বরপেটার জামাত-জঙ্গি শাহনুর আলমের বাড়িতে তিন দফায় তল্লাশি চালিয়েও তেমন নথিপত্র পাননি এনআইএ ও এসবির গোয়েন্দারা। কিন্তু পলাতক শাহনুর ও তাঁর স্ত্রী সুজানা যে ভাবে দিনের পর দিন বরপেটায় জিহাদের আদর্শ প্রচার করেছে, তাতে তাঁদের বাড়িতে কোনও নথি না মেলায় অঙ্ক মেলাতে পারছিলেন না দুঁদে গোয়েন্দারা। অবশেষে সুজানাকে লাগাতার জেরা এবং হাউলি থেকে আটক হওয়া এক যুবকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত কাল রাতে শাহনুরের এক আত্মীয়ের বাড়িতে হানা দেয় স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের স্পেশাল অপারেশন ইউনিট। সেখানেই মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হল শাহনুরদের লুকিয়ে রাখা সমস্ত নথি, বইপত্র, মোবাইল।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত কয়েকদিন ধরে নাগাড়ে জেরার পরে খানিকটা ভেঙে পড়েছে সুজানা। প্রথমে সে বরপেটার মাদ্রাসায় ধর্ম শিক্ষা দেওয়ার কথা জানায়। তার কথার ভিত্তিতেই জেরা করা হয় বরপেটার বাতাসি বেগমকে। এরপর সুজানা জানায়, বর্ধমান বিস্ফোরণের পরেই বিপদ আঁচ করে তারা প্রথমে শাহনুরদের বাড়িতে ওঠে। সেখানে মিথ্যা কথা বলে চলে যায় নলবাড়ির মুকালমুয়ায়, শাহনুরের এক জেঠতুতো বোনের বাড়িতে। ভগ্নীপতি সুবুরুদ্দিনকে জানান, সঙ্গে থাকা বহু বইপত্র ও কাগজ বয়ে বেড়ানোয় সমস্যা হচ্ছে। এরপর সুবুরদের বাড়ির কাছেই, মাটি খুঁড়ে আটটি বাক্সে বই ও কাগজপত্র ঢুকিয়ে পুঁতে ফেলা হয়। শাহনুরের বাইকটি রেখে আসা হয় সুবুরের বন্ধু চাঁদ মহম্মদের বাড়িতে। সম্প্রতি হাউলি থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক যুবককে আটক করেছিল পুলিশ। সেও জানিয়েছিল, শাহনুররা সোহরাবদের বাড়িতে লুকিয়েছিল।
গত কাল রাতেই এনআইএ ও অসম পুলিশের দলটি মুকালমুয়ার বড়ালিয়াপাড়ায় দু’টি বাড়িতে হানা দেয়। মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হয় বই ও নথিপত্র। চাঁদের বাড়ি থেকে মেলে শাহনুরের মোটরবাইক। সুবুরের বাড়ি থেকে শাহনুরের ব্যবহার করা বেশ কয়েকটি মোবাইলও উদ্ধার করেছে পুলিশ। এনআইএর মতে, তদন্তে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারে এই মোবাইল ফোনগুলিই। উদ্ধার হওয়া বইগুলির মধ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত বহু বাংলা বই, বিভিন্ন রশিদ, প্রচারপত্র রয়েছে। সুবুরকে গ্রেফতার করে এসবি-র সদর দফতরে রাখা হয়েছে। কিন্তু চাঁদ মহম্মদকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সুবুর পেশায় টেম্পো চালক। চাঁদ দর্জি। এই নিয়ে জিহাদ সংক্রান্ত মামলায় অসমেই মোট ৯ জন গ্রেফতার হল। আজ বিকেলে ফের বরপেটার এক শিক্ষকের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। তাকে ও তার বাড়ির সদস্যদের বহুক্ষণ জেরা করা হয়েছে।
পুলিশ জানতে পেরেছে, ২৮ জুলাই, ঈদের আগের দিন বরপেটার চটলা গ্রামে যেমন বহিরাগত যুবকদের নিয়ে বিশেষ জমায়েতের আয়োজন করেছিল শাহনুর, তেমনই নলবাড়িতেও একটি বিশেষ সভা হয়েছিল। চটলার সভা ঘিরে গ্রামবাসীদের সঙ্গে বিবাদের জেরে শাহনুর ও তার ভাই জাকারিয়াকে পুলিশ আটকও করেছিল। শাহনুর প্রায়ই বাইক নিয়ে বরপেটা থেকে নলবাড়ির বিভিন্ন স্থানে যেত। বরপেটার পাশাপাশি, শাহনুর নলবাড়ির কোথায় কোথায় ঘাঁটি তৈরি করেছিল ও কাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল তা জানতে জেলা পুলিশকেও সতর্ক করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy