ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে পাড়ুইয়ের মাখড়া গ্রাম।
ছন্দে ফিরছে পাড়ুই থানার পাশাপাশি দুই পঞ্চায়েত এলাকার, দুই গ্রাম মাখড়া-চৌমণ্ডলপুর। গ্রামের সীমানা ছুঁয়ে ব্যারিকেড এখনও অটুট থাকলেও, সেই ঘেরাটোপেই একদিকে যেমন মহরমে মেতেছে এলাকার বাসিন্দারা। অন্যদিকে মঙ্গলডিহির ঠাকুর পরিবারের রাস উৎসবে মাততে তৈরি মহল্লার নানান সম্প্রদায়ের মানুষও।
এসবের সঙ্গে এলাকায় রয়েছে পুলিশি প্রহরাও। মঙ্গলবারও সেই প্রহরাতেই বাধা পেয়ে ত্রাণ দিতে এসে ফিরে গেলেন ঝাড়গ্রাম থেকে আসা জঙ্গলমহলের আইনজীবীরা। পুলিশ ব্যারিকেডে আটকে ফিরতে হল, পিডিএসের ছয় সদস্যের এক প্রতিনিধি দলকেও। এ দিন গ্রামের ভিতর গিয়ে পুলিশ ও র্যাফ তথা কমব্যাট বাহিনী সেই অর্থে চোখে না পড়লেও, গ্রাম ঢোকার মুখেই বাহিনীর কড়া নজরদারি চোখে পড়ে।
বিধি মেনেই উৎসব হলেও, এবার ঠাকুর পরিবারের রাস উৎসবের উদ্যোক্তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ৫০০ বছরের প্রাচীন রাস উৎসবে এবার ব্যবহার হচ্ছে না কোনও রকম শব্দ বাজি। দুই গ্রামের লাগোয়া কুস্টিগিরিতে এ দিন মহরম উদযাপনও হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। মঙ্গলডিহি গ্রামের দুই ঠাকুরবাড়ির পক্ষে মানস ঠাকুর, দিপেন্দ্র নাথ ঠাকুর বলেন, “ইতি মধ্যেই পুলিশ প্রশাসনের ছাড়পত্র নিয়েই, আমরা অন্যান্য বারের মতো রাস উৎসবের প্রস্তুতি শুরু করেছি। ওই উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত তিন দিনের মেলার প্রস্তুতিও চলছে। রাত পোহালেই বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের মঙ্গলডিহি ঠাকুর পরিবারের রাস মেলা।
ঘটনা হল, উৎসবে মাতলেও মঙ্গলবারও ওই দুই গ্রামে ঢোকার সময়ে বাধা পেয়েছেন ‘বহিরাগতরা’। গ্রাম সূত্রে খবর, ত্রাণ নিয়ে গিয়ে মাখড়া গ্রামের মুখেই আটক পড়েন ঝাড়গ্রাম থেকে আসা জঙ্গলমহলের আইনজীবীদের তিন সদস্যের একটি দল। অন্যদিকে, চৌমণ্ডলপুর যাওয়ার পথে মঙ্গলডিহির কাছে পুলিশ ব্যারিকেডে আটকে দেওয়া হয় পিডিএসের প্রতিনিধি দলকে।
পাড়ুইয়ের মঙ্গলডিহি গ্রামে চলছে রাস উৎসবের প্রস্তুতি। (ডান দিকে)
গ্রামবাসীদের হাতে ত্রাণ তুলে দিচ্ছেন আইনজীবীদের প্রতিনিধি দল।
এ দিন দুপুর বারোটা নাগাদ কলকাতা থেকে পিডিএসের ছয় সদস্যের ওই প্রতিনিধি দলটিকে স্থানীয় রাঘাইপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে পুলিশ ব্যারিকেড করে আটকে দেয়। সংগঠনের নেত্রী তথা প্রাক্তন বিধায়ক অনুরাধা পুতুতুন্ডু, রাজ্য কমিটি সদস্য মির টিপু সুলতান-সহ সংগঠনের স্থানীয় নেতৃত্ব বোলপুরের সিআই চন্দ্রশেখর দাসের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। অনুরাধাদেবী বলেন, “সন্ত্রাস কবলিত মানুষ এবং নিহতের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে এসেছিলাম। কিন্তু পুলিশ আটকে দিয়েছে। মমতার জমানায় শুধু অগণতান্ত্রিক নয়, তার চেয়েও বর্বরতা কাজ হচ্ছে। নিন্দার ভাষা নেই। কোনও রকমের পরিষেবা নেই এখানে। এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।”
মাখড়া এবং চৌমণ্ডলপুরের স্থানীয় বাসিন্দা শেখ আব্দুল মান্নান, শেখ আজহার, শেখ ইনসান শেখ আনামরা জানান, একটু একটু স্বাভাবিক হলেও, আতঙ্কে রয়ে গিয়েছে গ্রাম এখনও। এলাকায় দোকান- বাজার খুলতেও দেখা যায় এ দিন। সংখ্যায় কম হলেও, রাস্তায় দেখা যায় স্থানীয়দের। পিডিএসের ওই প্রতিনিধি দল দাবি করে, তাঁদের অন্যায়ভাবে আটকে দেওয়া হয়েছে। অনুরাধা বলেন, “এই পুলিশ বাসিন্দাদের আক্রমণ করছে। অথচ, অনুব্রতকে গ্রেফতার করতে পারে না।”
এদিকে এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ ঝাড়গ্রাম আদালত থেকে জঙ্গলমহলের তিন সদস্যের আইনজীবী প্রতিনিধি দল ইলামবাজার রাস্তা ধরে হাঁসড়া স্কুল মোড়ে যেতেই পুলিশ ব্যারিকেড আটকে দেয় তাঁদের। প্রতিনিধি দলের পক্ষে মলয় ভদ্র বলেন, “জঙ্গলমহলের সন্ত্রাসের সময়ে আমরা ভুক্তভোগী। আমরা জানি কি ভাবে ওই দিনগুলি কেটেছে। স্বাভাবিক কারণে, আমরা মাখড়া গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে এসেছিলাম। কিন্তু যাওয়ার উপায় নেই, ওই গ্রামের বাসিন্দাদের ডেকে, ব্যারিকেডের ওপার থেকে ত্রাণ সামগ্রী দিতে হল।”
মঙ্গলবার ছবিগুলি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy