দলের তাবড় নেতা-মন্ত্রীদের বিজেপির দিকে ঝুঁকে পড়ার খবরে তৃণমূল যে কতটা বিচলিত, বর্ধমানের জনসভায় তা ফের সামনে চলে এল।
এক দিন আগেই ওই একই মাঠে অমিত শাহের সামনে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। সেই সভার পাল্টা হিসেবেই বুধবার তৃণমূলের এই সভা। এবং সেখানে রাজ্যের এক মন্ত্রীকে দেখিয়ে দলনেত্রীর ভাইপো তথা দলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করলেন, “এই তো রচপাল সিংহ চলে যাচ্ছেন বলে সংবাদমাধ্যম রটাল। তিনি সভামঞ্চেই রয়েছেন।”
কিছু দিন ধরে তৃণমূলের অন্দরেও যে দলের কিছু নেতামন্ত্রীর বিজেপি-যোগের খবর রটছে, তা নেতাদের কানেও পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর নাম যেমন আছে, পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক প্রভাবশালী সাংসদের নামও রয়েছে। ঘোরাফেরা করছে রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী রচপাল সিংহের নামও। কলকাতায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এ দিনই দাবি করেন, ১৫ ফেব্রুয়ারির পরে তৃণমূলের এমন অনেক নেতা-মন্ত্রী বিজেপিতে যোগ দেবেন, যা এখন কল্পনাও করা যাচ্ছে না।
রাহুলবাবুর বক্তব্য, “বর্ধমানে অমিত শাহের সভাতেই একাধিক নেতা-মন্ত্রীর যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কেন্দ্রীয় নেতারাও তা নিয়ে উৎসাহী ছিলেন। কিন্তু রাজ্যে সন্ত্রাসের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে আমরাই তা হতে দিইনি।” এই দাবি যে একেবারে অসার নয়, তৃণমূল নেতৃত্ব তা ভাল করেই জানেন। চেষ্টা করেও তাঁরা মঞ্জুলকৃষ্ণকে ধরে রাখতে পারেননি। এই প্রবণতায় লাগাম টানাই আপাতত তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নেতাদের দল ছাড়ার হিড়িক দেখে কর্মীদের মনোবল যাতে ভেঙে না যায়, তার মরিয়া চেষ্টাও চলছে।
এ দিন মাঠ বোঝাই কর্মী-সমর্থকদের সামনে অভিষেক দাবি করেন, “দেখে নিও তোমরা, আমাদের কেউ ওদের সঙ্গে যাবে না। উল্টে বিজেপি ছেড়ে অনেকেই আমাদের সঙ্গে আসবে।” তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “কালকের সভায় অমিত শাহ যে ভাবে ফোন নম্বর বলে-বলে দলের সদস্যপদ বিক্রি করছেন, গ্রামের হাটে পায়ে ঘুঙুর বাঁধা চানাচুর বিক্রেতা, দাদের মলম বিক্রেতাও সে ভাবে বিক্রি করে না।”
তৃণমূলের কোণঠাসা অবস্থা বুঝে ঠেস দিতে ছাড়ছে না সিপিএমও। এ দিনই উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটায় প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব দাবি করেন, “যারা তৃণমূল করেন, তাদের একটা বড় অংশ আস্তে-আস্তে ছেড়ে দেবেন, এত বাজে হয়ে গিয়েছে দলটা।” তৃণমূল ছেড়ে তাঁরা কোন দলে যাবেন তা তিনি স্পষ্ট না বললেও ইঙ্গিত রয়ে গিয়েছে পরের কথাতেই। গৌতমবাবুর আক্ষেপ, “চিন্তার বিষয় এটাই যে দল ছেড়ে তাঁরা যদি বিজেপিতে যান, দেশের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।”
শুধু অভিষেকই নয়। বিজেপি, সিবিআই এবং সারদা-কাণ্ড মিলিয়ে তৃণমূল নেতাদের যে ভীতি, তা ফুটে উঠছে অনেকের কথাতেই। এ দিনই চন্দননগরে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “সিএম ম্যামের (মুখ্যমন্ত্রী) হাত ধরে থাকব। তাতে গর্দান যায় তো যাক। জান কবুল।” মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরলে কেন গর্দান যাবে, তা তিনি ভেঙে বলেননি। তবে প্রাক্তন তৃণমূল নেতা আসিফ খান সম্প্রতি দাবি করেছেন, সারদা-কাণ্ডে ববি (ফিরহাদ) হাকিমকেই এর পরে ডাকবে সিবিআই। সে ক্ষেত্রে তাঁর আইনি প্রতিরোধ কী হবে, সে প্রসঙ্গে না গিয়ে ফিরহাদ বরং বলেন, “সিবিআই ফাঁসালে ফাঁসাক। সামনে আপনারা আছেন। আর উপরে ভগবান। তিনিই বিচার করবেন।”
বর্ধমানে বড়নীলপুরের সভামঞ্চে এ দিন ফিরহাদও উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মলয় ঘটক, স্বপন দেবনাথ, ইন্দ্রনীল সেনরাও। রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, “রাজনৈতিক ভাবে সিবিআইকে ব্যবহার করা হচ্ছে। সঠিক বিচার হচ্ছে না।” বিজেপির বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদের সম্পত্তির হিসেব তুলে ধরে অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, “ভোটের আগে তাঁদের যা সম্পত্তি ছিল, মাত্র ৯০ দিনে তা বহু গুণে বেড়েছে। এ নিয়ে কেন সিবিআই তদন্ত হবে না?”