Advertisement
E-Paper

বিজেপির দিকে বাড়ছে ঝোঁক, ফের সংঘর্ষে তেতে উঠল পাড়ুই

দিন কয়েকের বিরতির পরে বোমা-বারুদের চেনা চেহারায় ফিরল পাড়ুই। হামলা পাল্টা-হামলার জেরে, শনিবার সকাল থেকে উতপ্ত পাড়ুইয়ের সাত্তোর এলাকা জুড়ে হাতাহাতিতে জড়াল শাসক দল আর বিজেপি। উঠল ভাঙচুর-লুঠপাটের পারস্পারিক অভিযোগ। আহত হলেন দু’পক্ষের অন্তত তিন জন। যা দেখে জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা অকপটে বলে ফেলছেন, “পায়ের তলায় জমি সরলে প্রতিরোধ তো অবশ্যম্ভাবী!” সেই ‘প্রতিরোধ’-এর জেরেই চৌমণ্ডলপুর থেকে সাত্তোর, মাখড়া থেকে পলশা ছুঁয়ে ‘লড়াই’ ছড়িয়ে পড়ে পাড়ুইয়ের আনাচকানাচে। জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এই লড়াই নিয়ে ব্যাখ্যা করার অবস্থায় নেই। অনুগামীরা জানাচ্ছেন ‘দাদার দাঁত তোলা হয়েছে।’।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৭
পলশা গ্রামে বাড়ি ভাঙচুরের পর। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

পলশা গ্রামে বাড়ি ভাঙচুরের পর। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

দিন কয়েকের বিরতির পরে বোমা-বারুদের চেনা চেহারায় ফিরল পাড়ুই।

হামলা পাল্টা-হামলার জেরে, শনিবার সকাল থেকে উতপ্ত পাড়ুইয়ের সাত্তোর এলাকা জুড়ে হাতাহাতিতে জড়াল শাসক দল আর বিজেপি। উঠল ভাঙচুর-লুঠপাটের পারস্পারিক অভিযোগ। আহত হলেন দু’পক্ষের অন্তত তিন জন।

যা দেখে জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা অকপটে বলে ফেলছেন, “পায়ের তলায় জমি সরলে প্রতিরোধ তো অবশ্যম্ভাবী!” সেই ‘প্রতিরোধ’-এর জেরেই চৌমণ্ডলপুর থেকে সাত্তোর, মাখড়া থেকে পলশা ছুঁয়ে ‘লড়াই’ ছড়িয়ে পড়ে পাড়ুইয়ের আনাচকানাচে।

জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এই লড়াই নিয়ে ব্যাখ্যা করার অবস্থায় নেই। অনুগামীরা জানাচ্ছেন ‘দাদার দাঁত তোলা হয়েছে।’। বোলপুরের বিধায়ক তথা মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের গলায় অবশ্য পাড়ুই নিয়ে আক্ষেপ ঝরে পড়ছে। বলছেন, “শান্ত এলাকা ছিল পাড়ুই। সমাজবিরোধীদের প্রশ্রয় দিয়েই বিরোধীরা পাড়ুইকে উত্তপ্ত করে তুলেছেন।”

যা শুনে মৃদু হেসে বিজেপির জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল বলেছেন, “বিজেপি সন্ত্রাসের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আসলে পায়ের তলায় জমি হারাচ্ছে দেখেই নিরন্তর আক্রমণ শানাচ্ছে তৃণমূল। পাড়ুইয়ে তাই সংঘর্ষ থামছে না।”

বছরখানেক আগেও এমন নিত্য গণ্ডগোলের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেনি পাড়ুই। তবে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সংখ্যালঘু প্রধান পাড়ুইয়ের মাখড়া থেকে পলশা বরাবরই সমাজবিরোধীদের আখড়া। তবে অনুব্রত তথা তৃণমূলের একচ্ছত্র আধিপত্যের জন্য সেখানে পাল্টা উষ্মা দেখানোর মতো ছিল না কেউ। ছবিটা বদলে যেতে শুরু করে লোকসভা নির্বাচনের মুখে।

তৃণমূলের অন্দরের খবর, বিজেপি-র উত্থানের পর থেকেই ওই এলাকায় অনুব্রত-বিরোধী হাওয়া ক্রমেই জোরাল হতে থাকে। জেলা তৃণমূলের এক তাবড় নেতার কথায়, “অনুব্রত ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েতের বরাদ্দ নিয়ে নয়ছয়ের অভিযোগ উঠছিল থেকে থেকেই। কিন্তু সে ভাগ পাচ্ছিল তারাই যারা ‘দাদা’র ঘনিষ্ঠ।” ক্ষোভের সূত্রপাত সেখান থেকেই। পঞ্চায়েত নির্বাচনে এলাকার প্রায় সব (কসবা ছাড়া) পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিগুলি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করেছিল তৃণমূল। অভিযোগ, বোর্ড গঠনের পর থেকেই দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী ছাড়া আর কেউই কোনও সরকারি কাজের সুযোগ-সুবিধা বিশেষ পাননি। পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কাজ নিয়ে বঞ্চনার এই অভিযোগকে ঘিরে দলের অন্দরেই অসন্তোষ বাড়তে থাকে। তার জেরেই লোকসভা ভোটের সময় অনেকেই বিজেপির পতাকার নীচে আশ্রয় নিয়েছিলেন। শুরু হয় অস্তিত্ব বাঁচানোর ‘লড়াই’।

জেলার এক বিজেপি নেতাও কবুল করছেন, “এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে বিজেপি। আমরা শাসক দলের ক্ষুব্ধ অংশটাকে কাজে লাগিয়ে জমি দখলে নেমে পড়েছিলাম।” এত দিন যাঁরা অনুব্রতর অনুশাসনে ছিলেন দল বদলের পরে তারাই ‘দাদা’র বিরুদ্ধাচারণে নামলে অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে লড়াই। সেই বিরামহীন লড়াই এখনও চলছে।

এ দিন, তৃণমূলের পাড়ুই থানা কমিটির চেয়ারম্যান মুস্তাক হোসেন দাবি করেন, “সকালে বিজেপির দুষ্কৃতীরা গ্রামে ঢুকে আমাদের সমর্থকদের বাড়ি ভাঙচুর, মারধর ও লুঠপাঠ শুরু করে। শুরু হয় বোমাবাজিও।” তার প্রতিরোধের জেরেই লড়াই। বিজেপি পাল্টা জানাচ্ছে, গ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই এখন গেরুয়া পতাকার নীচে।

সেই আক্রোশেই গ্রাম-দখল করতে এ দিন ফের হামলা চালায় শাসক দলের দুষ্কৃতীরা।

bjp parui tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy