ছাত্রছাত্রীরা তাঁর প্রতি এখনও এতটাই বিরূপ যে তাঁদের আলোচনার টেবিলে বসাতে মধ্যস্থতাকারীদের সাহায্য নিতে হচ্ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীকে। আর যাঁদের তিনি এই কাজের ভার দিচ্ছেন, তাঁদের কেউ কেউ দায়িত্ব নেওয়ার আগেই যথেষ্ট সংশয়ী। তাঁদের মতে, উপাচার্যের সঙ্গে পড়ুয়াদের সম্পর্ক এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, চট করে বরফ গলার সম্ভাবনা কম। উপাচার্যও ছাত্রদের উপরে পুলিশি অত্যাচারের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেননি। আবার ছাত্রেরাও তাঁর ইস্তফার দাবিতে অনড়।
অনেকেই মনে করছেন, শিক্ষকদের সিংহভাগও যে তাঁর পাশে নেই, ক্যাম্পাসে গিয়ে টের পেয়েছেন উপাচার্য। এই অবস্থায় কথা বলতে নিজে ছাত্রদের ডাকার বদলে তিনি চারটি শাখার ডিন, তিন আধিকারিকের সাহায্য নিতে চাইছেন। কাল, সোমবার এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারির কথা।
কিন্তু উপাচার্যের এই প্রয়াসকে ভাল চোখে দেখছেন না শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শনিবার তিনি বলেন, “আমি চাই, উপাচার্যই ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলুন। পড়ুয়াদের রাগ, ব্যথা, অভিমান থাকলে তা ভুলিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব উপাচার্যেরই।” পাশাপাশি, ছাত্রদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ওঁদেরও বুঝতে হবে, উপাচার্যই প্রতিষ্ঠানের প্রধান।
বেশ কিছু দিন অনুপস্থিত থাকার পরে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে অভিজিৎবাবু ছাত্রছাত্রীদের সম্পর্কে বলেন, “ওরা আমার খুব কাছের, সন্তানের মতো।” তা হলে পড়ুয়াদের সঙ্গে সরাসরি কথা এড়িয়ে তিনি মধ্যস্থতাকারী কমিটির সাহায্য নিতে চাইছেন কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, “একদিকে উনি ছাত্রছাত্রীদের সন্তানতুল্য বলছেন, আবার সেই সন্তানদের সঙ্গে কথা বলার জন্য কমিটি তৈরি করছেন। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে তো উপাচার্যেরই সরাসরি কথা বলা উচিত!”
নিজেদের অবস্থানে অনড় পড়ুয়ারাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক শনিবার বলেন, “পড়ুয়ারা জানিয়ে দিয়েছে, তারা উপাচার্যের পদত্যাগ চায়। তাই তিনি সরাসরি ওদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না। তবে ছাত্রছাত্রীরা এতই ক্ষুব্ধ যে, এই কমিটির সঙ্গেও কথা বলতে চাইবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে।”
শনিবার ক্যাম্পাসে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল কম। কিন্তু অভিজিৎবাবু ক্যাম্পাসে আসেন নিরাপত্তারক্ষীদের বেষ্টনীতে। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তিনি কথা বলেননি। পরে চেষ্টা করেও ফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি ।
যাদবপুরের গোটা ক্যাম্পাস জুড়ে এখন অভিজিৎবাবুর পদত্যাগের দাবিতে পোস্টার সাঁটা হয়েছে। পোস্টারগুলিতে স্পষ্ট লেখা, উপাচার্যের পদত্যাগই একমাত্র দাবি। আলোচনার জায়গা নেই। দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী অরুমিতা মিত্র বলেন, “এক মাস পরে কমিটি গড়ার কথা মনে হল উপাচার্যের! আমার মনে হয় আলোচনার কোনও জায়গাই নেই। তবে সাধারণ সভার বৈঠক করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” স্নাতকোত্তরের এক ছাত্র বলেন, “কমিটি যদি অভিজিৎবাবুকেই উপাচার্য হিসেবে মেনে নিয়ে কথা বলতে চায়, তা হলে আলোচনার জায়গা নেই। কারণ, অভিজিৎবাবুর পদত্যাগই আমাদের মূল দাবি।”