত্ব নিয়ে আরও রিপোর্ট কমিশনে গিয়েছিল। কেশপুরের ওসি আবার অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করছিলেন বলে অভিযোগ। নির্বাচনী আচরণ বিধি ভাঙার গুচ্ছ অভিযোগও ওঠে এই থানা এলাকায়। চন্দ্রকোনা থানা এলাকায় সিপিএমের উপর পর পর হামলা হলেও তা ঠেকাতে ওসি বিশেষ কিছু করেননি বলে অভিযোগ ওঠে। বহরমপুরে তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল বিধি ভেঙে বাইক মিছিল করলেও ওসি তা বন্ধ করেননি বলে অভিযোগ ওঠে। বাকি পুলিশ অফিসার এবং বিডিওদের বিরুদ্ধেও কমবেশি একই ধরনের অভিযোগ পেয়েছিল কমিশন।

এ মাসের ৭ তারিখ জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের বদলি করা নিয়ে কমিশনের সঙ্গে সংঘাতে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কমিশনের নির্দেশ না মানার হুমকিও দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন জানিয়ে দেয়, তাদের নির্দেশ না মানলে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি রাজ্যের ভোটও স্থগিত করে দেওয়া হতে পারে।

এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সুর নরম করে মুখ্যমন্ত্রী কমিশনের নির্দেশ মেনে নেন। প্রথম বার কমিশনের সঙ্গে সংঘাতে জড়ালেও এ বার থানা পর্যায়ের ২০ জন পুলিশ অফিসার এবং তিন বিডিওকে বদলি করা নিয়ে সরকার আর বিরোধে যাবে না বলেই নবান্ন সূত্রের খবর। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “কমিশনের নির্দেশ মানতেই হবে। অতীতেও কমিশন বহু থানার ওসি-কে সরিয়েছে।”

প্রশাসনের খবর, পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠায় আরও কিছু অফিসার সম্পর্কে খোঁজখবর করছে কমিশন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের কাছে তাঁদের সম্পর্কে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁদের সরিয়ে দেবে কমিশন। কমিশনের এক কর্তার কথায়, “ভোটের কাজে যুক্ত কোনও সরকারি অফিসার ও কর্মীর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।” ওই কর্তা মনে করিয়ে দেন, সিইও-র দফতরে বিশেষ অফিসার হিসেবে কর্মরত বরুণ রায়ের বিরুদ্ধে কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল না। রাজনৈতিক দলগুলি শুধু প্রশ্ন তুলেছিল, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় জাহাজ-প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায়ের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে দু’বছর কাজ করার পরেও তিনি কেন ওই পদে থাকবেন? শুধু এই কারণেই বরুণবাবুকে উত্তরপ্রদেশের পর্যবেক্ষক করে পাঠিয়ে দিয়েছে কমিশন।

৫-৬ এপ্রিল মুখ্য কমিশনার ভিএস সম্পতের নেতৃত্বে কমিশনের ‘ফুল বেঞ্চ’ রাজ্যে এসেছিল। জেলাশাসক-পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকে সম্পৎ বলেছিলেন, এ রাজ্যের অফিসারেরা সাধারণ ভাবে পক্ষপাতদুষ্ট বলেই ধারণা রয়েছে। এটা বদলাতে হবে। ফুল বেঞ্চ আসার মাসখানেক আগে উপ-নির্বাচন কমিশনার বিনোদ জুৎসিও পশ্চিমবঙ্গে এসে জেলাশাসক-পুলিশ সুপারদের নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করা নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।

ec loksabha election police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy