Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ফের তৃণমূলের দাদাগিরি, সঙ্কটে প্যাক-হাউস

দেখভালের অভাবে ধুঁকছে বারাসতে রাজ্যের একমাত্র সরকারি প্যাক-হাউস। অথচ, দেখভালের জন্য শাসক দলের মধ্যস্থতায় সেখানে কর্মী হিসেবে যাঁদের নিতে হয়েছে, তাঁদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এ রাজ্যের ফল ও সব্জি রফতানিকারীদের একটা বড় অংশের। সরকারি প্যাক-হাউসে ফল বা সব্জি ঠিকমতো সংরক্ষণ হচ্ছে না এই ক্ষোভে বেসরকারি সংস্থার শরণ নিতে চেয়েছিলেন রফতানিকারীরা। সোমবার শাসক দলের তরফে বাধা এল সেখানে মাল রাখাতেও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৩
Share: Save:

দেখভালের অভাবে ধুঁকছে বারাসতে রাজ্যের একমাত্র সরকারি প্যাক-হাউস। অথচ, দেখভালের জন্য শাসক দলের মধ্যস্থতায় সেখানে কর্মী হিসেবে যাঁদের নিতে হয়েছে, তাঁদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এ রাজ্যের ফল ও সব্জি রফতানিকারীদের একটা বড় অংশের। সরকারি প্যাক-হাউসে ফল বা সব্জি ঠিকমতো সংরক্ষণ হচ্ছে না এই ক্ষোভে বেসরকারি সংস্থার শরণ নিতে চেয়েছিলেন রফতানিকারীরা। সোমবার শাসক দলের তরফে বাধা এল সেখানে মাল রাখাতেও।

পুলিশ এ দিন পরিস্থিতি সামাল দিলেও ভবিষ্যতে ব্যবসা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে রফতানিকারীদের। রাজ্যের ১৫টি রফতানি সংস্থার সংগঠন ‘ওয়েস্টবেঙ্গল ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক মৃণাল সিংহের কথায়, “প্রয়োজনে রফতানি বন্ধ করে দেবো।”

ঘটনা জেনে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নেতা নেপালদেব ভট্টাচার্যের টিপ্পনী, “একেই রাজ্যে শিল্প নেই। তার উপরে তৃণমূল এ ধরনের চাপাচাপি করলে, ব্যবসায়ীরা একে-একে রাজ্য ছাড়বেন।” ঘটনার কথা জানেন না বলে দাবি রাজ্যের খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর। তিনি বলেন, “খোঁজ নিচ্ছি, ওখানে কী হয়েছে।” মন্ত্রী জানান, দফতরের অফিসারদের সরকারি প্যাক-হাউসটির হাল-হকিকত সম্পর্কে বিশদে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। সেখানে কী-কী সমস্যা হচ্ছে, তা-ও দেখতে বলা হয়েছে।

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি মাসে প্রায় আট কোটি টাকার পাঁচ লক্ষ কিলো সব্জি ও ফল রফতানি হয় এই রাজ্য থেকে। বারাসতের সুভাষনগরে রয়েছে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রকের অনুমোদিত রাজ্যের একমাত্র ‘ইন্টিগ্রেটেড প্যাক-হাউস’। সেখানে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ফল ও সব্জি সংরক্ষণ করা হয়। অথচ, দেখভালের অভাবে প্যাক-হাউসটির পরিকাঠামো নষ্ট হচ্ছে বলে বার বার রাজ্য সরকারের কাছে দ্বারস্থ হয়েছেন রফতানিকারীরা। সুরাহা হয়নি। উল্টে ওই এলাকার ১৪ জন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থককে কাজে নিতে হয় বলে অভিযোগ, যাঁরা ফল-সব্জি সংরক্ষণের ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে দাবি রফতানিকারীদের।

রফতানিকারীরা জানান, বাধ্য হয়ে তাঁরা চার লক্ষ টাকা খরচ করে পরিকাঠামো যতটা সম্ভব ঠিকঠাক করে চলতি বছরের মে মাস থেকে ওই সরকারি প্যাক-হাউসে মাল রাখছিলেন। কিন্তু ‘দক্ষ কর্মীর অভাব’ এবং পরিকাঠামোর সমস্যা বেড়ে চলায় সেখানে আর সব্জি-ফল রাখা যাচ্ছে না।

এ দিন সরকারি প্যাক-হাউস ছেড়ে সুভাষনগর লাগোয়া একটি বেসরকারি সংস্থার প্যাক-হাউসে ফল ও সব্জি রাখতে যান রফতানিকারীরা। অভিযোগ, সেই কাজে বাধা দেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তাঁরা রফতানিকারীদের ঘেরাও করে রাখেন। পরে দত্তপুকুর থানার পুলিশ গিয়ে বেসরকারি প্যাক-হাউসটিতে ফল ও সব্জি রাখার ব্যবস্থা করে। বিক্ষোভে হাজির থাকা তৃণমূলের স্থানীয় নেতা দীন আলির বক্তব্য, “রফতানিকারীরা বেসরকারি প্যাক-হাউসে মাল রাখলে সরকারি প্যাক-হাউসে কর্মরত আমাদের ছেলেরা কাজ হারাবে। রফতানিকারীরা বাইরের লোক। বেসরকারি প্যাক-হাউসের ছেলেরাও বাইরের লোক। এ ভাবে ব্যবসা করা চলবে না।” দলের সমর্থকদের কাজে বহাল করা না হলে বৃহস্পতিবার থেকে ফের বেসরকারি প্যাক-হাউসে রফতানিকারীদের মাল রাখায় বাধা দেওয়া হবে বলেও এ দিন হুঁশিয়ারি দেন ওই তৃণমূল নেতা।

বিষয়টি নিয়ে দত্তপুকুর থানায় অভিযোগ জানিয়েছে ফল ও সব্জি রফতানিকারীদের সংগঠন। সংগঠনের সম্পাদক মৃণাল সিংহ বলেন, “সরকারি প্যাক-হাউস ঠিক করার জন্য রাজ্য সরকারকে বারবার জানালেও কাজ হয়নি। রাজ্যে আর সরকারি প্যাক-হাউসও নেই। বেশি টাকা দিয়ে বেসরকারি প্যাক-হাউসে মাল রাখতে গেলে বাড়তি খরচ হবে। তার পরেও ওই ১৪ জনকে কাজে রাখার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। অথচ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণশিল্পে কাজ করার দক্ষতা ওই ১৪ জনের নেই।”

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ দিন সমস্যা শুনে পুলিশ গিয়েছিল। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলের কর্তাদের জানানো হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE