লৌহকপাটের এ-পার আর ও-পারে তো তফাত অনেক! এ-পারে থেকে তিনি না-হয় রাজ্যের ক্রীড়া আর পরিবহণমন্ত্রীর কাজ চালিয়েছেন। কিন্তু লৌহকপাটের ও-পারে গিয়ে কী ভাবে সেই দায়িত্ব পালন করছেন মদন মিত্র?
এই প্রশ্ন তুলে শুক্রবার জনস্বার্থে মামলা দায়ের করা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। মামলাটি করেছেন আইনজীবী শুভ্রজিৎ ভাদুড়ী এবং চিটফান্ড সাফারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য অনঙ্গজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
সারদা রিয়েলটি মামলায় অভিযুক্ত মদনবাবু সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন গত ১২ ডিসেম্বর। তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, প্রতারণা, সারদা গোষ্ঠী থেকে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক ইতিমধ্যেই একাধিক বার মদনবাবুর জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।
নবান্ন সূত্রের খবর, গ্রেফতার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করে মদনবাবু কলকাতায় সিবিআইয়ের দফতরে যাওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ইস্তফা মঞ্জুর হলে জেলে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন তোলার জায়গা থাকত না। কিন্তু তাঁর সেই পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। গ্রেফতার হওয়ার পরে কিছু দিন সিবিআইয়ের হেফাজতেই ছিলেন মদনবাবু। পরে অসুস্থতার কারণে তিনি কিছু দিন ভর্তি ছিলেন এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে শুক্রবার পর্যন্ত তিনি জেলেই আছেন। কিন্তু কাগজে-কলমে মদনবাবু এখনও রাজ্যের ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী।
মামলার মূল বিষয় কী?
আবেদনকারীদের আইনজীবী নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, সংবিধান অনুযায়ী বিধানসভার কোনও সদস্য রাজ্যের কোনও দফতরের মন্ত্রী হিসেবে রাজ্যপালের কাছে শপথ নেওয়ার সময় ঘোষণা করেন, তিনি তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু মন্ত্রী মদনবাবু এখন অপরাধমূলক কাজের অভিযোগে জেলে বন্দি রয়েছেন। সে-ক্ষেত্রে তিনি কী ভাবে তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে পারছেন, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে মামলার আবেদনে।
বন্দি মদনবাবুর মন্ত্রিত্ব নিয়ে প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বের প্রসঙ্গও তোলা হয়েছে মামলায়। আবেদনকারীদের বক্তব্য, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরও এই ব্যাপারে সংবিধানে নির্দিষ্ট করে দেওয়া দায়বদ্ধতা রয়েছে। তা হল, রাজ্য মন্ত্রিসভার কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ উঠলে তাঁকে তাঁর মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। এক জন মন্ত্রীর কার্যালয় সাংবিধানিক ভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলে। তাই কোনও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ উঠলে তাঁর উচিত পদত্যাগ করা। মদনবাবুর ক্ষেত্রে ইস্তফা বা অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে কতটা কী অগ্রগতি হয়েছে, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে আবেদনে।
আর্থিক কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার হয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মন্ত্রীরা এর আগে কী করেছেন, তার উদাহরণও দিয়েছেন আবেদনকারীরা। এসেছে লালুপ্রসাদ যাদবের কথাও। মামলার আবেদনকারীরা বলেছেন, ১৯৯৭ সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হয়েছিলেন লালুপ্রসাদ। জেলে যাওয়ার আগে তিনি কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন।
জনস্বার্থ মামলার অন্যতম আবেদনকারী শুভ্রজিৎ ওরফে লিটন এ দিন জানান, কাকে তিনি মন্ত্রিসভার সদস্য করা হবে, সেই ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দিয়েছে সংবিধান। বিধানসভার কোনও সদস্যকে রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য করার সময় মুখ্যমন্ত্রীই রাজ্যপালকে পরামর্শ দেন। এটাই সাংবিধানিক রীতি। সেই পরামর্শ দেওয়ার সময় প্রথাগত ভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে কিছু নীতি মেনে চলতে হয়। সেই নীতি বিস্তারিত ভাবে সংবিধানে না-ও লেখা থাকতে পারে। কিন্তু দেশের সংবিধানের মূল সুরটি মেনে চলতে তিনি বাধ্য। মদনবাবুকে এখনও রাজ্যের দু’টি দফতরের মন্ত্রী করে রাখায় সংবিধানের মর্যাদাহানি হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে জনস্বার্থে দায়ের হওয়া মামলায়।
শুধু মন্ত্রী হিসেবে নয়, মদনবাবু বিধানসভার সদস্য হিসেবেও রাজ্যপালের কাছে শপথ নিয়েছেন। শপথবাক্য পাঠের সময় তাঁকে ঘোষণা করতে হয়েছে, তিনি এক জন বিধায়ক হিসেবে নিজের নির্বাচনী এলাকার নাগরিকদের প্রতি তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবেন। জনস্বার্থে দায়ের করা মামলায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে, অপরাধমূলক কাজকর্মের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে জেলে বন্দি থাকায় মদনবাবু বিধায়কের দায়িত্ব পালন করছেন কী ভাবে?
মামলাটি এ দিন গৃহীত হয়েছে। মঙ্গল-বুধবার নাগাদ শুনানি হতে পারে বলে হাইকোর্ট সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy