Advertisement
E-Paper

বিমানকে হারের দায় নিতে দিলেন না কারাটরা

স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কেউ পদ ছাড়বেন না। দায় নিতে চাইলেও কাউকে দায় নিতে দেওয়া হবে না! কারণ, তাতে অন্যদের ঘাড়েও দায় এসে পড়বে! লোকসভা ভোটে যতই ভরাডুবি হোক না কেন, সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বে তাই স্থিতাবস্থাই বজায় থাকছে আপাতত!

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৪ ০৩:২৭

স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কেউ পদ ছাড়বেন না। দায় নিতে চাইলেও কাউকে দায় নিতে দেওয়া হবে না! কারণ, তাতে অন্যদের ঘাড়েও দায় এসে পড়বে! লোকসভা ভোটে যতই ভরাডুবি হোক না কেন, সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বে তাই স্থিতাবস্থাই বজায় থাকছে আপাতত!

দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে যতই ক্ষোভ থাকুক না কেন, জয়-পরাজয়ের জন্য ব্যক্তিবিশেষকে দায়ী করার দর্শনে বিশ্বাসী নন কমিউনিস্টরা। চাপের মুখেই হোক বা পরিস্থিতি বুঝে, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু কিন্তু এ বার এক ধাপ এগোতে চেয়েছিলেন। দলের পলিটব্যুরো বৈঠকে আজ তাঁর মত ছিল, রাজ্য সম্পাদক হিসাবে পশ্চিমবঙ্গে ভরাডুবির দায় তিনিই নিচ্ছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে তাঁর সতীর্থেরাই বিমানবাবুকে নিরস্ত করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, আগে জেলাওয়াড়ি ফল বিশ্লেষণ করা হোক। কী ভাবে রাজ্যে বামেদের ভোটে বিজেপি এ ভাবে থাবা বসাল, সে সব বোঝার চেষ্টা করা হোক। তার পরে দায় নেওয়ার প্রশ্ন! বাংলায় সিপিএমের আসন-সংখ্যা এক ধাক্কায় দুইয়ে নেমে আসায় দলের নিচু স্তরে প্রশ্ন উঠেছে, কে এই ভরাডুবির দায় নেবেন?

কংগ্রেসের বিপর্যয়ের দায় স্বীকার করেছেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধী। তাঁরা পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশ করতে পারেন বলেও কংগ্রেসে গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। নীতীশ কুমার ও তরুণ গগৈ তাঁদের দলের হারের দায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়ার ঘোষণা করেছেন। এমনকী, ডিএমকে-র ‘যুবরাজ’ এম কে স্টালিনও পদ ছাড়ার কথা বলেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, সিপিএম তা হলে ব্যতিক্রম হবে কেন? এত কিছুর পরে আজ বিমানবাবু চাইলেও যে ভাবে তাঁকে দায় নিতে দেওয়া হয়নি, তার ব্যাখ্যা হল শীর্ষ স্তরে আপাতত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে চাইছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বিমানবাবু দায় নিতে চাইলেও পদত্যাগের কথা বলেননি। কিন্তু তিনি পদত্যাগের কথা বললে পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের উপরেও চাপ আসত। যে ভাবে বিধানসভা ভোটে হারের পরে পলিটব্যুরো থেকেই সরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজি হননি।

সিপিএম নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, কয়েক মাস পরেই সম্মেলন প্রক্রিয়া শুরু হবে। রদবদল যা করার, তখন করাই শ্রেয়। গঠনতন্ত্রের নতুন ধারা মেনে সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটেরও তখনই সরে যাওয়ার কথা। এখন তড়িঘড়ি কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে আরও সঙ্কট ডেকে আনা অর্থহীন।

হারের কারণ যা-ই হোক, তার দায় যে কাউকে নিতে হবে না, সে নিদান আগেই দিয়ে রেখেছিলেন কারাট। দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা, বাংলায় হারের জন্য রাজ্য সম্পাদক দায় নিলে কারাটকেও গোটা দেশে খারাপ ফলের জন্য দায় নিতে হয়। কারাটের নিজের রাজ্য কেরলে এ বার সিপিএমের আসন বাড়লেও ফল আশানুরূপ হয়নি। কারাট বাংলার মতো কেরলের নেতাদের দায় নিতে দেননি। আজকের পলিটব্যুরো বৈঠক তার সাক্ষী।

কেরলের কোল্লম লোকসভা কেন্দ্রে এ বার দলের পলিটব্যুরো সদস্য এম এ বেবি হেরে গিয়েছেন। এমনকী, বেবি যে কুন্ডারা বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক, সেখানেও তাঁর বিরুদ্ধে বেশি ভোট পড়েছে। এর নৈতিক দায় নিয়ে বেবি পলিটব্যুরো বৈঠকে বিধায়ক পদ থেকেই ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও বাধ সেধেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। পলিটব্যুরোর এক সদস্যের বক্তব্য, “আসলে আমাদের দলে পদত্যাগ করতে হলেও পলিটব্যুরোর অনুমতি নিতে হয়।” দায় কাউকে নিতে হচ্ছে না, দলের অন্দরে তা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় সিপিএম নেতাদের মুখে প্রকাশ্যেও তেমনই প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে। হারের দায় নিয়ে পদত্যাগ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বিমানবাবু যেমন বলেছেন, “আমাদের দলে বুর্জোয়া পার্টির মতো কাজ হয় না। সমষ্টিগত ভাবে সব সিদ্ধান্ত হয়। কেউ ব্যক্তিগত ভাবে সিদ্ধান্ত নেয় না।”

পদ না-ছাড়লেও পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে খারাপ ফলের হেঁয়ালির উত্তর খুঁজতে বেগ পেতে হচ্ছে নেতাদের। পলিটব্যুরোয় আজ পশ্চিমবঙ্গের ফল নিয়ে প্রাথমিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। দলের অন্দর মহলে প্রশ্ন উঠেছে, বিজেপি কী করে এত ভোট পেয়ে গেল? সিপিএম নেতাদের ধারণা ছিল, বিজেপি-র বেশির ভাগ ভোট আসবে তৃণমূলের ঝুলি থেকে। কিন্তু বাস্তবে সিপিএমেরই ক্ষতি হয়েছে বেশি।

দলের অন্দরে একটি মত, বামেরা পশ্চিমবঙ্গে যতটা তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব ছিল, ততখানি বিজেপি বা নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সরব হয়নি। বরং, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদীকে আক্রমণ করে ভোটের মেরুকরণ করে ফেলেছেন। মোদীকে ‘দাঙ্গার মুখ’ বলে এবং অনুপ্রবেশ নিয়ে তাঁর অবস্থানের সমালোচনা করে মমতা সংখ্যালঘু ভোটের বড় অংশই তৃণমূলের ঝুলিতে নিয়ে গিয়েছেন। বিজেপি ভোট বসিয়েছে বামেদের ঝুলিতে। বিমানবাবুর বক্তব্য, “বিজেপি-র ভোট কী ভাবে এত বাড়ল, জেলাওয়াড়ি রিপোর্ট আসার পরেই বুঝতে পারব।” বিপর্যয়ের পরে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক পদক্ষেপ ঠিক করতে বিস্তারিত রিপোর্ট নিয়ে ৬ জুন ফের বৈঠকে বসবে পলিটব্যুরো। পরের দু’দিন বসবে কেন্দ্রীয় কমিটি।

অমিতাভ বসু প্রয়াত

সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার প্রাক্তন সম্পাদক এবং রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিতাভ বসু প্রয়াত হয়েছেন। প্রায় এক মাস যাবৎ তিনি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারও হয়েছিল। শনিবার গভীর রাতে নার্সিংহোমেই তাঁর মৃত্যু হয়। সোমবার তাঁর মরদেহ আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে দলের রাজ্য দফতরে রাখা থাকবে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।

loksabha election failure premangshu choudhuri biman bose cpm politbureau
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy