মুকুলকে নিয়ে অস্বস্তি যেন কিছুতেই কাটছে না তৃণমূল কংগ্রেসের। এ দিন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হামিদ আনসারির কাছে নালিশ জানানোর কর্মসূচি ছিল দলের। ঠিক ছিল রাজ্যসভার সব তৃণমূল সদস্যই যাবেন আনসারির কাছে। নালিশ জানিয়ে বলা হবে তদন্তের নামে দলীয় সাংসদদের হেনস্থা করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দলগুলি। কিন্তু নেত্রীর কোপে পড়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যসভায় দলনেতার পদ হারানো মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ মহলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি যাবেন না। শেষ পর্যন্ত অনেক ধরাধরির পরে তাঁকে নিয়েই আনসারির কাছে নালিশ জানাতে যেতে পেরেছিলেন তৃণমূলের নয়া দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। কিন্তু সেই কর্মসূচি থেকে ফিরে আর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে চাননি ডেরেক।
সিবিআই সূত্রে খবর, তদন্তে সহযোগিতার নামে সিবিআইয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাদের হাতে তুলে দিয়ে এসেছেন মুকুল রায়। অভিযোগ সেই তথ্যে নিজের পিঠ বাঁচাতে দলের এই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা সব কিছুর জন্য নেত্রী ও তাঁর স্বজনদেরই দায়ী করে এসেছেন, যার জন্য সিবিআই তাঁকে গ্রেফতার করেনি। দলের কোর কমিটির বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও এ বিষয়ে খানিকটা ইঙ্গিত দিয়ে বুঝিয়েছেন, বিষয়টি তাঁরও কানে গিয়েছে। এর পরে তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলি থেকে মুকুলকে সরিয়ে দেন নেত্রী।
প্রথম থেকেই স্থির ছিল রাজ্যসভার সব সাংসদকে নিয়েই হামিদ আনসারির সঙ্গে দেখা করতে যাবেন তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক। কিন্তু মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়ে দেন আনসারির কাছে যাওয়ার চেয়ে বনগাঁয় নির্বাচনী কাজে যাওয়াটা তাঁর কাছে বেশি জরুরি। এ দিকে মুকুলকে ছাড়া কর্মসূচি হলে তা নিয়েও সংবাদমাধ্যম সরব হবে। এই পরিস্থিতিতে ডেরেক তাঁকে বোঝান, মুকুল না গেলে আরও বিতর্ক তৈরি হবে। দলের মুখ আরও পুড়বে। যে উদ্দেশ্যে আনসারির কাছে যাওয়া, সেটাই কার্যত খেলো হয়ে যাবে। এর পরে মুকুল নিমরাজি হয়ে আনসারির কাছে যান। মুকুল-ডেরেক ছাড়াও যোগেন চৌধুরী, নাদিমুল হক, আহমেদ হাসান ইমরানের মতো তৃণমূলের অন্য রাজ্যসভার সদস্যরাও গিয়েছিলেন উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে।
সাংবাদিক সম্মেলন কেন এই অনীহা? মনে করা হচ্ছে, এর প্রধান কারণ গত কালই এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত। এই একই নালিশ কার্যত উড়িয়ে দিয়ে রাজ্য সরকার ও তৃণমূলের করা মামলা খারিজ করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। তা ছাড়া, আনসারির কাছে যাওয়া নিয়ে মুকুলের অনীহা, দলের মুখরক্ষার নামে তাঁকে বুঝিয়ে রাজি করানোর বিষয়টা তত ক্ষণে এতটাই পাঁচ কান হয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়াটা অবধারিত বলেই ধরে নিয়েছিলেন ডেরেক।