Advertisement
E-Paper

বরাত পেলেই তোলা আদায়ের জুলুম, অভিযোগ অন্ডালে

বরাত মেলা থেকে বিল পাশখনিতে কাজ পেতে নানা ধাপে তোলা দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। বর্ধমানের অন্ডালে ইসিএলের খনির ঠিকাদার অসীম মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু সেই অভিযোগকেই মান্যতা দিল বলে মনে করছেন ঠিকাদারদের একাংশ। অসীমবাবুর পরিবারের দাবি, শনিবার অন্ডালে ইসিএল জামবাদ কোলিয়ারিতে এই তোলা চাওয়া নিয়েই অসীমবাবুর সঙ্গে বচসা বেধেছিল আইএনটিটিইউসি নেতা কেদার পালের।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১৯
নিহত ঠিকাদার অসীম মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে রবিবার দেখা করলেন বিজেপি নেতা সুভাষ সরকার।

নিহত ঠিকাদার অসীম মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে রবিবার দেখা করলেন বিজেপি নেতা সুভাষ সরকার।

বরাত মেলা থেকে বিল পাশখনিতে কাজ পেতে নানা ধাপে তোলা দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। বর্ধমানের অন্ডালে ইসিএলের খনির ঠিকাদার অসীম মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু সেই অভিযোগকেই মান্যতা দিল বলে মনে করছেন ঠিকাদারদের একাংশ।

অসীমবাবুর পরিবারের দাবি, শনিবার অন্ডালে ইসিএল জামবাদ কোলিয়ারিতে এই তোলা চাওয়া নিয়েই অসীমবাবুর সঙ্গে বচসা বেধেছিল আইএনটিটিইউসি নেতা কেদার পালের। অসীমবাবুকে কেদার মারধর করেন। তার পরেই মৃত্যু হয় ওই ঠিকাদারের। মৃতের ভাই অনুপ মুখোপাধ্যায় কেদারের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। রবিবার দুর্গাপুর আদালত কেদারকে সাত দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কেদার এক সময় স্থানীয় এক সিপিএম নেতার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। পরে তৃণমূলে ভিড়ে যান। রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরই খনিতে তাঁর দাপটের শুরু। ওই খনির কিছু ঠিকাদারের অভিযোগ, খনির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে কে কোন কাজের বরাত পাবেন, তার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করেন কেদার। বরাত মেলা থেকে কাজ শেষে বিল পাশ হয়ে টাকা পাওয়া, সব কিছুর জন্যই কেদারকে টাকা দিতে হয়। এ কাজে স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতাও তাঁকে মদত দেন। অসীমবাবুর বন্ধু এক ঠিকাদার বলেন, “দফায়-দফায় তোলা দিতে হয় বলে আমি ওই খনিতে কাজ নেওয়াই বন্ধ করে দিয়েছি।” এ দিনই অন্ডালের শ্যামসুন্দরপুরে কিছু ঠিকাদার শোক মিছিলে পা মেলান।

নিহত ঠিকাদার অসীম মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক।

অনুপবাবুর দাবি, “আমার দাদাও আগে ওকে (কেদার) টাকা দিতে বাধ্য হয়েছে। এ বারও একটি কাজ করার পরে টাকা চাইছিল। কিন্তু, বিল পাশ না হওয়ায় দাদা এখন টাকা দিতে পারবে না বলেছিল। সেই রাগেই দাদাকে পিটিয়ে মেরেছে কেদার।”

ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় যদিও বলেন, “কোনও কর্মী এক্তিয়ারের বাইরে কোনও বিভাগের কাজে নাক গলান, এই অভিযোগ পাইনি। কেউ টাকা চাইছেন বলেও কোনও ঠিকাদার অভিযোগ করেননি।” ঘটনার পরেই ইসিএলের কেন্দা এরিয়ার কনট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তথা পাণ্ডবেশ্বর ব্লক তৃণমূল নেতা সন্দীপ সরকার সংগঠনের তরফে মৃতের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা সাহায্যের কথা জানিয়েছিলেন। তাতে প্রশ্নের মুখে পড়েন তিনি। এ দিন তাঁর বক্তব্য, “সংগঠন টাকা দেবে, এ কথা বলিনি। নানা ভাবে ওই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেছি।”

এ দিন সকালে দলের রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকারের নেতৃত্বে বিজেপি-র প্রতিনিধিদল ওই খনি এবং অসীমবাবুর বাড়িতে যায়। সুভাষবাবুর অভিযোগ, “শাসকদলের জামা গায়ে কিছু মস্তান নৈরাজ্য তৈরি করছে। মাত্র ১৫ দিনে আসানসোলেই তিনটি এমন ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রমাণিত, রাজ্যে শিল্পের পরিবেশ নেই।”

বিকেলে শ্রমমন্ত্রী তথা আসানসোল উত্তরের বিধায়ক মলয় ঘটক মৃতের বাড়ি যান। অসীমবাবুর স্ত্রী চিন্ময়ীদেবী তাঁকে বলেন, “সাড়ে তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েছি। বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে সংসার। আমার একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিন।” মলয়বাবু বলেন, “আমরা ভাবনা-চিন্তা করছি।”

এ দিনই সিউড়িতে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাট অভিযোগ করেন, “তোলাবাজির জন্য খুন হচ্ছে। এটা তৃণমূল কংগ্রেস নয়, তোলাবাজির কংগ্রেস!”

শ্রমমন্ত্রী অবশ্য সে অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেন, “এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা এই কাজ সমর্থন করি না। অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়েছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। রাজ্যে শিল্পবান্ধব পরিবেশ আছে বলেই দোষীরা শাস্তি পাচ্ছে।”

ছবি: শৈলেন সরকার

nilatpal roychowdhury andal asim mukhopadhyay subhash sarkar malay ghatak
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy